ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

গানে স্মৃতিচারণে বেঙ্গল শিল্পালয়ে কাইয়ুম চৌধুরী স্মরণ

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ১৩ ডিসেম্বর ২০১৪

গানে স্মৃতিচারণে বেঙ্গল শিল্পালয়ে কাইয়ুম চৌধুরী স্মরণ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ‘কাইয়ুম চৌধুরীর সঙ্গে আমার সখ্য দীর্ঘ ৬০ বছরের। মাত্র ৬০ সেকেন্ডের মধ্যে ৬০ বছরের কাছের মানুষটিকে চিরতরে হারাতে হলো। তাঁর মৃত্যু এতো আকস্মিক যে, প্রথম দিকে আমি তাঁকে নিয়ে কোন প্রতিক্রিয়াই ব্যক্ত করতে পারিনি। বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের অনুষ্ঠানে একইসঙ্গে আমি ছিলাম কিন্তু সেদিন তাঁর কোন রকম অসুস্থতা আমি দেখিনি। আমার বক্তৃতার পর তিনি আসলেন, তাঁর বাক্যটি পুরো বলতে পারলেন না, পড়ে গেলেন। একজন ডাক্তার বলেছেন, তিনি পড়ে গিয়ে মৃত্যুবরণ করেননি, মারা গিয়েই পড়ে গেছেন। তিনি নিজেও কষ্ট পেলেন না, অন্য কাউকেও কষ্ট দিলেন না। তার পরেও এই মহান ব্যক্তির চলে যাওয়ার মর্মবেদনা ভোলা যায় না। তিনি ছিলেন সৃজনশীল শিল্পী। তিনি যে কত বড় একজন শিল্পী, তাঁর আঁকা তেল রং, জল রংয়ের ছবি তারই প্রমাণ। একজন শিল্পীই নন, তিনি ছিলেন একজন ভাল মনের মানুষও। তিনি ছিলেন একজন দেশপ্রেমিক। দেশকে নিয়ে তাঁর স্বপ্ন ছিল। সে স্বপ্ন বাস্তবায়নে অনেক কাজ করে গেছেন তিনি। ’৬৯-এর গণ অভ্যুত্থান নিয়ে তাঁর সাদা-কালো অনেক ছবি আছে। মুক্তিযুদ্ধ নিয়েতো অসংখ্য ছবি রয়েছে তাঁর। বাস্তবকে রীতিবদ্ধ করে আমাদের কাছে উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছেন সব সময় এবং তাঁর সব সৃষ্টিকর্মের মধ্যে একটা প্রাণের স্পন্দন রয়েছে। শিল্পের মধ্যে তিনি বেঁচে থাকবেন।’ বেঙ্গল শিল্পালয়ে শুক্রবার সন্ধ্যায় আয়োজিত কাইয়ুম চৌধুরী স্মরণসভায় সভাপতির বক্তব্যে একথা বলেন এমিরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। বেঙ্গল ফাউন্ডেশন আয়োজিত এ স্মরণসভায় শিল্পীকে গানে গানে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন কাইয়ুম চৌধুরীর অত্যন্ত কাছের মানুষ চিত্রশিল্পী রফিকুন নবী। শুরুতে প্রয়াত শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরীর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। এরপর বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। পরে কাইয়ুম চৌধুরীর কর্মময় জীবন নিয়ে পর্দায় দেখানো হয় ‘নিসর্গের আঁকিয়ে’ শীর্ষক এক ভিডিও ক্লিপ। বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসঙ্গীত উৎসবে তিনি যে বক্তব্য রেখেছিলেন তার শেষ দিকের একাংশও দেখানো হয়েছে। প্রয়াত শিল্পীর প্রিয় রবীন্দ্রসঙ্গীত নিয়ে মঞ্চে আসেন শিল্পী মহিউজ্জামান চৌধুরী। তিনি একে একে পরিবেশন করেন রবীন্দ্রসঙ্গীত-‘জীবন যখন শুকায়ে যায় করুণাধারায় এসো’, ‘তুমি কি কেবলি ছবি শুধু পটে আঁকা’ ও ‘দিনের শেষে ঘুমের দেশে ওই ছায়ায়’। শিল্পী শারমিন সাথী ইসলাম ‘পাষাণের ভাঙালে ঘুম কে তুমি সোনার ছোঁয়ায়’ নজরুলসঙ্গীত দিয়ে শুরু করেন তাঁর পরিবেশনা। পরে তিনি ‘শূন্য এ বুকে পাখি মোর আয় ফিরে আয়; ফিরে আয়’ ও ‘হারানো হিয়ার নিকুঞ্জ পথে কুড়াই ঝরা ফুল একেলা আমি’ পর পর দুটি নজরুল সঙ্গীত পরিবেশন করেন। শিল্পী