ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ধানমণ্ডি থানায় আত্মসমর্পণ;###;জেলগেটে নাটকীয়তা ;###;মাথা নিচু করে ঢুকবেন না, তাই মূল গেট খুলতে হলো

লতিফ সিদ্দিকী জেলখানায়

প্রকাশিত: ০৫:০৭, ২৬ নভেম্বর ২০১৪

লতিফ সিদ্দিকী জেলখানায়

স্টাফ রিপোর্টার ॥ থানায় আত্মসমর্পণের পর লতিফ সিদ্দিকীকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর ধানম-ি থানায় আত্মসমর্পণ করলে কড়া পুলিশ পাহারায় লতিফ সিদ্দিকীকে ঢাকার সিএমএম আদালতে নেয়া হয়। সংক্ষিপ্ত শুনানি শেষে আদালত তাঁকে কারাগারে পাঠায়। কারাগারে যাওয়ার আগ পর্যন্ত প্রতিটি মুহূর্তে নানা রহস্য আর নাটকীয়তার জন্ম দিয়েছেন লতিফ সিদ্দিকী, যা মঙ্গলবারও ছিল টক অব দি কান্ট্রি। গত সোমবারও লতিফ সিদ্দিকী উচ্চ আদালতে আত্মসমর্পণ করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। রবিবার রাতে বিমানবন্দরে নামার পর থেকেই তিনি গোয়েন্দাদের নজরদারির মধ্যে ছিলেন। নিরাপত্তার কারণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তরফ থেকে তাঁর অবস্থান সম্পর্কে আগাগোড়াই গোপনীয়তা রক্ষা করা হয়েছে। অথচ সে সব গোপনীয়তা ভেঙ্গে বেশ কয়েকটি থানায় হাজির হওয়ার আগাম খবর জানিয়ে লতিফ সিদ্দিকী শেষ পর্যন্ত ধানম-ি মডেল থানায় আত্মসমর্পণ করেন। আত্মসমর্পণ করার কৌশল নিয়েও করেছেন নানা নাটকীয়তা। এদিকে বুধবারের মধ্যে লতিফ সিদ্দিকীর আত্মসমর্পণের কারণে আগামী (২ পৃষ্ঠা ৩ কঃ দেখুন) লতিফ সিদ্দিকী (প্রথম পৃষ্ঠার পর) বৃহস্পতিবার হেফাজতে ইসলাম ও ইসলামী ঐক্যজোটের আগাম ডাকা দেশব্যাপী সকাল-সন্ধ্যা হরতাল আর পালিত হচ্ছে না। লতিফ সিদ্দিকী আত্মসমর্পণ করায় হরতালের মতো কর্মসূচীকে ঘিরে নানা অপতৎপরতা চালানোর পরিকল্পনা ভেস্তে গেছে সরকার বিরোধীদের। পবিত্র হজ ও তাবলীগ জামাত নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করে মন্ত্রিত্ব ও দলের সদস্য পদ হারান আবদুল লতিফ সিদ্দিকী। যেভাবে ধানম-ি থানায় আত্মসমর্পণ ॥ মঙ্গলবার দুপুর সোয়া একটার দিকে খবর ছড়িয়ে পড়ে লতিফ সিদ্দিকী আত্মসমর্পণ করছেন। তবে কোথায় কখন কিভাবে আত্মসমর্পণ করছেন তা ছিল অজ্ঞাত। তাই শুরু হয় দৌড়ঝাপ। কখনও খবর পাওয়া যায় মোহাম্মদপুর থানা, কখনও নিউমার্কেট থানায় আবার কখনও ধানম-ি থানায় আত্মসমর্পণ করতে যাচ্ছেন। এমনকি সিএমএম আদালতেও আত্মসমর্পণ করছেন বলে খবর ছড়িয়ে পড়ে। দুপুর ১টা ৩৫ মিনিটিতে তিনি আচমকা ধানম-ি থানায় হাজির হন। হাজির হওয়া নিয়েও নানা নাটকীয়তার জন্ম দেয়। সিলভার কালারের একটি টয়োটা প্রাইভেটকারে ধানম-ি লেকের দিক থেকে থানার সামনে আসেন। দ্রুত থানার গেটের সামনে নেমে পড়েন। পরনে কালো প্যান্ট, সাদা চেক শার্ট আর পায়ে সাদা জুতো। এ সময় থানার প্রধান ফটকে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছিলেন কনস্টেবল নুরুল