ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ক্রিকেট অঙ্গনে বাদল অবাঞ্ছিত!

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ৯ ডিসেম্বর ২০১৪

ক্রিকেট অঙ্গনে বাদল অবাঞ্ছিত!

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ঢাকার ক্রিকেটাঙ্গন আবারও সরগরম হয়ে উঠেছে। দেশের হোম অব ক্রিকেট খ্যাত মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে ঢোকার আগমুহূর্তে মনে হতে পারে কোন রাজনৈতিক সম্মেলন হচ্ছে। মিছিল ও ব্যানারে ছেয়ে যাওয়া বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) কার্যালয়ের সম্মুখ ভাগ সেøাগানে মুখর। প্রিমিয়ার লীগের দল লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জের কর্ণধার লুৎফর রহমান বাদলের বিরুদ্ধে ঢাকার অন্য ক্লাবগুলো প্রতিবাদে মুখর। পক্ষপাতমূলক আম্পায়ারিংয়ের অভিযোগ, বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনসহ অন্য কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ এবং অসংলগ্ন বক্তব্য দেয়ার কারণে বাদলের বিরুদ্ধে সোচ্চার সবাই। বাদলের বক্তব্যের প্রতিবাদ জানাতে সোমবার মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামের সংবাদ সম্মেলনের যৌথ প্রেস মিটে ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট ক্লাবস এ্যাসোসিয়েশন, ক্রিকেটার্স ওয়েলফেয়ার অব বাংলাদেশ (কোয়াব) এবং ক্রিকেট আম্পায়ার্স ও স্কোরার্স এ্যাসোসিয়েশন থেকে দাবি করা হয়েছে বাদলকে অপসারণ ও অবাঞ্চিত ঘোষণা এবং রূপগঞ্জ ক্লাবকে নিষিদ্ধ করার। এছাড়া দেশের ক্রিকেটকে কলুষমুক্ত ও ক্রিকেটারদের নির্ঝঞ্ঝাটে খেলা চালিয়ে যাওয়া নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপও কামনা করেছে এ তিন প্রতিষ্ঠান। এ সময় বক্তব্য রাখেন বিসিবির পক্ষে পরিচালক খালেদ মাহমুদ সুজন, কোয়াবের সদস্য হান্নান সরকার, ক্লাবগুলোর পক্ষে কাজী নাবিল আহমেদ এবং আম্পায়ার্স কমিটির সাধারণ সম্পাদক সয়লাব হোসেন টুটুল। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন নাজমুল করিম টিংকু, শওকত আজিজ রাসেলসহ বিভিন্ন ক্লাবের কর্মকর্তাবৃন্দ। এছাড়া সাবেক অধিনায়ক ও ক্রিকেটারদের মধ্যে হাবিবুল বাশার সুমনও উপস্থিত ছিলেন। ব্যক্তিগতভাবে বিসিবির বিভিন্ন কর্মকর্তাকে আক্রমণ করে কথা বলেছেন বাদল। এমনকি বিসিবি সভাপতি পাপনকেও করেছেন কটাক্ষ। সেটার প্রতিবাদে কাজী নাবিল তাঁর লিখিত বক্তব্যে বলেন, ‘বাদল সাহেবের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, উদ্ভট ও নেতিকতা বিবর্জিত বক্তব্যের প্রতিবাদে আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ জানাতেই আমরা এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেছি। তাঁর বক্তব্য ষড়যন্ত্রমূলক এবং দেশের ক্রিকেটকে ধ্বংস করার পাঁয়তারা। তাঁকে এবং তাঁর দল লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জকে সব ক্রীড়াঙ্গন থেকে