ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

হেলিকপ্টার আনতে জালিয়াতি

অনুমতি এক প্রতিষ্ঠানের আমদানি করেছে অন্য প্রতিষ্ঠান

প্রকাশিত: ০৫:১৮, ৩ ডিসেম্বর ২০১৪

অনুমতি এক প্রতিষ্ঠানের আমদানি করেছে অন্য প্রতিষ্ঠান

আজাদ সুলায়মান ॥ হেলিকপ্টার আমদানির জন্য সিভিল এভিয়েশন লাইসেন্স দেয় বাংলা ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্স নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে। কিন্তু বিশেষ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য সেই হেলিকপ্টার আমদানি করা হয় পিএইচপি কোল্ড রোলিং মিলস নামের একটি প্রতিষ্ঠানের নামে। এটা আমদানি নীতিমালার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে, এমন লঙ্ঘন ধরা পড়লেও বিষয়টি এখনও গোপন রাখা হয়েছে সিভিল এভিয়েশনের কাছে। পিএইচপি গ্রুপ এমনই জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে হেলিকপ্টার আমদানির পর বাণিজ্যিকভাবে ব্যবসাও শুরু করেছে। জানতে চাইলে সিভিল এভিয়েশন পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন নাজমুল আনাম বলেন, লাইসেন্স দেয়া হয়েছে বাংলা ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সকে। তারপর কোন প্রতিষ্ঠানের নামে হেলিকপ্টার আমদানি করা হয়েছে, সেটা দেখার কাজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের। আমদানি নীতিমালা লঙ্ঘনের এহেন চিত্র বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি গোপন প্রতিবেদনে উঠে আসলেও এখনও এ বিষয়ে অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। ব্যাংকের এক পরিচালক বলেছেন, এক প্রতিষ্ঠানের নামে অনুমতি নিয়ে আরেক প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণপত্র খুলে হেলিকপ্টার আমদানি করেছে পিএইচপি গ্রুপ। এটা কিছুতেই গ্রহণীয় নয়। জানা যায়, দেশের শীর্ষ রি রোলিং প্রতিষ্ঠান পিএইচপি গ্রুপ সিভিল এভিয়েশনের কাছে তাদের সহযোগী প্রতিষ্ঠান বাংলা ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের নামে হেলিকপ্টার আমদানির অনুমতি চায়। সিভিল এভিয়েশনের সব বিধি বিধান মেনেই হেলিকপ্টার আমদানির লাইসেন্সও দেয়। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি নিজ নামে হেলিকপ্টার আমদানি না করে পিএইচপি কোল্ড রোলিং মিলস লিমিটেডের নামে আমদানি করে। এটা আবার সিভিল এভিয়েশনের কাছে গোপনীয় রাখা হয়। কাগজ পত্রে দেখা যায়, হেলিকপ্টার আমদানির জন্য আগ্রাবাদ শাখার ইস্টার্ন ব্যাংকে ১৪ জুলাই ২০১১ সালে একটি আমদানি ঋণপত্র খোলা হয়। (আমদানি ঋণপত্র নম্বর ১৪৭২১১০১০১৯১)। এই আমদানি ঋণপত্রের বিপরীতে ২০১১ সালের মার্চে যুক্তরাষ্ট্রে নিবন্ধিত কবির হোল্ডিং ইনকর্পোরেশন থেকে হেলিকপ্টার কেনা হয়। আর কবির হোল্ডিং ইনকর্পোরেশন যুক্তরাষ্ট্রের এসক্রো কোম্পানির মাধ্যমে আইরিশ কোম্পানি ইনসিউরড এয়ারক্রাফট টাইটেল সার্ভিস বা আইএটিএসের কাছ থেকে এটি কিনে। ওই বছরের জুলাই মাসে ইস্টার্ন ব্যাংকে স্থাপিত ঋণপত্রের ডিউফারকো এশিয়া প্রাইভেটের কাছ থেকে একটি হেলিকপ্টার আমদানি করা হয়। এ জন্য ঋণপত্রের বিপরীতে ডিউফারকো এশিয়া প্রাইভেটকে ২০ লাখ ৬৫ হাজার ডলার পরিশোধও করা হয়। জানা যায়, পিএইচপি গ্রুপের আমদানি লঙ্ঘন ঘটনা গোপনে তদন্ত করে বাংলাদেশ ব্যাংক। তাতে ফুটে ওঠে জালিয়াতির সুস্পষ্ট চিত্র। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন প্রভাবশালী কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে বলেন, সিভিল এভিয়েশন বাংলা ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্স লিমিটেড নামের প্রতিষ্ঠানকে আমদানির জন্য অনুমতি প্রদান করেছে। হেলিকপ্টার আমদানি করতে হলে ওই প্রতিষ্ঠানের নামেই করতে হবে। সেটা করা হয়নি। হেলিকপ্টার আমদানির পর দেখা যায়, বাংলা ইন্টারন্যাশনালের কোন হেলিকপ্টার আমদানি করা হয়নি। সেটা আনা হয় পিএইচপি কোল্ড রোলিং মিলস লিমিটেডের নামে, যা আমদানি নীতির লঙ্ঘন। এতে শাস্তির বিধান রয়েছে।
×