ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

হ্যাটট্রিক- তাইজুলের বিশ্বরেকর্ড

প্রকাশিত: ০৫:০৯, ২ ডিসেম্বর ২০১৪

হ্যাটট্রিক- তাইজুলের বিশ্বরেকর্ড

মোঃ মামুন রশীদ ॥ চমকটা যেন লুকিয়ে রেখেছিল বাংলাদেশ দল। সেই চমকের বাক্স খুলে নতুন স্পিন বিস্ময় তাইজুল ইসলামকে মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত সিরিজের পঞ্চম ও শেষ ওয়ানডেতে নামানো হলো। আর তিনিও সৃষ্টি করলেন বিস্ময়। তাঁর ছোবলে নতুন এক ইতিহাসই রচিত হলো। ৪৩ বছরের ওয়ানডে ইতিহাসে একেবারেই আনকোরা নতুন এক ঘটনার জন্ম দিয়েছেন ২২ বছর বয়সী তাইজুল। হ্যাটট্রিক করে সফরকারী জিম্বাবুইয়ে ইনিংস ধসিয়ে দিয়েছেন। সে জন্য অবশ্য দুই ওভার লেগেছে তাঁর। ২৭তম ওভারের শেষ বলে টিনাশে পানিয়াঙ্গারাকে বোল্ড, ২৯তম ওভারের প্রথম বলে জন নিয়ুম্বুকে এলবিডব্লিউ ও পরের বলে টেন্ডাই চাতারাকে বোল্ড করে ত্রিভুজ পূর্ণ করে হ্যাটট্রিকের স্বাদ নেন। আজ পর্যন্ত বিশ্বে যত ভয়ঙ্কর বোলার এসেছেন এবং ১৯৭১ সালের ৫ জানুয়ারি থেকে ওয়ানডের যাত্রা শুরু হওয়ার পর এর আগে ৩৫ বার হ্যাটট্রিক দেখেছে বিশ্ববাসী। তবে অভিষেকেই হ্যাটট্রিকের ঘটনা এই প্রথম। যা করতে পারেননি মুত্তিয়া মুরালিধরন, শেন ওয়ার্ন, আব্দুল কাদির, সাকলাইন মুস্তাক, বিষেণ সিং বেদী ও অনিল কুম্বলেদের মতো বিশ্ব কাঁপানো স্পিনাররাও। সবাইকে পেছনে ফেলে ইতিহাসের পাতায় নতুন অধ্যায় রচনা করলেন নাটোরের এ উদীয়মান বোলার। ওয়ানডেতে বাংলাদেশের পক্ষে শাহাদাত হোসেন রাজিব, আব্দুর রাজ্জাক ও রুবেল হোসেনের পর তাইজুলও এ বিরল কৃতিত্ব দেখালেন। সব মিলিয়ে ৭ ওভার বোলিং করে দুটি মেডেনসহ মাত্র ১১ রান দিয়ে চার উইকেট শিকার করেছেন। ওয়ানডের ইতিহাসে শুধু বাঁহাতি হিসেবেই নয় বরং স্পিনারদের মধ্যে অভিষেকের সেরা বোলিং নৈপুণ্য এটি। অস্ট্রেলিয়ার স্টুয়ার্ট ম্যাকগিল পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ২০০০ সালের ১৯ জানুয়ারি সিডনিতে ১৯ রানে চার উইকেট নিয়ে এর আগে ছিলেন সেরা। চতুর্থ ওয়ানডের দলেই ডাক পেয়েছিলেন তাইজুল। তবে খেলানো হয়নি তাঁকে। মাত্র পাঁচ টেস্ট খেলে ২৫ উইকেট শিকার করে অপেক্ষায় ছিলেন ওয়ানডেতে যাত্রা শুরু করার। অবশেষে মূল চমকের মোড়ক খুলল শেষ ম্যাচে। ওয়ানডেতে জুবায়েরের সঙ্গে আরাফাত সানি যোগ দিয়ে ভীতি সঞ্চার করেছেন প্রতিপক্ষ শিবিরে। আর জ্বলজ্যান্ত ত্রাস হিসেবে সাকিব আল হাসানের ঘূর্ণি ছিলই। পঞ্চম ওয়ানডেতে তাইজুল একাদশে সুযোগ পেলেন। প্রথম থেকেই জিম্বাবুইয়ে বেশ আক্রমণাত্মক মেজাজে ব্যাট চালিয়ে দ্রুতবেগেই রান তুলছিল। কিন্তু বাংলাদেশের স্পিনেই বিপদটা শুরু হয় জিম্বাবুইয়ের। ১৭.