ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সৌদি কোম্পানি আট হাজার কর্মী নেবে, অনুমতির আবেদন

প্রকাশিত: ০৪:৫২, ১০ ডিসেম্বর ২০১৪

সৌদি কোম্পানি আট হাজার কর্মী নেবে, অনুমতির আবেদন

ফিরোজ মান্না ॥ সৌদি আরবে বেসরকারী পর্যায়ে আবার কর্মী নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। দেশের একটি জনশক্তি রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সৌদি একটি কোম্পানি ৮ হাজার কর্মী নেয়ার চাহিদাপত্র পাঠিয়েছে। ওই জনশক্তি রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান ৮ হাজার কর্মী পাঠানোর জন্য প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কাছে অনুমতির আবেদন জানিয়েছে। মন্ত্রণালয় জনশক্তি রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানকে শর্তসাপেক্ষে অনুমতি দিতে যাচ্ছে। দীর্ঘদিন সৌদি আরবে কর্মী বন্ধ থাকার পর এমন একটি প্রস্তাবকে মন্ত্রণালয় ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখছে। আরও বিপুলসংখ্যক কর্মী নিয়োগের বাজার তৈরি হয়েছে দেশটিতে। তবে সরকারীভাবে কিছু বাধ্যবাধকতা থাকার কারণে কর্মী পাঠাতে জটিলতা রয়েছে। যদি সৌদি কোন কোম্পানি সরাসরি কর্মী নিয়োগ করতে চায়Ñ সেক্ষেত্রে কর্মী পাঠানো অনেক সহজ। এই ৮ হাজার কর্মী নিয়োগে সরাসরি সৌদি কোম্পানি রয়েছে বলে মন্ত্রণালয়ের উচ্চ পর্যায় থেকে জানানো হয়েছে। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দীর্ঘদিন সৌদি বাজারে কর্মী নিয়োগ কম হচ্ছিল। যদিও দেশটিতে বিপুলসংখ্যক কর্মী প্রয়োজন হলেও নানা জটিলতায় এত দিন স্বাভাবিক হারে কর্মী পাঠানো সম্ভব হয়নি। এখন কর্মীর প্রয়োজনে দেশটির অনেক কোম্পানি কর্মী নেয়ার জন্য বিভিন্ন জনশক্তি রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কর্মী সংগ্রহ করছে। বে-ইর্স্টান নামের একটি জনশক্তি রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ৮ হাজার কর্মী নিয়োগের চাহিদাপত্র পাঠিয়েছে। বিষয়টি মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। মাত্র ৬৩ হাজার টাকায় তারা কর্মী নেবে বলে জানিয়েছে। এখানে কোন দালাল চক্র কাজ করবে না। কর্মী নিয়োগের সময় সৌদি আরবের ওই কোম্পানি নিজেরাই কর্মীদের যোগ্যতা যাচাই করবে। এদিকে এ বছরের শুরুর দিকে সৌদি প্রতিনিধিদল দেশে এলে তাদের সঙ্গে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের আলোচনা হয়। ওই আলোচনায় প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ থেকে অচিরেই কর্মী নিয়োগ করা হবে বলে জানায়। এরপর প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের একাধিক প্রতিনিধিদল সৌদি আরব সফর করেছেন। মন্ত্রণালয় সৌদি সফর করে জানিয়েছেন, সৌদিতে বাজার একেবারে বন্ধ হয়নি। তবে তারা কর্মী নিয়োগের বিষয়ে কিছু শর্ত দিয়েছে। শর্ত মেনে কর্মী পাঠালে কোন জটিলতা থাকবে না। পরে মন্ত্রণালয় কর্মী নিয়োগে বেশকিছু পরিবর্তন নিয়ে আসে। জনশক্তি রফতানিকারকদের মাধ্যমে একজন কর্মীকে সৌদি যেতে ৩ থেকে সাড়ে ৩ লাখ টাকা ব্যয় হচ্ছে। কিন্তু সরকারের নতুন নিয়মে এই খরচ কমে অর্ধেকের কমে নিয়ে আসা হয়েছে। সৌদি প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ড. সুলতান বিন মুহাম্মদ আল হাজ্জা। প্রতিনিধিদলে ৮ জন সদস্য ছিলেন। সাত দিনের সফরে তারা বাংলাদেশের দক্ষ অধাদক্ষ ও অদক্ষ কর্মীদের বিষয়ে খোঁজখবর নেন। প্রতিনিধিদল দেশে ফিরে বাংলাদেশ সফরে অর্জনগুলো জনশক্তি মন্ত্রণালয়ের কাছে প্রতিবেদন আকারে তুলে ধরবেন। প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের একজন উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা বলেন, সেই সময় সৌদি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে ইতিবাচক বৈঠকে হয়েছিল। তারই ফলশ্রুতিতে সৌদিতে কর্মী নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তবে তারা বাংলাদেশ থেকে কতসংখ্যক লোক নিয়োগ করবে এ বিষয়ে কোন কিছু জানা যায়নি। দীর্ঘদিন ধরে নানা কারণে এই বাজারটি বন্ধ ছিল। বাজারটি বন্ধের পেছনে নানা বিষয় কাজ করেছে। বাজারটি খুলে গেলে দেশের বিপুলসংখ্যক লোকের কর্মসংস্থান হবে। সৌদিতে কর্মী নিয়োগ করতে হলে তাদের বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও ভুটান থেকে কর্মী নিতে হবে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের শ্রমবাজারটি তাদের জন্য বেশি সস্তা। বিশ্বের ১৫ দেশ জনশক্তি বিক্রি করে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি শ্রম সস্তা বাংলাদেশেই। এ ছাড়া আর কোন দেশে এত কম মূল্যে কর্মী শ্রম বিক্রি হয় না। সূত্র জানিয়েছে, সৌদিতে নির্মাণ, টেলিযোগাযোগ, স্বাস্থ্য ও বিভিন্ন পরিসেবা খাতে ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও ফিলিপিন্সের এক কোটি শ্রমিক কর্মরত রয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশের শ্রমিক সংখ্যা ২৬ লাখের ওপরে। ফিলিপিন্সের রয়েছে ৩৫ লাখ শ্রমিক। বাকি ৪০ লাখ ভারত ও পাকিস্তানের শ্রমিক কাজ করছে। বাংলাদেশের ১৫ লাখ অবৈধ কর্মীকে তিন দফায় তারা বৈধ করে নিয়েছে। এখন সৌদিতে অবৈধ কর্মীর সংখ্যা অনেক কম। ফিলিপিন্সের প্রায় ২০ লাখ কর্শী অবৈধ হয়ে গিয়েছিল তারা বৈধ হয়েছে। সূত্র জানিয়েছে, গত কয়েক বছর ধরে অভিবাসন ব্যয় বেড়ে যাওয়ার কারণে অনেক কর্মী বিদেশে পাড়ি দিতে পারছেন না। সরকার অভিবাসন ব্যয় কমানোর জন্য নানা উদ্যোগ নিয়েছে। ফলে এবার অভিবাসন ব্যয় কমাতে সার্ক দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে। সম্মিলিতভাবে কাজ করে অভিবাসন ব্যয় কমানো হয়েছে। অভিবাসন ব্যয় কমাতে সমন্বিত উদ্যোগের কোন বিকল্প নেই। এরপর নেপাল ও শ্রীলঙ্কা অভিবাসন ব্যয় কমিয়ে সফল হয়েছে। বাংলাদেশ দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় আলোচনাকে প্রাধান্য দিচ্ছে। প্রতিবছর দাতা সংস্থাগুলো বাংলাদেশকে যে পরিমাণ অর্থ সহযোগিতা করে তার চেয়ে ৬ গুণ বেশি অর্থ প্রবাসী কর্মীরা দেশে পাঠিয়ে থাকেন। তাছাড়া এই টাকা বিদেশী বিনিয়োগের প্রায় ১২ গুণ বেশি। জনশক্তি রফতানির হার বাড়াতে পারলে দাতা সংস্থাগুলোর কাছ থেকে কোন সহযোগিতা নিতে হবে না। তবে বিদেশগামী কর্মীদের বিদেশী ভাষায় পারদর্শিতা, প্রশিক্ষণের মান উন্নয়নের জন্য আন্তর্জাতিক এ্যাক্রোডিটেশন প্রতিষ্ঠার সঙ্গে এ্যাফিলিয়েশন করা, প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানে আধুনিক যন্ত্রপাতি সংযোজন এবং নিয়মিতভাবে প্রশিক্ষকদের দক্ষতা উন্নয়নমূলক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেয়া, আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারের চাহিদার আলোকে বিদ্যমান কোর্স কারিকুলামকে নিয়মিত আপগ্রেড করা, বেসরকারী প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালিত প্রশিক্ষণের মান গ্রহণযোগ্য পর্যায়ে রাখার জন্য নিয়মিতভাবে মনিটরিং ব্যবস্থা নিতে হবে। এছাড়া প্রতিবছর দেশে বিদেশী নিয়োগকারীদের সমন্বয়ে শ্রম মেলার আয়োজন করা। বিভিন্ন দেশে অবস্থানরত বাংলাদেশ দূতাবাসগুলোকে জনশক্তি বাড়ানোর জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। দূতাবাসগুলো এ বিষয়ে কাজ করে যাচ্ছে।
×