ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

রংপুরে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ১ কোটি টাকার স্থাপনা যন্ত্র নষ্টের পথে

পাঁচ বছরেও চালু হচ্ছে না ৫০ শয্যার প্রকল্প

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ৩ ডিসেম্বর ২০১৪

পাঁচ বছরেও চালু হচ্ছে না ৫০ শয্যার প্রকল্প

স্টাফ রিপোর্টার, রংপুর ॥ তৈরি হয়েছে অত্যাধুনিক অবকাঠামো-স্থাপনা-অস্ত্রোপচার কক্ষ, এসেছে আধুনিক নানা অস্ত্রোপচারের যন্ত্রপাতিসহ চিকিৎসাসেবার উন্নত আসবাব, কিন্তু তারপরও দীর্ঘ পাঁচ বছরেও চালু হচ্ছে না রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীতকরণ প্রকল্পটি। ফলে প্রায় ১০ কোটি টাকা মূল্যের এসব অবকাঠামো-স্থাপনা এবং যন্ত্রপাতি অযতœ আর অবহেলাতেই নষ্ট হতে বসেছে। শুধু জনবল নিয়োগ আর বাড়তি রোগীদের পথ্য বরাদ্দে মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের কারণেই ঝুলে আছে জনগণের স্বাস্থ্যসেবার এই প্রকল্পটি। এতে করে সঠিক চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বদরগঞ্জ উপজেলার মানুষ। এদিকে হাসপাতালের অভ্যন্তরে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নানা অনিয়ম স্বেচ্ছাচারিতা এমনকি অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে রোগীদের খাবার তৈরির মতো গুরুতর অনিয়মেরও চিত্রও ধরা পড়েছে জনকণ্ঠের ক্যামেরায়। জানা যায়, প্রতিষ্ঠার শুরুতে বদরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৩১ শয্যা নিয়ে যাত্রা শুরু করে। পরে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা ও রোগীর আধিক্যে বিগত ৫ বছর আগে হাসপাতালটিকে ৫০ শয্যায় উন্নীতকরণের পরিকল্পনা নেয় সরকার। এজন্য ব্যয় বরাদ্দ ধরা হয় ১০ কোটি টাকা। ২০১০ সালেই ভবন সম্প্রসারণসহ আনুষঙ্গিক কার্যক্রম শুরু হয় এবং সে বছরই এর নির্মাণ কাজ শেষ হয়। পরবর্তীতে আসে আধুনিক চিকিৎসা সেবার সরঞ্জামাদি। এসবের মধ্যে রয়েছে পূর্ণাঙ্গ একটি ডেন্টাল ইউনিটের যন্ত্রপাতি, আলট্রাসনোগ্রাম, ইসিজি, স্টিম স্ট্রেলাইজার, এ্যানেসথেসিস্ট মেশিনসহ, সার্জারিতে ব্যবহৃত সাকার মেশিন, অটোক্লেভ। এ সবকিছুই পড়ে থাকতে থাকতে এখন নষ্ট হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। এছাড়াও অত্যাধুনিক অপারেশন থিয়েটারসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় কক্ষ ও তার জন্য জরুরী মালামালসমূহ। হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেল, পুরো চত্বর যেন পরিণত হয়ে আছে ছাগল ভেড়ার অভয়ারণ্যে। হাসপাতালের রান্না ঘরে দুই রাঁধুনী বসে যেখানে মসলা বাটছে, তার পাশেই রাঁধুনীরা তরকারির ছাল বাকলা দিয়ে তাদের আদরের ছাগলকে খাওয়াচ্ছে। প্রশ্ন করলেন একজন, এই ছাগলের পশম যদি রান্নার খাবারের সঙ্গে মানবদেহে প্রবেশ করে তবে তার কী হবে? আর একই ভবনে অবস্থিত পরিবার পরিকল্পনা অফিসের কর্মকর্তার কক্ষের সামনেই দেখা গেল চুলায় রান্না হচ্ছে কী যেন কী! খোঁজ নিয়ে জানা গেল অফিস স্টাফদের দুপুরের খাবার রান্না হচ্ছে সেখানে। কিন্তু অফিস কর্মকর্তার কক্ষের সামনে স্টাফদের রান্না করা চলে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে কর্তা জানান, না এটা চলে না। জানা গেল, হাসপাতালে দুটি এ্যাম্বুলেন্সের মধ্যে একটি অনেকদিন আগেই অকেজো হয়ে আছে। ফলে জরুরী রোগীদের আনা নেয়ার ক্ষেত্রে মারাত্মক সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। চালক রফিকুল ইসলাম জানালেন, একটি মাত্র এ্যাম্বুলেন্সের কারণে রোগী আনা নেয়ার ক্ষেত্রে মারাত্মক সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম সরকার এবং জেলার সিভিল সার্জন মোজাম্মেল জানান, প্রয়োজনীয় লোকবল এবং পথ্য বরাদ্দের জন্য তারা ইতোমধেই কয়েকবার মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন এবং বদরগঞ্জ-তারাগঞ্জ আসনের সংসদ সদস্য আহসানুল হক ডিউকও মন্ত্রণালয়ে এসব বরাদ্দের জন্য অনেকদিন থেকেই চেষ্টা চালাচ্ছেন। অচিরেই তা বরাদ্দ হয়ে আসবে বলেই আশা করছেন তাঁরা।
×