ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

আব্বাস তরফদার

শান্তি চুক্তি বর্তমান প্রেক্ষাপট ও করণীয়

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ২ ডিসেম্বর ২০১৪

শান্তি চুক্তি বর্তমান প্রেক্ষাপট ও করণীয়

আজ পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তির ১৭ বছর পূর্তি ও ১৮ বছরে পদার্পণ করেছে। ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বরে এক আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল বাংলাদেশ সরকার এবং পার্বত্য উপজাতি বা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীগুলোর পক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (পিসিজেএসএস) মধ্যে। তখন সবাই আশা করেছিল, এই চুক্তি পাহাড় এলাকায় পার্বত্য ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীগুলো দীর্ঘদিনের সশস্ত্র সংগ্রামের ইতি ঘটিয়ে তাদের দেশের মূলস্রোতে নিয়ে আসবে, পাহাড়ে বাঙালী-নৃতাত্ত্বিকগোষ্ঠীরা মিলেমিশে বসবাস করবে, বইবে কাক্সিক্ষত শান্তির সুবাতাস। ভূমিবিরোধ ছাড়া সরকার প্রায় সকল চুক্তির ধারা বাস্তবায়ন করার পরও পাহাড়ীদের পৌনঃপুনিক অভিযোগ ক্রমান্বয়ে বেড়ে চলেছে। এই ভূমিবিরোধের মূলে আছে পাহাড়গোষ্ঠীর আদিম ভূমি-ব্যবস্থা, যা বাংলাদেশের সংবিধানে স্বীকৃত নয়, সংবিধানের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণও নয়। তারা জমি দাবি করে, কিন্তু তার স্বপক্ষে দখলদারিত্বের প্রমাণ দেখাতে পারে না, দলিল তো নয়ই। স্মর্তব্য যে, ১৯৬৫ সালে CHT Regulation of 1900-এর ৩৪ ধারা রহিত করা হয়, ফলে ১৫ বছরের অধিককাল যাবত বসবাসরত অউপজাতিদের জমির মালিকানার অনুমতি দেয়া হয় বাঙালীদের তাই অধিকাংশের রয়েছে মালিকানার সরকারী দলিল। অন্যদিকে পাহাড়ীনৃগোষ্ঠী মালিকানার হাওয়াই দাবি করতে গিয়ে নানা স্থানে বন বিভাগের জমি দাবি করে বসছে, কোথাও বা খাস জমি, কোথাও বা অন্য বাঙালীর জমি। কখনও বা ভুলে, কখনও বা মিথ্যা লোভে। পাশাপাশি তারা কাজ করে যাচ্ছে বাঙালী খেদানোর বিদ্বেষী এ্যাজেন্ডা এবং এরই আলোকে হঠাৎ উদ্ভাবিত আদিবাসী পরিচয়ের স্বীকৃতির ষড়যন্ত্রী ইচ্ছা। মূলত নৃগোষ্ঠীগুলোর বিরোধিতার কারণেই বারংবার ভূমিবিরোধের কোন সুরাহা হয়নি। এইখানে বাঙালী-নৃগোষ্ঠী সকলকে সাংবিধানিক নিয়মের আওতায় আসতে হবে। এর জন্য প্রয়োজন সকলের সমতাভিত্তিক সততা ও ত্যাগের মনোভাব, সর্বোপরি, শান্তি প্রতিষ্ঠার আন্তরিক ইচ্ছা। এছাড়া, চাকমাদের মূল ক্ষোভের কারণ যে কাপ্তাই জল-বিদ্যুত প্রকল্প, তাও পাকিস্তান শাসনামলের ঘটনা, এর দায়দায়িত্ব বাংলাদেশ সরকারের ওপর বর্তায় না, এখানে সরকারকে দোষারোপ করে কোন ফলপ্রাপ্তি নেই, বরং তিক্ততা ও অবিশ্বাস বাড়বে, শান্তির পরিবেশ বিনষ্ট হবে। এই সমস্যার সমাধানে বাঙালী-নৃগোষ্ঠী সকলকে অসৎ নেতৃত্ব থেকে বেরিয়ে এসে নিজেদের মধ্যে ঐক্য গড়ে তুলতে হবে এবং সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্পকে জলাঞ্জলি দিতে হবে। পাহাড়ী নৃগোষ্ঠীকে বুঝতে হবে, অনেক বিরোধিতা সত্ত্বেও শান্তি চুক্তিতে তাদের সকল ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার মেনে নিয়ে তৎকালীন সরকার সাহসের সঙ্গে চুক্তি করেছিল পাহাড়ের প্রায় অর্ধেক বাঙালী জনগোষ্ঠী তথা ‘জাতীয় স্বার্থ বিসর্জনের অভিযোগ’ তুচ্ছ করে শুধু শান্তি আনার লক্ষ্যেই (২ ডিসেম্বর ১৯৯৭ তারিখে বিবিসির সংবাদদাতা ফ্রান্সেস হ্যারিসনের রিপোর্ট দ্রষ্টব্য) এবং উপজাতীয় সংস্কৃতির স্বীকৃতির মাধ্যমে সাংবিধানে প্রতিফলিত হয়েছিল এমএন লারমার স্বপ্ন। শান্তি চুক্তির পরও সেখানে রয়েছে অবৈধ অস্ত্রের ঝনঝনানি, বিপুল পরিমাণ আগ্নেয়াস্ত্র মজুদ রয়েছে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর কাছে। বেড়েছে পাহাড়ী সন্ত্রাসীর গোষ্ঠীর সংখ্যা আর তাদের তৎপরতা হয়েছে আরও অবাধ। চাঁদাবাজির ব্যাপ্তি বেড়েছে বহুগুণে। বছরে সেখানে চাঁদাবাজির পরিমাণ প্রায় ৪০০ কোটি টাকা বলে অনুমান করা হয়। বাঙালীরা এখনও তাদের জমিতে দল না বেঁধে যেতে পারে না, অনেক স্থানেই তারা বন্দী গুচ্ছগ্রামের মানবেতর, নিগৃহীত জীবনে। তারা আপোসে চাঁদা দিচ্ছে অথবা অপহৃত হচ্ছে অথবা আহত-নিহত হচ্ছে, উৎখাত হচ্ছে ঘরবাড়ি ও জমিজিরাত থেকে। ২০১৪ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৪৮ জন নিহত হয়েছে, ১২৬ জন আহত হয়েছে, ৮৭ জন অপহৃত হয়েছে, ৪৪টি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে যার প্রায় সব দায়দায়িত্ব পাহাড়ী সন্ত্রাসীগোষ্ঠীর। শান্তি চুক্তির শর্ত স্পষ্টতই লঙ্ঘিত হয়েছে, হচ্ছে। শান্তি চুক্তিতে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীগুলো অস্ত্র সংবরণ ও সন্ত্রাস বন্ধের ওয়াদা করেছিলÑ সেই অস্ত্র সংযত না হলে, সন্ত্রাস বন্ধ না হলে এই শান্তিচুক্তি অর্থহীন ও অকার্যকর হয়ে পড়বে। কেননা, কোন চুক্তিই কখনও একপক্ষীয়ভাবে পালিত হয় না, চুক্তি মানার সব দায় সরকারের না। পার্বত্য জাতিগোষ্ঠীকেও চুক্তির প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে, নিজেদের করণীয়ের দায় নিতে হবে। দৃশ্যত শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর করার জন্য পার্বত্য নৃগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব করার ক্ষেত্রে সন্তু লারমা উপযুক্ত একক ব্যক্তিত্ব ছিলেন নাÑ পার্বত্য নৃগোষ্ঠীর একটি বড় অংশ শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরের সময় থেকে অদ্যাবধি শান্তি চুক্তির বিরোধিতা করে এসেছে ও করছে