সাদিয়া মান্নান গেয়ে শুনান রবীন্দ্রসঙ্গীত ‘অনেক কথা বলেছিলে’ ‘আগুনের পরশমণি ছোঁয়াও প্রাণে’ ও ‘খেলার সাথী বিদায় হলো’। এরপর সঙ্গীত পরিবেশন করেন শিল্পী লাইসা আহমদ লিসা। তার পরিবেশনায় ছিল পর পর দুটি রবীন্দ্রসঙ্গীত ‘জীবনে আমার যত আনন্দ’ ও ‘যে রাতে মোর দুয়ারগুলি’ । সবশেষে তিনি প্রয়াত শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরীর প্রিয় অতুল প্রসাদের গান ‘আমি বাঁধিনু তীরে তরণী আমার’ গানটি পরিবেশন করেন। সবশেষে বক্তব্য রাখেন চিত্রশিল্পী রফিকুন নবী। তিনি জীবনের দীর্ঘ সময়ের সাথী প্রায়াত কাইয়ুম চৌধুরীর স্মৃতিচারণ করেন। তিনি বলেন, যিনি সব সময় শিল্পীদের পক্ষ হয়ে বক্তব্য রাখতেন, আজ তাঁর স্মরণসভায় আমাকে বক্তব্য রাখতে হচ্ছে। বড় বেদনায় আছি। কি বলব ভাবতে কষ্ট হচ্ছে। তাঁর অত্যন্ত কাছের মানুষদের মধ্যে আমি একজন। বিশ্বাসই হতে চায় না তিনি চলে গেছেন। আমি যখন চারুকলা নিয়ে কলেজে পড়তে যাই, তখন তিনি ছিলেন শিক্ষক। যদিও তাঁর ক্লাস আমি পাইনি। কোন এক সময়ে তাঁর স্থানে আমি চাকরি করেছি। শেষ দিকে যখন তিনি আবার কলেজে শিক্ষকতা করতে আসলেন, তখন আমি তাঁর সহকর্মীও হয়েছিলাম। কাজেই তাঁর সম্পর্কে বলতে গেলে শেষ হবে না। ছাত্র অবস্থায় তাঁর কাছ থেকে যেটুকু পেয়েছিলাম, তা হলো, একজন চিত্রশিল্পী হয়েও বাঁচা যায় এই প্রণোদনা ও সাহস। প্রচ্ছদ, ইলাস্ট্রেশন ও ছবি এঁকে জীবন চালানো যায় এটা দেখিয়েছেন তিনি। শুধু ছবি আঁকাই নয়, ভাবগত ও রুচীর প্রাধান্য ঘটানোও শিখেছি তাঁর কাছ থেকে। সে কারণেই খুব অভাব বোধ করছি তাঁর প্রয়াণে। তারেক মাসুদের জন্মবার্ষিকীতে দুই দিনের উৎসব ॥ বরেণ্য চলচ্চিত্র নির্মাতা তারেক মাসুদের ৫৮তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে তারেক মাসুদ মেমোরিয়াল ট্রাস্টের উদ্যোগে শুক্রবার থেকে শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে শুরু হলো দুই দিনব্যাপী বর্ণাঢ্য উৎসব। সহযোগিতা করেছে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। উৎসবের প্রথম দিন ছিল শুক্রবার। এদিন নাট্যশালায় বিকাল ৩টায় মিউজিক ভিডিও ‘কানার হাটবাজার’-এর প্রথম প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। এরপর ছিল শ্রোতা মাতানো বাংলা ব্যান্ডের সঙ্গীতানুষ্ঠান। গানের পর অনুষ্ঠিত হয় প্রমাণ্য চলচ্চিত্র ‘স্মৃতিকথায় রানওয়ে’র প্রথম প্রদর্শনী ও ভিডিও প্রকাশনা। আর সান্ধ্যকালীন আয়োজনে ছিল তারেক মাসুদ নির্মিত প্রমাণ্যচলচ্চিত্র ‘আদম সুরত’-এর ভিডিও প্রকাশনা। এ অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, খুশী কবির, ঢালী আল মামুন ও ক্যাথরিন মাসুদ। আজ শনিবার উৎসবের দ্বিতীয় দিন। এদিন বিকেল ৩টায় নাট্যশালায় আয়োজিত উৎসবসূচীতে রয়েছে গানের অনুষ্ঠান : তারেক মাসুদের গান ও অন্যান্য। সাড়ে চারটায় অনুষ্ঠিত হবে তারেক মাসুদের চলচ্চিত্র শীর্ষক তারেক মাসুদ স্মারক বক্তৃতা। বাঙালী জাতীয়তার নতুন মানচিত্র এ বিষয়ে বক্তৃতা করবেন সাজ্জাদ শরিফ। সন্ধ্যা ৬টায় রয়েছে স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র প্রতিযোগিতার চলচ্চিত্র প্রদর্শনী ও পুরস্কার বিতরণী। এ পর্বে অতিথি থাকবেন নাসির উদ্দিন ইউসুফ, শহিদুল আলম, লিয়াকত আলী লাকী, মোরশেদুল ইসলাম ও ক্যাথরিন মাসুদ।
×