ইসলাম। গাড়ি থেকে নেমেই সোজা থানার ভেতরের দিকে দ্রুত হেঁটে চলে যান। ফলে দায়িত্বরত কনস্টেবল নুরুল ইসলাম বিষয়টি আন্দাজই করতে পারেননি। আর এদিকে লতিফ সিদ্দিকীকে নামিয়ে দিয়েই গাড়িটি সোজা মেইন রোডে উঠে বাম দিকে টার্ন নিয়ে দ্রুত ধানম-ির দিকে চলে যায়। থানার ভিতরে গিয়ে সোজা হাজির হন ডিউটি অফিসারের ডেস্কের সামনে। সেখানে দায়িত্বরত ছিলেন সহকারী পুলিশ পরিদর্শক জাহাঙ্গীর আলম। জাহাঙ্গীর আলম জনকণ্ঠকে বলেন, আমি থানার লেখালেখির কাজ করছিলাম। আচমকা বেশ ভারি গলায় ওসি সাহেবের রুম কোন দিকে জানতে চান একজন। আমি দ্রুত মাথা তুলে দেখি সামনে লতিফ সিদ্দিকী দাঁড়িয়ে। আমি দ্রুত তাঁকে ওসি সাহেবের রুম দেখিয়ে দেই। তিনি সোজা ওসি সাহেবের রুমের ভেতরে চলে যান। খোলা দরজা দিয়ে আচমকা লতিফ সিদ্দিকী প্রবেশ করায় ধানম-ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবু বকর সিদ্দিক রীতিমতো হতভম্ব। তিনি সঙ্গে সঙ্গে দাঁড়িয়ে যান। তাঁর চক্ষু চড়কগাছ। তিনি লতিফ সিদ্দিকীকে বসতে বলেই উর্ধতন কর্মকর্তাদের খবর দেন। আর তাৎক্ষণিক ওসি তাঁর রুমের দরজা বন্ধ করে দেন। সামনে দ্রুত পুলিশ দাঁড় করিয়ে নিরাপত্তা জোরদার করেন। যেন কেউ ভেতরে প্রবেশ করতে না পারে। এরপর মোবাইল ফোনে একটি পুলিশের গাড়ি রেডি রাখতে বলেন। দুপুর পৌনে ২টার দিকে লতিফ সিদ্দিকীকে নিয়ে ধানম-ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কড়া পুলিশ পাহারায় একটি গাড়িতে করে বের হয়ে যান। গাড়িটি সোজা ঢাকার সিএমএম আদালতের দিকে রওনা হয়। ধানম-ি থানার পরিদর্শক তদন্ত হেলাল উদ্দিন বলেন, আমি চেয়ারে বসে আছি। নানা ধরনের খবর শুনছি। একবার শুনছি লতিফ সিদ্দিকী তাদের থানায় আসছেন, আবার শুনছি নিউমার্কেট থানায়, আবার শুনছি মোহাম্মদপুর থানায় আবার সিএমএম আদালতে হাজির হচ্ছেন বলে নানা খবর বাতাসে উড়ছিল। দুপুর ১টা ৩৫ মিনিটের দিকে আচমকা লতিফ সিদ্দিকী তাদের থানায় হাজির হওয়ার খবর শুনে রীতিমতো অবাক। ওসি দ্রুত তাঁকে গাড়িসহ আনুষঙ্গিক সবকিছু ম্যানেজ করতে বলেন। সবকিছু ঠিকঠাক হওয়া মাত্রই লতিফ সিদ্দিকীকে নিয়ে ওসিসহ উর্ধতন কর্মকর্তারা ঢাকার সিএমএম আদালতের দিকে রওনা হন। তাঁদের থানায় হাজির হওয়ার আগাম তথ্য তাদের কাছে ছিল না। তারা সংবাদ মাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমেই ভাসা ভাসাভাবে খবরটি শুনছিলেন। আত্মসমর্পণ করার আগ পর্যন্ত তিনি কোথায় কি অবস্থায় ছিলেন সে সম্পর্কে তিনি পুরোপুরি অন্ধকারে। লতিফ সিদ্দিকী এ বিষয়ে কোন কিছুই স্বেচ্ছায় বলেননি। এমনকি আমাদেরও কোন কিছু জিজ্ঞাসাবাদ করার সুযোগ ছিল না। কারণ তাদের থানায় লতিফ সিদ্দিকীর বিষয়ে কোন মামলা বা জিডি বা কোন ওয়ারেন্ট ছিল না। যেকোন ব্যক্তিই আত্মসর্মপণ করলে তাদের উচিত তাকে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে সোপর্দ করা। তারা সে