৩ ওভারে ১ উইকেট হারিয়ে ৯৫ রান তুলে মজবুত অবস্থানেই ছিল জিম্বাবুইয়ে। তবে এর পরই পতন শুরু। জুবায়ের-সাকিব ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেন। ২৬ ওভার শেষে ১২০ রানেই ৫ উইকেট তুলে নিয়ে তখন নিয়ন্ত্রণ বাংলাদেশের হাতে। ইনিংসের একাদশ ওভারেই বোলিংয়ে এসেছিলেন তাইজুল। টানা ৫ ওভার বোলিং করে জিম্বাবুইয়ে ব্যাটসম্যানদের ঘাবড়ে দিতে পারলেও ১১ রান দিয়ে কোন উইকেট পাননি। তবে ২৭তম ওভারে বোলিংয়ে ফিরে প্রথম বলেই উইকেট শিকার করলেন। ওয়ানডে ক্যারিয়ারের প্রথম উইকেট। সলোমন মিরেকে ঝুলিয়ে দেয়া বলে পরাস্ত করে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলে ফেরত পাঠালেন। একই ওভারের শেষ বলে নিলেন পানিয়াঙ্গারার উইকেট। মেডেনসহ দুই উইকেট নিয়ে দারুণভাবে ফিরে আসলেন। তখনও তাইজুল কিংবা মিরপুরের দর্শক এবং টিভি পর্দায় চোখ রাখা ক্রিকেটপ্রেমী বিশ্ববাসী ঘুণাক্ষরেও বুঝতে পারেননি অনন্য এক বিশ্বরেকর্ড হতে যাচ্ছে। ২৯তম ওভারের প্রথম দুই বলেই উইকেট শিকার করে হ্যাটট্রিক পূর্ণ করলেন তাইজুল। ওই ওভারটাও শেষ করলেন মেডেনসহ। আর তাঁকে বল করতে হয়নি। পরের ওভার সাকিব জিম্বাবুইয়ের শেষ উইকেটও তুলে নেন। এটি ছিল ওয়ানডেতে বাংলাদেশের পক্ষে চতুর্থ হ্যাটট্রিকের ঘটনা। পেসার শাহাদাত প্রথম ঘটনাটি ঘটিয়েছিলেন এই জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধেই হারারেতে ২০০৬ সালের ২ আগস্ট। এরপর ২০১০ সালের ৩ ডিসেম্বর জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে রাজ্জাক এবং গত বছর ২৯ অক্টোবর নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে রুবেল হ্যাটট্রিক করেন। বিশ্ব ক্রিকেটের ওয়ানডে ইতিহাসে এর আগে ৩১ বোলার মোট ৩৫টি হ্যাটট্রিকের ঘটনা ঘটিয়েছিলেন। সেদিক থেকে তাইজুল ৩৬তম ঘটনার জন্ম দিলেন। পাকিস্তানের পক্ষে সর্বাধিক ৮টি, শ্রীলঙ্কা ৭টি, অস্ট্রেলিয়া ৫টি, ইংল্যান্ড ৩টি এবং নিউজিল্যান্ড, জিম্বাবুইয়ে ও ভারত ২টি করে এবং দক্ষিণ আফ্রিকা ১টি হ্যাটট্রিক করতে পেরেছে। ইতিহাসের প্রথম হ্যাটট্রিক ছিল মিডিয়াম পেসার জালাল-উদ-দীনের। ১৯৮২ সালের ২০ সেপ্টেম্বর হায়দ্রাবাদে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে তিনি এ বিরল ঘটনার প্রথম জন্ম দিয়েছিলেন। তবে আর কেউ অভিষেকে এমনটা করে দেখাতে পারেননি। ১১ রানে চার উইকেট শিকার অভিষেকে ওয়ানডের ইতিহাসে স্পিনারদের মধ্যে সেরা বোলিং। আর স্পিনার কিংবা পেসারদের রেকর্ড ঘাঁটলে তাইজুলের অবস্থান দশে। বাংলাদেশের পক্ষে অভিষেকে সেরা বোলিং পেসার তাসকিন আহমেদের। তিনি গত জুনে ভারতের বিরুদ্ধে ২৮ রানে নিয়েছিলেন ৫ উইকেট। বাংলাদেশের ওয়ানডে ইতিহাসের অভিষেকে এর পরই অবস্থান তাইজুলের।
×