ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

খালেদা জিয়ার সঙ্গে কিছু বর্তমান ও সাবেক আমলার গোপন বৈঠক

প্রকাশিত: ০৮:১১, ৫ ডিসেম্বর ২০১৪

খালেদা জিয়ার সঙ্গে কিছু বর্তমান ও সাবেক আমলার গোপন বৈঠক

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠক করেছেন বিএনপি ও জামায়াতপন্থী প্রায় ২০ জন বর্তমান ও সাবেক উর্ধতন কর্মকর্তা। তাঁরা বৃহস্পতিবার রাতে খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ে দু’ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে বৈঠক করেন। বিশেষ সূত্রে জানা গেছে, তাঁরা বর্তমান সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে এ বৈঠক করেছেন। উল্লেখ্য, বৈঠকে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে কয়েকজন ছিলেন জোট সরকারের আমলে উত্তরা ষড়যন্ত্রের অন্যতম হোতা। সরকারী কর্মকর্তাদের মধ্যে ছিলেন ওএসডি যুগ্ম সচিব একেএম জাহাঙ্গীর হোসেন (সাবেক এপিডি) ও বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের ওএসডি যুগ্ম সচিব ইব্রাহিম মিয়াজি, বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের বর্তমান সিনিয়র সহকারী সচিব এহসানুল কবীর, ব্যক্তিগত কর্মকর্তা তৌফিকুল ইসলাম, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা নূরুল ইসলাম, এলজিআরডি মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা আব্দুল মান্নান ও একেএম হুমায়ুন কবীর, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা বদিউল কবীর, বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের ক্যাশিয়ার সরকার তোহা, তথ্য মন্ত্রণালয়ের অফিস সহকারী শহিদুল হক। এ ছাড়া বৈঠকে সাবেক সচিবদের মধ্যে ছিলেন শমসের মবিন চৌধুরী, সাবিহ উদ্দিন আহমেদ, সাবেক কেবিনেট সচিব এম এ হালিম প্রমুখ। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সাবেক ও বর্তমান এসব কর্মকর্তা খালেদা জিয়ার কাছে আওয়ামী লীগ আমলে বিএনপি- জামায়াতপন্থী কর্মকর্তাদের ওএসডি করা, পদোন্নতি না দেয়াসহ বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্ছিত করার বিষয়টি তুলে ধরেন। তাঁরা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে তাঁরা ভাল নেই। প্রশাসনসহ সর্বস্তরে দলীয়করণ করা হয়েছে। দলীয় লোক ছাড়া কাউকে পদায়ন করা হচ্ছে না। এ ব্যাপারে খালেদা জিয়ার কাছে তাঁদের করণীয় কি তা জানতে চান। পাশাপাশি সমস্যা উত্তরণে খালেদা জিয়ার পরামর্শ ও সহযোগিতা চান। এ সময় খালেদা জিয়া সরকারী কর্মকর্তাদের ধৈর্য্য ধরার আহ্বান জানিয়ে বলেন, আপনারা নিষ্ঠা ও সততার সঙ্গে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করুন এবং সেই সঙ্গে সতর্ক থাকুন। সময় হলে আপনাদের মূল্যায়ন করা হবে। আপনারা যথাসময়ে আমাদের সরকারবিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে ন্যায়সঙ্গত সাড়া দিবেন। প্রসঙ্গত, ২০০৬ সালে জোট সরকারের আমলে উত্তরা ষড়যন্ত্রের পর দু’জন সচিবের নেতৃত্বে যে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয় সে কমিটি ১৩জনকে অভিযুক্ত করে। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর বৃহস্পতিবার খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠকে অংশ নেয়া ওএসডি যুগ্ম সচিব একেএম জাহাঙ্গীর হোসেন ও ইব্রাহিম মিয়াজিসহ একে একে ১৩জনকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দিয়ে দায়িত্ব পালনের সুযোগ দেয়া হয়। তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ পরে বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হন। বৃহস্পতিবার রাতে খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠক সেই ষড়যন্ত্রের অংশ বলে সূত্র জানায়। জানা গেছে, এ বৈঠকের ব্যাপারটি ছিল অত্যন্ত গোপনীয়। এজন্য বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর থেকেই খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ে কোন সাংবাদিককে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। তবে বৈঠকের খবর পেয়ে শতাধিক সংবাদকর্মী খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ের বাইরে অবস্থান করেন। এ সময় গোয়েন্দা সংস্থার বিপুলসংখ্যক লোক সেখানে ভিড় করেন। কোন গোপন বৈঠক হয়নিÑফখরুল বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া কার্যালয় থেকে বের হওয়ার পর ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, কার্যালয়ে বর্তমান সরকারী কর্মকর্তাদের সঙ্গে কোন প্রকার গোপন বৈঠক হয়নি। তবে বৈঠকে সাবেক সরকারী কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এরপর বিএনপির পক্ষ থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কিছু গণমাধ্যমে প্রচারিত খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ে সরকারী কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের খবরটি ভুয়া ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এ সংবাদ প্রচার ও প্রকাশের পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে। জনগণকে বিভ্রান্ত করাই এর লক্ষ্য। এ ধরনের কোন বৈঠক হয়নি। বিবৃতিতে এ ধরনের অপপ্রচারের তীব্র নিন্দা জানানো হয়। বৈঠক শেষে বিএনপি নেতা ও সাবেক সচিব সাবিহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, কার্যালয়ের ভিতরে আমলাদের নিয়ে কোন বৈঠক হয়নি। এ সময় বিএনপি নেতা সাবেক মন্ত্রী শমসের মবিন চৌধুরী সাংবাদিকদের সঙ্গে কোন কথা না বলে চলে যান। তবে এ সময় বিএনপি নেতা আমান উল্লাহ আমান বলেন, এ বৈঠক ছিল রুটিন বৈঠক। দলের কর্মসূচী নিয়ে আলোচনা হয়েছে। খালেদা জিয়ার প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান বলেন, বৈঠক নয়, ওনারা দেখা করতে এসেছিলেন। সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে তিনি বলেন, তাঁরা তো আসতেই পারেন। উল্লেখ্য, চারদলীয় জোট সরকারের আমলে ২০০৬ সালের ২৪ নবেম্বর শুক্রবার রাতে রাজধানীর উত্তরার ১ নম্বর সেক্টরের ৭ নম্বর সড়কের ১৬ নম্বর বাড়িতে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বাড়ির মালিক ছিলেন বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত পেশাজীবী পরিষদের নেতা ও চারদলীয় জোট সরকারের জ্বালানি উপদেষ্টা মাহমুদুর রহমান। নির্বাচনকে সামনে রেখে আমলাদের এ ধরনের বৈঠককে যড়যন্ত্র এবং আবারও চারদলীয় জোটকে ক্ষমতায় বসানোর নীলনকশা। যা উত্তরা কেলেঙ্কারি হিসেবে ব্যাপকভাবে পরিচিত, যা দেশব্যাপী ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়।
×