এবং সর্বশক্তি দিয়ে শান্তি স্থাপন প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তুলছে। এমনকি বর্তমানে সেই বিরোধিতা আরও দল ও মতে বিখ-িত হয়েছে; পাহাড়ে আগে অপহরণ, মুক্তিপণ আদায়, চঁাঁদা আদায়, হত্যাকারী ছিল শুধু একটি আঞ্চলিক দল, আর এখন তা দাঁড়িয়েছে তিন গ্রুপেÑ সন্ত লারমার অবস্থান আরও দুর্বল হয়েছে। এই সন্ত্রাসের শিকার সবাই পাহাড়ের নিরীহ, নিরস্ত্র বাঙালী। পার্বত্যাঞ্চলে সেনাক্যাম্পগুলো ক্রমাগত কমে এসেছে এবং অনেক পরিত্যক্ত ক্যাম্পেই ঠাঁই নিয়েছে সশস্ত্র পাহাড়ী সন্ত্রাসীগোষ্ঠী। আধিপত্যকামী পাহাড়ী সন্ত্রাসীগোষ্ঠীগুলো চাঁদার মাধ্যমে এবং বিদেশী ষড়যন্ত্রকারী মহলের অনুদানের অর্থে নিয়মিত ভারত ও মিয়ানমারের রুট দিয়ে অস্ত্র নিয়ে আসছে। বস্তুত বিজিবি ক্যাম্পবিহীন অরক্ষিত ৪৫ কিমি দীর্ঘ পার্বত্য সীমান্ত দিয়ে অস্ত্র আনা তেমন কোন কঠিন বিষয় নয়। পার্বত্যাঞ্চলে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের সাংগঠনিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতা খুবই শক্তিশালী, তাদের রয়েছে নিরঙ্কুশ আধিপত্য, বাঙালীদের প্রতিনিধিত্ব সেখানে নিতান্ত সংখ্যালঘুÑ এই ক্ষমতাকে অনেক সময় তারা পরিণত করেছে বাঙালী দলন-নিপীড়নের হাতিয়ার হিসেবে। গোষ্ঠী ও সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ তাড়িত হয়ে তারা যখন বাঙালী অধ্যুষিত এলাকায় রাস্তাঘাট নির্মাণ বা স্কুল প্রতিষ্ঠাকে পদে পদে আটকে দেন কিংবা বাঙালী পাড়া বা সেনাক্যাম্পে বিদ্যুতের লাইন দেয়ার বিরোধিতা করেন, সেটা ভুক্তভোগীদের নাগরিক অধিকারকে খর্বই শুধু করে না, বরং শান্তি চুক্তিকেও প্রশ্নবিদ্ধ করে দেয়। শান্তি চুক্তির পরে সরকার পাহাড়ে ব্যাপক উন্নয়ন করেছে। একই সঙ্গে ইউএনডিপি, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, এডিবি এবং প্রায় ১৫৩টি এনজিও ও বিভিন্ন উদ্যোক্তা সড়ক যোগাযোগ ও অন্যান্য অবকাঠামো, স্কুল, স্বাস্থ্য ও স্যানিটেশন, পর্যটন এবং চাকরির সুযোগ সৃষ্টির ক্ষেত্রে যে উন্নয়ন করেছে তা বাংলাদেশের অন্য যে কোন স্থানের উন্নয়নের হারের চেয়ে অনেক বেশি। পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাবাহিনী কর্তৃক বাস্তবায়িত উন্নয়ন কর্মকা-ের প্রায় ৯৫ শতাংশই নৃগোষ্ঠীদের উন্নয়নের জন্য পরিচালিত। সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে প্রতিটি উপজাতীয় এলাকায় নির্মিত হয়েছে স্কুল-কলেজ, কিয়াংঘর, উপজাতীয় ছাত্রাবাস, উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে নৃগোষ্ঠীদের সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ইত্যাদি। বর্তমানে পার্বত্য চট্টগ্রামে নৃগোষ্ঠী জনসংখ্যা ৬,৯৯,১৯৪ এবং বাঙালী জনসংখ্যা ৬,৪৫,১০৯ জন অর্থাৎ উভয় জনগোষ্ঠী প্রায় সমান সমান। কিন্তু এক সমীক্ষায় দেখা যায় যে, পার্বত্যাঞ্চলে জ্ঞাত ১০৯টি এনজিওর কার্যক্রমের মধ্যে শুধু বাঙালী জনগোষ্ঠীকে লক্ষ্য করে উন্নয়ন কার্যক্রম গৃহীত হয়েছে মাত্র ৩টি, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জন্যে হয়েছে ৪৫টি এবং বাকি ৬১টি যেগুলো উভয় গোষ্ঠীর জন্যে হয়েছে, সে সবের বাস্তব আওতা মূলত ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীকে কেন্দ্র করেই। অন্যদিকে শিক্ষা ও সরকারী চাকরির ক্ষেত্রে ৫ শতাংশ করে উপজাতি কোটা ভোগ করছে এই ১ শতাংশ ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী, যার বড় অংশ ভোগ করে এককভাবে চাকমারা। ফলে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী, বিশেষ করে চাকমারা শিক্ষাদীক্ষা ও চাকরির ক্ষেত্রে দীর্ঘ সময়কাল ধরে সুযোগ-সুবিধাভোগী হয়ে সকল ক্ষেত্রে অগ্রসর জনগোষ্ঠীতে পরিণত হয়েছে। দেশের একটি প্রধান কর্পোরেট প্রিন্ট মিডিয়া ও চিটাগং হিলট্রাক্টস কমিশনের (সিএইটি কমিশন) সহযোগিতায় উপজাতি শব্দতে পাহাড় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীরা সাম্প্রতিক সময়ে আপত্তি জানাচ্ছে ‘উপ’ প্রত্যয়টি তাদের জাতিগত তুচ্ছতার প্রকাশ বলে (যদিও ইংরেজীতে ট্রাইব বললে ‘উপ’ প্রত্যয়ের বিষয়টি থাকে না)। তাদের এ আপত্তি মেনেই সরকার তাদের জাতিগত ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী বলে স্বীকৃতি দিয়েছেÑ সরকারের এই অবস্থান খুবই যথাযথ। রাজা ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায় ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম ও সমতলের ক্ষুদ্র জনসংখ্যার জনগোষ্ঠীসমূহকে কেন আদিবাসী হিসেবে অভিহিত করা উচিত’ জাতীয় নানা ভাষায় প্রবন্ধ-নিবন্ধ লিখে যাচ্ছেন মূলত গত দুই দশক ধরে বিভিন্ন সময়ে বিচ্ছিন্নভাবে কিছু সরকারী প্রজ্ঞাপন ও নথিতে কিছু আদিবাসী শব্দের উল্লেখের বরাত দিয়ে। তিনি ভাল করেই জানেন, উপজাতি, আদিবাসী, নৃগোষ্ঠী ইত্যাদি শব্দ ইংরেজী প্রতিশব্দের হুবহু অর্থবহ অনুবাদ নয় এবং এতদিন এগুলোর সর্বজনীন, সুনির্দিষ্ট সংজ্ঞা ছিল না, বরং কখনও কখনও একটিকে অন্যটি দিয়ে উল্লেখ করা হতো। এই শব্দগুলোর আইন-সচেতন ব্যবহার খুবই সাম্প্রতিক ঘটনা। জাতিসংঘের অধিভুক্ত প্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) এর Indigenous and Tribal Peoples Convention, 1989 (No. 169)-এর আর্টিকেল ১-এর (ধ) অনুসারে ‘একটি দেশের মূল জনগোষ্ঠী থেকে সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিকভাবে ভিন্নতর যারা যাদের নিজস্ব ঐতিহ্য, কৃষ্টি ও আইন দ্বারা সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে পরিচলিত, তারা হলো উপজাতি।’ এখন আইএলওর এই সংজ্ঞার আলোকে যদি আমরা বাংলাদেশের চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা ও অন্যদের সঙ্গে বিচার করি তাহলে পরিষ্কার বোঝা যায় এরা উপজাতি। অন্যদিকে ওই কনভেনশনের আর্টিকেল ১-এর (ন) অনুসারে ‘যারা একটি নির্দিষ্ট রাষ্ট্রে বংশানুক্রমে বসবাস করছে বা অধিকৃত হওয়া ও উপনিবেশ সৃষ্টির পূর্ব থেকে বসবাস করছে এবং যারা তাদের কিছু বা সকল নিজস্ব সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক ও আইনগত অধিকার ও প্রতিষ্ঠানসমূহ ধরে রাখে।’ অর্থাৎ কোন জনগোষ্ঠী যদি মানুষের জ্ঞাত ইতিহাসপূর্ব অর্থাৎ প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে কোন এলাকায় বংশপরম্পরায় বসবাস করে থাকে এবং তা অন্যান্য জনগোষ্ঠীর ইতিহাসে লিপিবদ্ধ সময়কালে তাদের আগমন ও বসতিস্থাপনের পূর্বে বলে প্রমাণিত হয়, তাহলে তাদের ওই এলাকার আদিবাসী হিসেবে গণ্য করা হবে। জাতিসংঘের আদিবাসীর সংজ্ঞায় বাংলাদেশের পার্বত্য ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীরা কোন অজুহাতে নিজেদের আদিবাসী দাবি করতে পারে না, এর ঐতিহাসিক ও নৃতাত্ত্বিক কোন সত্যতা, বাস্তবতা নেই। এই জনপদে হাজার বছর ধরে বাঙালীরা ছিল, আছেÑ বাঙালীরাই এ মাটির ভূমিপুত্র। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর আগমনের আগে পার্বত্য চট্টগ্রাম সুবে বাংলার অর্থাৎ বাংলাদেশের তথা ৯৯ শতাংশ বাঙালীর অধীনে ছিল। শান্তিচুক্তি পরবর্তীকালে দেড় যুগের অভিজ্ঞতার আলোকে সকল প্রকার সশস্ত্র সন্ত্রাসী কার্যকলাপ ও ষড়যন্ত্র বন্ধ করা এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে বসতিস্থাপন ও ভূমি ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রে কালাকানুন ও ব্রিটিশ আমলের হিলট্র্যাক্টস ম্যানুয়েল ১৯০০-কে সংবিধানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে শান্তি স্থাপনের পথে হাঁটার বিকল্প নেই। নৃগোষ্ঠী-বাঙালী ভেদাভেদ দূর করে সকলের সমঅধিকারভিত্তিক শান্তিপূর্ণ ও সৌহার্দ্যময় সহাবস্থান নিশ্চিত করা জাতীয় স্বার্থের জন্য অতীব জরুরী। পার্বত্য চট্টগ্রামে সকল বৈষম্য, মানবাধিকার লঙ্ঘন ও অবিচার দূর করার লক্ষ্যে বিচার বিভাগীয় ও সংসদীয় কমিটি দ্বারা পার্বত্য পরিস্থিতি ও চুক্তির মূল্যায়ন করে সুবিচার প্রতিষ্ঠার পদক্ষেপ নেয়া জাতীয় স্বার্থেই অত্যাবশ্যক। এই শান্তিচুক্তি অনেক ত্যাগ ও পরিশ্রেমের ফসল- একে বিদেশী ষড়যন্ত্রে শামিল হয়ে একগুঁয়েমি দিয়ে ব্যর্থ করে দেয়া কারও জন্য লাভজনক হবে না। বরং স্বাধীন বাংলাদেশের এক পতাকাতলে একত্রিত হয়ে সকল বৈষম্য ভুলে পার্বত্যাঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠাই হোক আমাদের সকলের ঐকান্তিক প্রয়াস।
×