ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

দৃকে পাখির দেশ

বিচিত্র নাম প্রজাতি ওড়াউড়ি দেখে মন ভরে যায়

প্রকাশিত: ০৪:২৯, ৮ ডিসেম্বর ২০১৪

বিচিত্র নাম প্রজাতি ওড়াউড়ি দেখে মন ভরে যায়

মোরসালিন মিজান ॥ পাখি মানেই ফুরুৎ ওড়াল। যেখানে মন চায়, ওড়ে বেড়ানো। ঘুরে বেড়ানো। এই ডাল ওই ডাল করা। স্বভাবে চঞ্চল এবং একইসঙ্গে খুব সতর্ক এরা। ছবি তোলা তাই মুশকিল কাজ। এরপরও বার্ড ক্লাবের সদস্যরা শুধু ছবি তুলেননি। দুর্লভ অনেক মুহূর্তকে ক্যামেরাবন্দী করেছেন। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে খুঁজে নিয়েছেন দেশীয় পাখির নানা জাত। বন পাহাড় নগর গ্রামের পাখিরা এখন ফ্রেমবন্দী হয়ে দৃক গ্যালারিতে! হ্যাঁ, চমৎকার একটি প্রদর্শনী। শিরোনামÑ পাখির দেশ বাংলাদেশ। প্রথম দিন থেকেই এ আয়োজন মুগ্ধ করে রেখেছে দর্শনার্থীদের। প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছেন মোট ২১ জন আলোকচিত্রী। সবাই সারা বছর ছবি তুলেন। সেখান থেকে বাছাই করা ৫১টি উঠেছে গ্যালারির দেয়ালে। সাধারণের চেনা জানা পাখি আছে। তারও বেশি দুর্লভ প্রজাতির খুব বিচিত্র দেখতে পাখি। তেমন একটি পাখিকে ক্যামেরাবন্দী করেছেন সায়েম চৌধুরী। পাখির নাম কুচকুচি। বড়সড় দেখতে। গায়ের রং লাল। রঙের কৌটায় যেন ডুব দিয়ে এসেছে! তবে ডানা ভেজায়নি। ডানার রং তাই অন্য, ডোরাকাটা। এর লম্বা লেজ। নিচের দিকে অনেক দূর নেমে গেছে। সৌরভ মাহমুদের তোলা ছবিতেও লেজের জয়জয়কার! পাখিটি অতো দেখা যায় না। পুরোটাই যেন লেজ! দীর্ঘ লেজ রংধনুর মতো বাঁকা। দেখে মনে হয়, কোন নামী শিল্পী তুলির এক টানে এঁকে দিয়েছেন। লম্বা লেজ হলেও ছোট্ট আদুরে শরীর। সে শরীর গাছের ডালে বাঁধা এইটুকুন বাসায় কায়দা করে পুরে নিয়েছে পাখিটি। বাইরে ছড়িয়ে থাকা লেজটি দেখে এর উপস্থিতি নিশ্চিত হওয়া যায়। বাংলাদেশের শেষ সীমানা তেঁতুলিয়া থেকে খুঁজে নেয়া এই পাখির নাম শাবুলবুলি। কাছাকাছি নামের আরেকটি পাখিÑ কালাঝুঁটি-বুলবুল। এর মাথার পেছনের অংশে বাড়তি পালক। দেখে বোঝা হয়ে যায়, এ কারণেই কালাঝুঁটি বুলবুল নাম। গায়ের রং প্রধানত হলুদ। হলুদিয়া পাখি কায়দা করে সজনে ডাটায় বসেছে। বিশেষ মুহূর্তটি বান্দরবান থেকে ক্যামেরাবন্দী করেছেন মাজেদা হক। ঝুঁটিওয়ালা অপর পাখিটি দেখতে আরও বিচিত্র। সাইফুদ্দীন সাইফের ছবিতে দেখা যায়, এর মাথার উপরিভাগ সাদা তুলোর মতো। ফোলা। পাখির নাম ধলাঝুঁটি-ছাতারে। বন-ছাতারে নামেও আছে একটি। রাজধানী ঢাকার রমনা পার্ক থেকে জালাল আহমেদ তুলেছেন সবুজ-সুইচোরা পাখির ছবি। একসঙ্গে তিনটি। গাছের সরু ডালে অদ্ভুত ঘন হয়ে বসে আছে! প্রদর্শনীতে বিলুপ্ত প্রায় প্যাঁচার একাধিক প্রজাতি ফ্রেমবন্দী হয়েছে। এম এ মোহিত মুন্সীগঞ্জ থেকে খুঁজে নিয়েছেন খুড়ুলে-প্যাঁচা। একলা হয়ে বসে থাকা প্যাঁচা যারপরনাই বিষণœ। তবে বদমেজাজি চোখ। দীলিপ দাস বিসর্গের তোলা ছবিতে বিচিত্র ভঙ্গিতে খাদ্য গ্রহণে ব্যস্ত দাগিপ্যাঁচা। উদয়ী-নিমপ্যাঁচার আবার খাড়া দুই কান। বিলুপ্ত প্রায় বুটপা-ঈগল, শঙ্খ-চিল, কাটুয়া চিল বা বাদুরও এখন চোখে পড়ে না। বিলুপ্তপ্রায় পাখিদের খুঁজে নিয়েছেন সায়েম চৌধুরী, সামিউল মহসিন ও মহসিন কবির মিরন। পাখি যেহেতু, টাঙ্গুয়ার হাওরে তো যেতেই হবে। সুনামগঞ্জের এই হাওরে অসংখ্য প্রজাতির পাখি। সেগুলোর কিছু স্থান পেয়েছে প্রদর্শনীতে। ছোট বগা, ছোট ডুবুরি, মেটেহাঁসের ছোটাছুটি ক্যামেরাবন্দী করেছেন একাধিক আলোকচিত্রী। সারোয়ার আলম দীপু ও শফিকুর রহমানের তোলা পাখির ছবিগুলো হাওরের নৈসর্গিক সৌন্দর্যকেও তুলে ধরেছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্বাবদ্যালয় ক্যাম্পাসও পাখিদের অভয়ারণ্য। এখান থেকে যথারীতি ছবি তুলেছেন আলোকচিত্রীরা। এই ক্যাম্পাস থেকে সবুজ টিয়া, দল-পিপি হলদেগাল-টিটি, শালিক ইত্যাদি পাখি অংশ নিয়েছে প্রদর্শনীতে। সব মিলিয়ে অনবদ্য আয়োজন। পাখি দেখতে দেখতে দেখা হয়ে যায় বাংলার অপরূপ সৌন্দর্য। তিন দিনব্যাপী আয়োজন আজ সোমবার শেষ হবে। যারা পাখিপ্রেমী, নিসর্গ যাদের প্রিয়, সময় করে ঘুরে আসতে পারেন।
×