ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

প্রকাশিত: ০৫:২৪, ৫ ডিসেম্বর ২০১৪

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

মোরসালিন মিজান ॥ আরও কিছুদিন বাকি। এরপর ১ পৌষ। শীতের আনুষ্ঠানিক শুরু। বলা বাহুল্য, পৌষের শীত মানে শীতের পুরোটা। হাঁড় কাঁপিয়ে তবেই ছাড়ে। আর মাঘের শীতে তো মানুষ নয় শুধু, বাঘ পালায়! সেকথা বিবেচনায় নিলে রাজধানীতে শীত এখনও মামুলি। অথচ এরই মাঝে বেশ বদলে গেছে জনজীবন। বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলির শহর ঢাকায় সকাল থেকেই শীত প্রতিরোধের প্রস্তুতি নিয়ে কাজে বের হচ্ছে মানুষ! বৃহস্পতিবার পুরান ঢাকার বাবুবাজারে গিয়ে সে প্রস্তুতিটা বিশেষভাবে চোখে পড়ল। তখন সকাল সাড়ে ৭টার মতো বাজে। মিটফোর্ড হাসপাতাল ঘাটে এসে ভিড়ছে ছোট ছোট নৌকো। বিভিন্ন কাজ নিয়ে শহরে ঢুকছে মানুষ। প্রত্যেকেরই গায়ে গরম কাপড়। অনেকের নাক মুখ গলা অদ্ভুত কায়দায় ঢাকা। বুড়িগঙ্গার পাড়ে দাঁড়িয়ে সামনের দিকে তাকালে দেখা যায় কুয়াশার চাদর বিছানো। সেই চাদর ভেদ করে ঘাটের দিকে আসছিল এক একটি নৌকো। সঙ্গত কারণেই ঠা-াটা ছিল বেশি। যাত্রীদের ভোগাচ্ছিল। আর শিশুদের কথা তো বলাই বাহুল্য। শরীরের পুরোটা দ্বিগুণ কাপড়ে প্যাঁচিয়ে দেয়ারও পরও গা ছুঁয়ে দিচ্ছিল শীতের হাওয়া। তবে সবচেয়ে করুণ অবস্থা রাজধানীর দরিদ্র ও ছিন্নমূল মানুষগুলোর। তাঁদের ফুটপাথে জীবন। শহরের প্রধান সড়কের পাশে শুয়ে থাকা মানুষগুলোর ঘুম এরই মাঝে কেড়ে নিয়েছে শীত। কিন্তু তাঁদের সাহায্যে এগিয়ে আসার কেউ নেই। এখনও কেউ এগিয়ে আসেননি। বিজয় সরণির ফুটপাথে হালকা একটি চাদর মুড়ি দিয়ে ঘুমোবার চেষ্টা করছিলেন আরব আলী। মাঝবয়সী লোকটির কাছে গিয়ে কয়েকবার ডাকার পর মুখ থেকে চাদর সরালেন। বললেন, ‘শীত চইলা গেলে পরে লোকে আইবো। আইসা কেউরে কম্বল দিব। আর কেউরে না দিয়াই যাইবগ্যা। দেখছি তো।’ অভিমান ভরা কণ্ঠ। যেন মেনে নিয়েছেন সব। এ দুঃসহ জীবন মেনে নেয়া মানুষগুলোর পাশে এখনই দাঁড়ানো উচিত। যারা আরও শীত নামলে সাহায্যের হাত বাড়াতে চান, তারা ভুল করছেন। শীতে ভোগা মানুষগুলোর সঙ্গে কথা বলেই এ ধারণা পাওয়া গেল। এবার রাস্তা পারাপারের কথা। নিজের ভালর জন্যই নিয়ম মেনে রাস্তা পার হওয়া উচিত। কিন্তু হচ্ছে উল্টোটি। শহরের প্রায় সবকটি প্রধান সড়কের উপর দাঁড়িয়ে আছে ফুটওভার ব্রিজ। কিন্তু ব্যবহার করার তেমন কেউ নেই। এভাবেই চলছিল। আর তারপর গত সপ্তাহ থেকে বিশেষ অভিযান। পুলিশ নেমেছে। রাস্তার উপর টেবিল চেয়ার পেতে বসেছেন ম্যাজিস্ট্রেট। ফলাফলÑ নিরাপদে রাস্তা পার। সব বয়সী মানুষ সারিবদ্ধভাবে ফুটওভার ব্রিজে উঠছিলেন, নামছিলেন। দৃশ্যটা দেখার মতো ছিল বটে। ছিল বলার কারণ, অভিযান শেষে গণেশ উল্টে গেছে। শাহবাগ থেকে ফার্মগেট এলাকা পর্যন্ত অভিযান পরিচালনা করা হয়েছিল। অভিযান শেষ হতেই পুরনো চেহারা! বৃহস্পতিবার ফার্মগেট ও বাংলা মোটরের একাধিক ফুটওভার ব্রিজের উপর দিয়ে যাওয়ার সময় দেখা গেছে, ভিড় অর্ধেক কমে গেছে। আগের মতোই নিচ দিয়ে হাত উঁচিয়ে গাড়ি থামিয়ে রাস্তা পার হচ্ছে মানুষ। কেউ কেউ দৌড়ে গাড়ির গতি অতিক্রম করার চেষ্টা করছেন। তাহলে কী দাঁড়াল? পুলিশ দিয়েই সব বাধ্য করাতে হবে? তা না হলে সভ্য হওয়া যাবে না? সচেতন নাগরিকরা এ প্রশ্ন তুলছেন। তাঁদের মতে, রাজধানী শহরে বসবাসকারীরা সচেতন না হলে এ ধরনের কোন উদ্যোগই সফল হবে না। সে লক্ষ্যে কী করা যায়, তা নিয়ে ভাবার পরামর্শ দিয়েছেন তাঁরা। পাশাপাশি ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহারের উপযোগী করার উপরও জোর দিয়েছেন।
×