ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

এডিপি সংশোধনের প্রক্রিয়া শুরু

প্রকাশিত: ০৪:৩২, ৪ ডিসেম্বর ২০১৪

এডিপি সংশোধনের প্রক্রিয়া শুরু

হামিদ-উজ-জামান মামুন ॥ সর্বোচ্চ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে আগেভাগেই শুরু হচ্ছে চলতি অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী (এডিপি) সংশোধনের প্রক্রিয়া। এ লক্ষ্যে বৈদেশিক সহায়তার বরাদ্দ সংশোধনে চাহিদা পাঠানোর বিষয়ে পরিপত্র জারি করেছে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)। আগামী ১০ ডিসেম্বর থেকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর সঙ্গে চার দিনব্যাপী সিরিজ বৈঠক শুরু হচ্ছে। এর মধ্য দিয়ে চলতি অর্থবছরে বিদেশী সহায়তায় বাস্তবায়নযোগ্য প্রকল্প বিষয়ে জানতে চাওয়া হবে। অর্থ ব্যয় করতে অসামর্থ্য মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো তাদের অবস্থান তুলে ধরবে। বৈঠকগুলোতে ইআরডি সচিব মোহাম্মদ মেজবাহউদ্দিন সভাপতিত্ব করবেন। অন্যদিকে এডিপিতে বরাদ্দকৃত সরকারের নিজস্ব তহবিলের অর্থের বিষয়ে আগামী সপ্তাহে সিদ্ধান্ত নেয়া হতে পারে বলে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে। এডিপি কাটছাঁটের বিষয়ে পরিকল্পনা সচিব ভুঁইয়া সফিকুল ইসলাম জনকণ্ঠকে বলেন, শতভাগ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে এডিপি সংশোধনীর প্রক্রিয়া শুরু করা হচ্ছে। বৈদেশিক অংশের বিষয়ে সবসময়ই আগে বৈঠক করে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেয়া হয়ে থাকে। তবে সরকারী অংশের বিষয়ে আগামী সপ্তাহে সিদ্ধান্ত হতে পারে। ইতোমধেই সংশোধনী কাজ শুরু করতে কার্যক্রম বিভাগকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ইআরডি সূত্র জানায়, চার দিনব্যাপী সিরিজ বৈঠকের প্রথম দিন ১০ ডিসেম্বর কৃষি, পল্লী উন্নয়ন ও পল্লী প্রতিষ্ঠান এবং পানি সম্পদÑএ তিন খাতের মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত থাকবেন। যে সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সঙ্গে বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে সেগুলো হচ্ছে কৃষি মন্ত্রণালয়, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর, দুর্যোগ ব্যবস্থাপরা ও ত্রাণ বিভাগ, এলজিইডি, পরিকল্পনা কমিশন, স্থানীয় সরকার বিভাগ, ভূমি মন্ত্রণালয়, পানি উন্নয়ন বোর্ড, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়, পল্লী উন্নয়ন এবং সমবায় বিভাগ প্রমুখ। পরের দিন ১১ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে শিল্প, বিদ্যুত, তেল-গ্যাস ও প্রাকৃতিক সম্পদ, পরিবহন এবং যোগাযোগ সেক্টরের সংশ্লিষ্টরা অংশ নেবে। এর মধ্যে রয়েছে শিল্প মন্ত্রণালয়, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ড, বিদ্যুত বিভাগ, পেট্রো বাংলা, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ, সড়ক ও জনপথ অধিদফতর, রেলওয়ে, বেসামরিক বিমান অধিদফতর, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়। তৃতীয় দিন ১৪ ডিসেম্বর ভৌত, পরিকল্পনা, পানি সরবরাহ ও গৃহায়ন, শিক্ষা ও ধর্ম, ক্রীড়া ও সংস্কৃতি, স্বাস্থ্য, পুষ্টি, জনসংখ্যা ও পরিবার কল্যাণ, গণসংযোগ খাতের সঙ্গে বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এসব খাতের সংস্থাগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ঢাকা ও চট্টগ্রাম ওয়াসা, স্বাস্থ্য প্রকৌশলী অধিদফতর, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর, তথ্য মন্ত্রণালয় প্রমুখ। শেষদিন ১৫ ডিসেম্বর ৪টি সেক্টরের সঙ্গে বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এ অধীনে রয়েছে ২৫টি সংস্থা ও বিভাগ। এর মধ্যে রয়েছে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়, সমাজ সেবা অধিদফতর, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, শ্রম ও কর্ম সংস্থান মন্ত্রণালয় ইত্যাদি। এ বিষয়ে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক অতিরিক্ত সচিব ও বর্তমানে পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য আরাস্তু খান জনকণ্ঠকে বলেন, বৈদেশিক সহায়তার যে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে তার মধ্যে শেষ পর্যন্ত কতটুকু বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে তা নির্ধারণ করা হবে। বৈঠকগুলোতে সাধারণত মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় করতে পারবে না তা সারেন্ডার করবে। ওই অর্থ পরবর্তীতে বেশি বাস্তবায়নকারী মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর (যাদের পারফরমেন্স ভাল) অনুক’লে বরাদ্দ দেয়া হবে। এ কারণে আগেভাগেই প্রস্তুতি শুরু করা হতে পারে। কেননা অর্থবছরের শেষ দিকে এসে বরাদ্দ দিলে কোন ফল হয় না। সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরের জন্য মোট ৮৬ হাজার কোটি টাকার বিশাল এডিপি হাতে নিয়েছে সরকার। এর মধ্যে অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (তিন মাসে) বাস্তবায়নের অগ্রগতি আশানুরূপ হয়নি। চলতি ২০১৪-১৫ অর্থবছরের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে মাত্র ৯ শতাংশ। এ হার গত চার বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। এর আগের অর্থবছরগুলোতে একই সময়ে বাস্তবায়ন হয়েছিল যথাক্রমে ১১ , ১৩ ও ১১ শতাংশ। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুসারে, অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বৈদেশিক অংশের ব্যয়ের হার অনেক কম। বিদেশী সহায়তার তহবিল থেকে ব্যয় হয়েছে ১ হাজার ৭৪৪ কোটি টাকা। যা মোট বরাদ্দের মাত্র ৬ শতাংশ। অথচ চলতি অর্থবছরের বৈদেশিক অংশে মোট ২৭ হাজার ৭০০ কোটি টাকার বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকায় নিযুক্ত বিশ্বব্যাংকের লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন বলেন, বাস্তবতা ও সামর্থ্যরে সঙ্গে সমন্বয় না করেই বছরের প্রথম দিকে বরাদ্দ দেয়া হয়। পরবর্তীতে বরাদ্দের অর্থ পুরোপুরি ব্যয় করতে পারে না সংস্থা ও মন্ত্রণালয়গুলো। এ জন্য প্রতিবছরই বরাদ্দের বড় একটা অংশ ছেঁটে ফেলা হয়। তবে বছরের প্রথম থেকেই এডিপি বাস্তবায়নে গতি আসলে খুব বেশি অংশ ছেটে ফেলার প্রয়োজন পড়ত না বলে মনে করেন তিনি। এ অবস্থায় সংস্থা ও মন্ত্রণালয়গুলোকে এডিপি বাস্তবায়নে সক্ষমতা ও তৎপরতা বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন।
×