ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

এআইআইবি গঠনে সহায়তা দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ২৭ নভেম্বর ২০১৪

এআইআইবি গঠনে সহায়তা দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক

হামিদ-উজ-জামান মামুন ॥ এশিয়ান অবকাঠামো ব্যাংক (এআইআইবি) গঠনে সহযোগিতা দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক। নতুন এ ব্যাংকের গঠনতন্ত্র তৈরিতে চীফ কাউন্সিল নিয়োগের জন্য নাম প্রস্তাব করেছে সংস্থাটি। সরাসরি বিশ্বব্যাংকের প্রধান কার্যালয় থেকে নাম প্রস্তাব করা না হলেও সংস্থাটির চীন, কোরিয়া ও মঙ্গোলিয়ার কান্ট্রি ডিরেক্টর এ প্রস্তাব দিয়েছেন। তাছাড়া যার নাম প্রস্তাব করা হয়েছে তিনি দীর্ঘ ৩০ বছর চাকরি করেছেন বিশ্বব্যাংকেই। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে আগামী ২৮ নবেম্বর চীনের কুনমিংয়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে প্রতিষ্ঠাতা সদস্য দেশগুলোর ফার্স্ট চীফ নেগোশিয়েটরস মিটিং। বাংলাদেশ থেকে এ বৈঠকে অংশে নিচ্ছে দুই সদস্যের প্রতিনিধি দল। এ বিষয়ে ঢাকায় নিযুক্ত বিশ্বব্যাংকের লীড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন জনকণ্ঠকে বলেন, এটিই স্বাভাবিক বিষয়। কেননা বিশ্বব্যাংকের রয়েছে দীর্ঘ ৭০ বছরের অভিজ্ঞতা। এখন অবকাঠামো উন্নয়নে কি ধরনের প্রতিষ্ঠান দরকার, সেই অভিজ্ঞতা বিশ্বব্যাংকের হয়েছে। নানা ভুল-ভ্রান্তি ও সংশোধনীর মধ্য দিয়ে এ অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে বিশ্বব্যাংক। এত অভিজ্ঞতা আর কোথাও পাওয়া যাবে না। এডিবি ও আইডিবির কিছুটা অভিজ্ঞতা আছে। কিন্তু সেগুলো হলো আঞ্চলিক বা একটা নির্দিষ্ট অংশের জন্য। বিশ্বব্যাংক হচ্ছে সারা বিশ্বের একটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান। এআইআইবি গঠনে সেই নলেজ শেয়ারিং হবে। তিনি বলেন, আমি আগেই বলেছিলান এআইআইবি বিশ্বব্যাংকের রিটায়ার্ড স্টাফদের জন্য একটি সুবর্ণ সুযোগ হবে কাজ করার জন্য। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিশ্বব্যাংক সহযোগিতা দেয়ায় এশিয়ার ইনফ্রাস্টাকচার ব্যাংকের গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে কিনা, সেটি কাজ-কর্মের মধ্য দিয়েই বোঝা যাবে। তবে শুরুতেই যে ব্যক্তির নাম গঠনতন্ত্র তৈরির জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে এতে আশা করার মতো অনেক কিছুই আছে। চীনে অনুষ্ঠেয় এ বৈঠকে বাংলাদেশ থেকে চীফ নেগোশিয়েটর হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) অতিরিক্ত সচিব ও এশিয়া ডেস্কের প্রধান আসিফ-উজ-জামানকে। তিনি এ বৈঠকে অংশে নিতে আজ ঢাকা ত্যাগ করবেন। সূত্র জানায়, ইতোমধ্যেই এআইআইবির গঠনতন্ত্র তৈরির জন্য একজন ব্যক্তির নামই প্রস্তাব পাওয়া গেছে। তিনি হচ্ছে ন্যাটালি লিসটিনটিন। তিনি ১৯৮০ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত বিশ্বব্যাংকের লিগ্যাল ইউং-এর চীফ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তাকে এ দায়িত্ব দেয়া হবে কিনা এজন্য এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ২১টি দেশের চীফ নেগোশিয়েটররা এ বৈঠকে মিলিত হবেন। দায়িত্ব পেলে তিনি নতুন এ ব্যাংকের গঠন, গভার্নেস, প্যাটার্ন, ফান্ড ম্যানেজমেন্ট, কোথায় বিনিয়োগ হবে, কিভাবে বিনিয়োগ হবে ইত্যাদি বিষয়গুলো গঠনতন্ত্রে তুলে ধরবেন। এ বিষয়ে বাংলাদেশ থেকে নিযুক্ত চীফ নেগোশিয়েটর ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব আসিফ-উজ-জামান জনকণ্ঠকে বলেন, প্রতি দেড় মাস পর পর চীফ নেগোশিয়েটরদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এটি হচ্ছে প্রথম বৈঠক। যেভাবে ব্যাংক গঠনের প্রক্রিয়া এগিয়ে চলছে এতে আশা করছি ২০১৫ সালের মধ্যে গঠন প্রক্রিয়া শেষ হবে এবং ২০১৬ সালের মধ্যে আর্থিক সহায়তা পাওয়া যাবে। বাংলাদেশ শুরুতেই যাতে আর্থিক সহায়তা পায় সে জন্য আমরা প্রকল্প তৈরির প্রস্তুতি নিচ্ছি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিশ্বব্যাংক এই নতুন ব্যাংক গঠনে সহায়তা দেয়ায় ব্যাংটির গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি পাবে। সূত্র জানায়, বাংলাদেশ এআইআইবি ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। গত ২৪ অক্টোবর বেইজিংয়ে দেশটির সঙ্গে প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হিসেবে সমঝোতা স্মারকে (এমওইউ) সই করেছে সরকার। বাংলাদেশ ছাড়া আরও ২০টি দেশ প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হিসেবে সমঝোতা স্মারকে সই করেছে। চীন সরকার বলছে, নতুন এ ব্যাংক প্রতিষ্ঠার প্রধান উদ্দেশ্য হলো সদস্য দেশগুলোর চাহিদার আলোকে অবকাঠামো উন্নয়ন এবং অন্যান্য উৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগ করে অবকাঠামোগত যোগাযোগ বাড়ানো। এ অঞ্চলে অবকাঠামো উন্নয়নে আলাদা একটি ট্রাস্ট ফান্ড থাকবে বলেও জানিয়েছে চীন। আগামী বছরের মাঝামাঝির দিকে গঠনতন্ত্র তৈরির কাজ শেষ করে ডিসেম্বরেই ব্যাংকের কার্যক্রম শুরুর ঘোষণা দিয়েছে দেশটি। ২১টি দেশের সঙ্গে সমঝোতা স্মারকের সই হওয়ার মধ্য দিয়ে ব্যাংক প্রতিষ্ঠার প্রাথমিক ধাপ শেষ হয়েছে। এখন চলছে ব্যাংক প্রতিষ্ঠার আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম। এর মধ্যে চীনের রাজধানী বেইজিংয়ে একটি সাময়িক সচিবালয় প্রতিষ্ঠার কাজ শুরু হয়েছে। সেখানে বসেই ব্যাংকের দৈনন্দিন কর্মকা- পরিচালিত হবে। ওই সাময়িক সচিবালয় প্রতিষ্ঠার জন্য সাড়ে তিন হেক্টর জমি নির্ধারণ করা হয়েছে। সাময়িক সচিবালয় স্থাপনের জন্য ৩০০ কোটি ডলার সহায়তা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে চীন। বাংলাদেশী টাকায় যার পরিমাণ প্রায় ২৪ হাজার কোটি টাকা।
×