ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ট্রাইব্যুনালে যাবে না বেজিং

প্রকাশিত: ০২:৫২, ৮ ডিসেম্বর ২০১৪

ট্রাইব্যুনালে যাবে না বেজিং

চীন আন্তর্জাতিক সালিশের মাধ্যমে দক্ষিণ চীন সাগরের ওপর এর বিশাল ভূখ-গত দাবি চ্যালেঞ্জ করতে ফিলিপিন্সের চেষ্টা আবারও প্রত্যাখ্যান করেছে। বেজিং ঐ বিরোধপূর্ণ জলসীমা নিয়ে আন্তর্জাতিক সালিশী মামলা করে এর ওপর রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টি করার দায়ে ফিলিপিন্সের নিন্দা করেছে এবং এ মামলায় অংশ নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। মামলাটিতে চীনের জবাব দেয়ার সময় শেষ হওয়ার এক সপ্তাহ আগে চীন এ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করল। খবর এবিসি নিউজ ও অন্যান্য ওয়েবসাইটের। চীন এর বিরোধগুলো সরাসরি জড়িত এমন দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে সমাধান করতেই বেশি পছন্দ করে। কিন্তু ফিলিপিন্সের উপকূলরেখার কাছে দেশটির সঙ্গে এক উত্তেজনাপূর্ণ নৌসংঘাতের পর চীন স্ক্যারকরা শেয়ালের (চড়া) নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করলে, ম্যানিলা সমুদ্র আইন সম্পর্কিত জাতিসংঘ কনভেনশনের অধীনে কার্যরত একটি ট্রাইব্যুনালে এক মামলা দায়ের করে। আইনটি বিশ্বের সাগর ও মহাসগর ব্যবহার নিয়ন্ত্রণের এক কাঠামো প্রদান করে। চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বৈদেশিক চুক্তি ও আইন বিষয়ক বিভাগের ডিরেক্টর জেনারেল সু হোং বলেন, ফিলিপিন্স একগুঁয়ে মনোভাব নিয়ে সালিশ প্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি এর বদলে বেজিংয়ের সঙ্গে আলোচনা করতে ম্যানিলার প্রতি আহ্বান জানান। তিনি সাংবাদিকদের জানান, চীন সালিশী কার্যধারা প্রত্যাখ্যান করতে এবং এতে অংশ না নিতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। সু বলেন, সালিশ যেভাবেই কাজ করুক না কেন, এটি দক্ষিণ চীন সাগর এবং তৎসংলগ্ন এলাকার ওপর চীনের সার্বভৌমত্বের ইতিহাস বা সত্যতাকে বদলাতে পারবে না। রবিবার প্রকাশিত দলিলে চীনের আগেকার এ যুক্তিকেই তুলে ধরা হয় যে, ভূখ-গত সার্বভৌমত্বের প্রশ্নটি ট্রাইব্যুনালের আওতার বাইরে। এতে বলা হয়, চীনের ঐ সালিশ প্রত্যাখ্যান আন্তর্জাতিক আইনের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ এবং ফিলিপিন্স আলোচনার মাধ্যমে ভূখ-গত বিরোধের মীমাংসা করতে ইতোপূর্বে সম্মত হয়েছিল। ম্যানিলায় পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র চার্লস জোসে বলেন, ফিলিপিন্স সরকার চীনের দলিল বিবেচেনা করবে এবং পরে এক জবাব প্রকাশ করতে পারে। ঐ দফতর ইতোপূর্বে বলেছিল, তারা চীনের বিরুদ্ধে সালিশী মামলা চালিয়ে যাবে। কারণ, আইনগত পথই দীর্ঘদিনের ভূখ-গত বিরোধের এক আরও স্থায়ী ও বিধিসম্মত সমাধান প্রদান করবে। চীন ঐ বিরোধপূর্ণ চড়া দখলের পর ফিলিপিন্স ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে ট্রাইব্যুনালের কার্যধারার সূচনা করে। এতে আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে চীনের ‘নাইন ড্যাশ লাইনে’র বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। লাইনটি হলো চীনের অফিসিয়াল মানচিত্রে চীনা ভূখ-ের সাধারণভাবে চিহ্নিত সীমানা, যাতে দক্ষিণ চীন সাগরের অধিকাংশই অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ঐ ট্রাইব্যুনাল হেগস্থ স্থায়ী সালিশী আদালত ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে জবাব দিতে চীনের প্রতি আমন্ত্রণ জানায়। সু বলেন, দলিল প্রকাশের সঙ্গে ঐ সময়সীমার কোন সম্পর্ক নেই, বরং এটি তৈরি করতে সময় লেগেছিল। দক্ষিণ চীন সাগর সম্পর্কে চীনের দাবির মধ্যে এমন সব জলসীমা ও দ্বীপ অন্তর্ভুক্ত যেগুলো ফিলিপিন্স ও অন্য চারটি এশীয় দেশও নিজের বলে দাবি করে থাকে। ট্রাইব্যুনালের কার্যধারায় চীনের অংশগ্রহণ অত্যাবশ্যক নয়। কারণ ট্রাইব্যুনাল বিরোধের মীমাংসা করবে বলে প্রত্যাশা করা হয় না, বরং এটি সমুদ্র আইনবিষয়ক জাতিসংঘ কনভেনশনের আওতায় চীনের ‘নাইন ড্যাশ লাইনে’র আইনগত বৈধতা প্রশ্নেই রায় দেবে। চীন এ কনভেনশনে সই করেছিল। ফিলিপিন্সের পক্ষে ট্রাইব্যুনাল কোন রুলিং দিলে তাতে ঐ সাগরের প্রতি চীনের দাবি ক্ষুন্ন হতে পারে। সু বলেন, এখনও গোপন অভিসন্ধি প্রণোদিত লোকজন রয়েছেন। তারা আন্তর্জাতিক আইনগত কনভেনশন সম্পর্কে একপেশে বা বিকৃত দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করেন। তাদের লক্ষ্য হলো, চীন আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি শ্রদ্ধা দেখায় না এবং চীন আন্তর্জাতিক কনভেনশনগুলোকে চ্যালেঞ্জ করছে বলে চীনকে অভিযুক্ত করা।
×