বহিষ্কার করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’ এ বিষয়ে খালেদ মাহমুদ বলেন, ‘এটা স্বীকার করছি যে তিনি ক্রিকেটে যুক্ত হওয়ার পর অর্থায়ন বেড়েছে। কিন্তু সে জন্য তিনি কাউকে ব্যক্তিগতভাবে হেয় প্রতিপন্ন করে কিছু বলতে পারেন না। বিসিবি সভাপতি ক্রিকেটের জন্য নিবেদিতপ্রাণ। বাদল যাদের নিয়ে কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য রেখেছেন সেসব দেশের ক্রিকেটকে কলুষিত করেছে এবং দেশের ক্রিকেটপ্রেমীদেরও হতাশ করেছে। যাদের বিরুদ্ধে তিনি বক্তব্য রেখেছেন তাঁরা প্রত্যেকেই ক্রিকেটের সঙ্গে দীর্ঘদিন যুক্ত আছেন এবং ক্রিকেটের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। একটি ক্লাবের হয়ে তিনি অনিয়ম এবং অসামঞ্জস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ করতেই পারেন, কিন্তু এখানে ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণ করার আগে তাঁর বোঝা উচিত ছিল তিনি নিজে কতদিন ধরে এবং কি করেছেন দেশের ক্রিকেটের জন্য? তবে বিসিবির মধ্যে ব্যানার টানানো, মিছিল সেসব দেশের ক্রিকেটকে কুলষিত করেছে কিনা এর জবাবে কাজী নাবিল বলেন, ‘বিভিন্ন ক্লাবের সমর্থকগোষ্ঠীরা দেশের ক্রিকেটকে বাঁচানোর ভালবাসা থেকে এর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারীর বিপক্ষে এসব করেছেন।’ বাদলের সঙ্গে সঙ্গে দল নিষিদ্ধ হলে রূপগঞ্জে খেলা ক্রিকেটাররাও ক্ষতির মুখে পড়বেন। এ প্রসঙ্গে বলা হয়, ‘বৃহত্তর স্বার্থে এসব মেনে নিতে হবে। দেশসেরা ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানও শাস্তি থেকে রক্ষা পাননি। বাদলও যাতে না পান সেজন্যই আমরা জোর দাবি জানাচ্ছি।’ কোয়াবের পক্ষ থেকে হান্নান বলেন, ‘প্রতিবারই লীগে আমরা দেখেছি তিনি নতুন নতুন বিতর্কের সৃষ্টি করে অস্থিতিশীল একটা পরিস্থিতির সৃষ্টি করেন। যা নবাগত ক্রিকেটারদের সুস্থ মানসিক বিকাশ ও ভাল খেলার ক্ষেত্রে অন্তরায় হয়ে ওঠে। তিনি প্রতিবারই একটা করে দল পরিবর্তন করে সেটার মালিকানা নিয়ে ঝামেলার সৃষ্টি করেন। সাকিবের শাস্তি আমরা ক্রিকেটের স্বার্থে মেনে নিয়েছি। এখন চাই এমন অপশক্তিকে ক্রিকেট থেকে অবাঞ্চিত ঘোষণা করা হোক এবং প্রয়োজনে এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’ আম্পায়ার্স কমিটির পক্ষে সয়লাব হোসেন টুটুল বলেন, ‘বাদল সাহেবের অনাকাক্সিক্ষত ও অনভিপ্রেত অভিযোগ আমাদের হতচকিত করেছে। এভাবে অনর্থক অভিযোগ আনতে থাকলে আমাদের পক্ষে স্বাভাবিকভাবে ম্যাচ পরিচালনায় নামা অসম্ভব হয়ে উঠবে। আমরা তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক সে দাবি জানাচ্ছি।’ বাদল ক্রিকেট ক্লাবস এ্যাসোসিয়েশনের সদস্য হলেও এখন পর্যন্ত সেখানে কোন আলোচনা হয়নি। এ বিষয়ে কাজী নাবিল বলেন, ‘আমরা অচিরেই এ বিষয়ে আলোচনায় বসব। সব ক্লাবের পক্ষ থেকে বক্তব্য শুনে সে অনুসারে ব্যবস্থা নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করা হবে।’
×