ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

অর্থনৈতিক গবেষণা

প্রকাশিত: ০৬:১৪, ৫ ডিসেম্বর ২০১৪

অর্থনৈতিক গবেষণা

দেশের অর্থনৈতিক গতিপ্রকৃতি বুঝার জন্য এবং গভীরভাবে অনুধাবন ও বিশ্লেষণের প্রয়োজনে অর্থনৈতিক গবেষণার গুরুত্ব অনস্বীকার্য। অর্থনৈতিক কর্মকা- পর্যবেক্ষণ, অর্থনীতির উন্নয়নের যাবতীয় সম্ভাবনাকে শনাক্তকরণ এবং ভবিষ্যতের কর্মপন্থা নির্ধারণের জন্য সামগ্রিক গবেষণা অত্যন্ত জরুরী। পরিতাপের বিষয় হলো, দেশে গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাল্পতা রয়েছে। স্বীকৃত সংস্থা হিসেবে যে দু-একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের গ্রহণযোগ্যতা স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে তৈরি হয়ে গেছে তার কোন একটির সামান্যতম পদস্খলন জাতির সম্মুখ পদযাত্রাকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারে। বাংলাদেশের মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়া প্রসঙ্গে দেশের বেসরকারী গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সাম্প্রতিক বক্তব্য নিয়ে তর্কবিতর্কের পরিবেশ তৈরি হয়েছে। বর্তমান সরকার কয়েক বছর আগে থেকেই বলে আসছে ২০২১ সাল অর্থাৎ এখন থেকে আগামী ৭ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে বেরিয়ে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে। মাত্র কয়েকদিন আগে জাতিসংঘের বাণিজ্যিক ও উন্নয়ন সংস্থার (আঙ্কটাড) তৈরি প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে সিপিডির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতে বাংলাদেশকে এক দশকেরও বেশি সময় অপেক্ষা করতে হবে। তার মানে ২০২৪ সালের মধ্যেও সেটা সম্ভব হচ্ছে না। কাক্সিক্ষত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের ক্ষেত্রে কালের এই তারতম্য স্বাভাবিকভাবেই পুরো বিষয় সম্পর্কেই নতুন করে ভাবনার প্রতি ইঙ্গিত প্রদর্শন করছে। সিপিডির এ তৎপরতাকে দেশের ভাবমূর্তি নষ্টের প্রয়াস হিসেবে দেখছেন রাষ্ট্রের নীতি নির্ধারকরা। সিপিডির সমালোচনা করতে গিয়ে স্বয়ং বাণিজ্যমন্ত্রী উল্লেখ করেছেন যে, দেশে অর্থনীতির সব সূচকই উর্ধমুখী। শিল্প, মানবসম্পদ উন্নয়ন, আমদানি-রফতানি, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, মানবাধিকার সব খাতের উন্নয়নে বিদেশীরা এখন বাংলাদেশের প্রশংসা করছে। এমন পরিস্থিতিতে সিপিডির এই বক্তব্য দুঃখজনক। অতীতে বিভিন্ন সময় সিপিডির গবেষণাপত্র বিভিন্ন মহলে প্রশংসিত হয়েছে। সংস্থাটির গবেষণালব্ধ তথ্য জাতির কিছু উপকারেও এসেছে। এখন একই সংস্থার ভূমিকা ও উদ্দেশ্য নিয়ে সংশয় দেখা দিলে সেটা হবে খুবই হতাশাজনক। দেশীয় কোন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দেশের স্বার্থের বিপক্ষে শক্তিশালী অস্ত্র হোকÑ এটা কারোরই কাম্য হতে পারে না। আমরা চাইব, সিপিডির মতো একটি স্বনামধন্য গবেষণা প্রতিষ্ঠানের বক্তব্যকে বরং সরকার আমলে নিক এবং সকল সংশয় সন্দেহ জিজ্ঞাসা দূর করে ঘোষিত সময়ের মধ্যেই অর্থনৈতিক লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করুক; ২০২১ সালের মধ্যেই স্বল্পোন্নত দেশের দুর্নাম ঘুচিয়ে বাংলাদেশ পরিণত হোক মধ্যম আয়ের রাষ্ট্রে। দেশের অর্থনৈতিক গবেষণা নিয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে নিকট অতীতে বাংলাদেশ সরকারের প্রথম পরিকল্পনা কমিশনের ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক নুরুল ইসলামের অভিমত স্মরণযোগ্য। গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোর গবেষণা মান ও গবেষণানীতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন তিনি। নির্দিষ্ট কিছু অর্থনীতিবিদের মাধ্যমে যে গবেষণা করা হচ্ছে সেটাও গোচরে আনেন তিনি। বলাবাহুল্য, অর্থনৈতিক ইস্যুকে রাজনৈতিক ইস্যুর সঙ্গে মিলিয়ে-গুলিয়ে ফেললে আমরা সত্যিকারের গবেষণার সুফল লাভে ব্যর্থ হব। প্রবাসী আয় ও তৈরি পোশাক বাংলাদেশের অর্থনীতির এ দুটি প্রধান চালিকাশক্তি নিয়ে কার্যকর গবেষণার বিশেষ কোন উদ্যোগ নজরে পড়ে না অথচ গবেষণা ছাড়া সঠিক অর্থনৈতিক পরিকল্পনা গৃহীত হতে পারে না। আমরা মনে করি, দেশে যথার্থ মানসম্পন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা দরকার।
×