ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

কমিউনিটি ক্লিনিক নিয়ে রাজনীতি না করার আহ্বান স্বাস্থ্যমন্ত্রীর

প্রকাশিত: ০৫:১৪, ২৭ নভেম্বর ২০১৪

কমিউনিটি ক্লিনিক নিয়ে রাজনীতি না করার আহ্বান স্বাস্থ্যমন্ত্রীর

স্টাফ রিপোর্টার ॥ কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে সপ্তাহে একদিন করে চিকিৎসক বসানোর ব্যবস্থা করা হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। তিনি বলেন, গ্রামীণ জনগণের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতেই এই উদ্যোগ নেয়া হবে। ক্লিনিকে গিয়ে দরিদ্র জনগণের সেবা দেবেন চিকিৎসকরা। দেশের মফস্বল এলাকায় পরিচালিত হচ্ছে কমিউনিটি ক্লিনিক প্রকল্প। তাই এই প্রকল্পের সঙ্গে গ্রামের মানুষের গভীর সম্পর্ক রয়েছে। কমিউনিটি ক্লিনিক নিয়ে রাজনীতি না করার আহ্বান জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। বুধবার রাজধানীর একটি হোটেলে কমিউনিটি ক্লিনিক-হেলথ রেভল্যুশন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান। কমিউনিটি ক্লিনিক প্রকল্পের আওতায় ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আর্থিক ও কারিগরি সহযোগিতায় অনুষ্ঠানটি আয়োজন করা হয়। স্বাস্থ্য সচিব সৈয়দ মঞ্জরুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বাংলাদেশ প্রতিনিধি ডাঃ এন প্রাণিথারান, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডাঃ দীন মোঃ নুরুল হক, পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের মহাপরিচালক নুর হোসেন তালুকদার, কমিউনিটি হেলথ ক্লিনিকের প্রকল্প পরিচালক ডাঃ মাখদুমা নার্গিস প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। মোহাম্মদ নাসিম বলেন, কমিউনিটি ক্লিনিক এমন একটা উদ্ভাবনী শক্তি, যার মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়া সম্ভব হয়েছে। দরিদ্র মানুষ সেখানে স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছে। এটা বাংলাদেশের জন্য একটা বিরাট অর্জন। এই অর্জনকে সবার সামনে তুলে ধরতে হবে। বিশ্ববাসী বাংলাদেশের এই কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা দেয়ার প্রক্রিয়ার প্রশংসা করেছে। কমিউনিটি ক্লিনিক নিয়ে কোন ধরনের রাজনীতি না করতে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, এই সেবাদানের প্রক্রিয়া নিয়ে কেউ কোন রাজনীতি করবেন না। কমিউনিটি ক্লিনিক একেবারে তৃণমূল পর্যায়ের মানুষের সেবা দিচ্ছে। এটা বন্ধ করে তো কোন লাভ হবে না। এটি বন্ধ হয়ে গেলে সাধারণ জনগণ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হবে। হেলথ কমিউনিটি ক্লিনিক আছে এবং থাকবে। কমিউনিটি ক্লিনিকের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০০৯ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে ২৫ থেকে ৩০ রকম প্রায় ৫শ’ কোটি টাকার ওষুধ সরবরাহ করা হয়েছে। ২০০৯ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে ২৭ কোটির অধিক জনগণ স্বাস্থ্যসেবা নিয়েছেন এবং প্রায় ৬০ লাখ জরুরী ও জটিল রোগীকে যথাযথ ব্যবস্থাপনার জন্য উচ্চতর পর্যায়ে রেফার করা হয়েছে। এছাড়াও ৫৮১টি কমিউনিটি ক্লিনিকে স্বাভাবিক প্রসব পরিচালিত হচ্ছে এবং ২০০৯ থেকে ২০১৪ এর মার্চ পর্যন্ত ৯৮৮৭টি স্বাভাবিক প্রসব হয়েছে। কোথাও মা ও নবজাতকের কোন সমস্যা হয়নি। বর্তমানে সারাদেশে ১২ হাজার ৫৭৭টি কমিউনিটি ক্লিনিক চালু রয়েছে। এছাড়াও দুর্গম ও বিচ্ছিন্ন এলাকার জন্য আরও ৩৬১টি কমিউনিটি ক্লিনিক চালুর জন্য একনেকের সভায় সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। মোহাম্মদ নাসিম বলেন, সারাদেশের নির্ধারিত স্থানে হেলথ কমিউনিটি ক্লিনিক খোলা আছে কিনা, সঠিকভাবে চিকিৎসাসেবা চলছে কিনা তা দেখার জন্য আমি সকল স্থানে যাব। হেলথ কমিউনিটি ক্লিনিকে সরকার ও জনগণ একসঙ্গে কাজ করছে। জনগণকে সম্পৃক্ত করতে পারলে কোন উদ্যোগ ব্যর্থ হয় না। তাই এই ক্ষেত্রে জনগণকে সম্পৃক্ত করতে হবে। সরকারের একার পক্ষে সকল উন্নয়ন সম্ভব নয়। দেশের উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের স্বাস্থ্য ক্লিনিকগুলো সংস্কার করা হবে এবং রোগী দেখার জন্য প্রত্যেক এমবিবিএস ডাক্তারকে ব্যক্তিগত চেম্বার করে দেয়া হবে বলে জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী। বাংলাদেশের হেলথ কমিউনিটি ক্লিনিক সেন্টারের বিপ্লব দেখে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে ডাঃ এন প্রাণিথারান বলেন, গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবা উন্নয়নে বাংলাদেশ বিশ্বে নেতৃস্থানে রয়েছে। কমিউনিটি ক্লিনিকের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, কমিউনিটি ক্লিনিক কার্যক্রম এবং সেবাদানকারীদের করণীয় সম্পর্কে নির্দেশিকা অনুযায়ী পরিচালিত হচ্ছে প্রতিটি কমিউনিটি ক্লিনিক। নির্দেশিকা টাঙ্গানো থাকায় চিকিৎসা ও ওষুধ নিয়ে অবৈধ কাজ করার সুযোগ থাকছে না। কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডারদের (সিএইচসিপি) শুক্রবার এবং সরকারী ছুটির দিন ব্যতীত প্রতিদিন কমিউনিটি ক্লিনিকে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত উপস্থিত থাকতে হয়। হেলথ কেয়ার প্রোভাইডাররা ক্লিনিক খোলা এবং বন্ধ করা, রোগীর উপস্থিতি রেজিস্টারে নাম তোলা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন নিশ্চিত করাসহ তাদের কর্মপরিধির আওতাধীন এই মুহূর্তে যে সকল কর্মকা- পরিচালনা করা সম্ভব তা করেন। কমিউনিটি গ্রুপের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করেন।
×