কাজটিই করেছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, গত রবিবার রাতে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামার পর থেকেই লতিফ সিদ্দিকী গোয়েন্দাদের নজরের মধ্যেই ছিলেন। লতিফ সিদ্দিকীকে বহনকারী গাড়িটি বিমানবন্দরের যেকোন গেট দিয়ে বেরুতে পারে। এমন তথ্যে প্রতিটি গেটেই গোয়েন্দা টিম রাখা ছিল। ভিআইপি গেট দিয়ে না বেরিয়ে লতিফ সিদ্দিকী বিমানবন্দরের কার্গোভিলেজ গেট দিয়ে বের হন। তাঁর গাড়িতে ও প্রাইভেটকারে পিছু নেয় একাধিক গোয়েন্দা দল। লতিফ সিদ্দিকীর গাড়িটি উত্তরার জসীম উদদীন রোডের মাথা থেকে খানিক সময়ের জন্য নিরুদ্দেশ হয়ে যায়। তবে গোয়েন্দাদের নজরদারির বাইরে ছিল না। লতিফ সিদ্দিকীর অবস্থান প্রচার হলে তাঁর উপর হামলাসহ প্রাণনাশের আশঙ্কা ছিল। এজন্য লতিফ সিদ্দিকীর অবস্থান সম্পর্কে আগাগোড়াই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তরফ থেকে কঠোর গোপনীয়তা রক্ষা করা হয়েছে। তবে লতিফ সিদ্দিকী বা তার পরিবারের তরফ থেকেই গোপনীয়তা রক্ষা করা হয়নি। লতিফ সিদ্দিকীদের তরফ থেকেই সব গোপনীয়তা ভেঙ্গে সংবাদ মাধ্যমকে খবর দিয়ে রীতিমতো নাটক সাজানো হয়েছে। নাটক সাজিয়ে শেষ পর্যন্ত ধানম-ি থানায় গিয়ে আত্মসমর্পণ করেন লতিফ সিদ্দিকী। পরে থানা থেকে তাকে ঢাকার সিএমএম আদালতে হাজির করা হয়। আদালতে যা হলো ॥ আমাদের কোর্ট রিপোর্টার জানান, দুপুর ২টা ২৪ মিনিটে লতিফ সিদ্দিকীকে ঢাকার সিএমএম আদালতের দোতলার ২৮ নম্বর কোর্টে নিয়ে হাজির করে ধানম-ি থানা পুলিশ। বেলা আড়াইটার দিকে ২৫ নং আদালতের বিচারক আতিকুর রহমান এজলাসে যান। সেখানেই হাজির করা হয় লতিফ সিদ্দিকীকে। শুনানিতে বিচারক লতিফ সিদ্দিকীর কাছে তাঁর পক্ষে কেউ আছেন কিনা জানতে চান। একইসঙ্গে বিচারক আসামির কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে থাকা লতিফ সিদ্দিকীর কাছে জানতে চান, তিনি কাউকে ওকালতনামা দিয়েছেন কিনা। তার পক্ষে কোন আইনজীবী আছেন কিনা তাও জানতে চান। এ সময় লতিফ সিদ্দিকী জানান, তিনি কাউকে ওকালতনামা দেননি। লতিফ সিদ্দিকী বলেন, ‘আমি শুনব বাদী কি বলতে চায়। এরপর আমি কিছু বলতে চাই।’ মামলার বাদী বিএনপিপন্থী আইনজীবী আবেদ রেজা আদালতকে বলেন, বিশ্বের দু’ শ’ কোটি মুসলমানের পক্ষে তিনি এই মামলা করেছেন। এরপর বিচারক বাদীকে থামিয়ে দিয়ে বলেন, যেহেতু আসামি কাউকে ওকালতনামা দেননি সেহেতু আর কথা বলার দরকার নেই। বলেই বিচারক আসামিকে জেলহাজতে পাঠানোর আদেশ দিয়ে এজলাস ত্যাগ করেন। এরপর আদালতে থাকা বাদীপক্ষের আইনজীবীরা আনন্দে চিৎকার করে ওঠেন। কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে তাঁকে আদালত কক্ষ থেকে সিএমএম-এর হাজতখানায় নিয়ে আসা হয়। এ সময় উপস্থিত আইনজীবী ও অন্যরা নানা সেøøাগান দিতে দিতে লতিফ সিদ্দিকীর উদ্দেশে জুতো প্রর্দশন করেন। লতিফ সিদ্দিকীকে বহনকারী গাড়ির জানালাতে জুতো ও ঝাড়ু নিক্ষেপ করেন ক্ষুব্ধ আইনজীবী ও জনতা। লতিফ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে মোট সাতটি মামলা দায়ের হয়েছে। এর মধ্যে পাঁচটি মামলায় তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করে আদালত। কারাগারে প্রবেশকালে নাটক ॥ বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে লতিফ সিদ্দিকীকে কড়া পুলিশ পাহারায় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় চারদিকে শত শত মানুষ ভিড় করে লতিফ সিদ্দিকীকে ধিক্কার জানায়। অনেকেই কারাগারের আশপাশের উঁচু ভবনের ছাদ থেকে লতিফ সিদ্দিকীর উদ্দেশে জুতো দেখায়। এদিকে লতিফ সিদ্দিকীর কারাগারে পাঠানো উপলক্ষে ওই এলাকায় অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতি এড়াতে বিপুলসংখ্যক পুলিশ, র‌্যাব ও কারারক্ষী মোতায়েন করা হয়। কারাগারের আশপাশের রাস্তা বন্ধ করে দেয়া হয়। কড়া নিরাপত্তার মধ্যদিয়ে লতিফ সিদ্দিকীকে পুলিশের প্রিজনভ্যান থেকে নামানো হয় কারাগারের সামনে। আগে থেকেই সেখানে প্রস্তুত ছিল কারা কর্তৃপক্ষ। কারা কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে কারারক্ষীরা নিয়মানুযায়ী কারাগারে প্রবেশের ছোট পকেট গেট খুলে দেয়। পকেট গেটের উচ্চতা আর নিয়মানুযায়ী কারাগারে প্রবেশকারীদের স্বাভাবিক কারণেই মাথা নিচু করে প্রবেশ করতে হয়। মাথা নিচু করে পকেট গেট দিয়ে কারাগারের ভেতরে প্রবেশ করতে আপত্তি করেন লতিফ সিদ্দিকী। কারা কর্তৃপক্ষ লতিফ সিদ্দিকীকে আইন ও নিয়মের কথা বলেন। তিনি কোন কথাই শুনতে নারাজ। লতিফ সিদ্দিকীর দাবি, কারাগারের মূল গেট খুলে দিতে হবে। তিনি মাথা নিচু করে নয়, সোজা হয়ে হেঁটে মাথা উঁচু করে কারাগারে প্রবেশ করবেন। কিন্তু কারা কর্তৃপক্ষের দাবি, পকেট গেট দিয়ে প্রবেশই নিয়ম। আর বিশেষ কোন কারণ ব্যতীত নিরাপত্তাজনিত কারণে সাধারণত মূল প্রবেশ গেট খোলা হয় না। কিন্তু লতিফ সিদ্দিকী তাতে নারাজ। এভাবেই প্রায় ১৫/১৬ মিনিট কেটে যায়। তিনি বলেন, আমি টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতী) আসনের ৫বারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য। গত ৩০ বছরে কোনদিনই পকেট গেট দিয়ে কারাগারে প্রবেশ ও বের হননি বলে তিনি দাবি করেন। পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তারাও লতিফ সিদ্দিকীকে বোঝানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু লতিফ সিদ্দিকীর এককথা বড় গেট না খুললে তিনি প্রবেশ করবেন না। এক পর্যায়ে তিনি কারাগারের সামনেই বসে পড়েন। এ সময় সাংবাদিকরা লতিফ সিদ্দিকীর কাছে নানা বিষয়ে জানতে চান। কিন্তু তিনি কোন প্রশ্নেরই জবাব দেননি। বিকেল পৌনে ৪টার দিকে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সুপার ফরমান আলীর নির্দেশে কারাগারের মূল ফটক খুলে দেয়া হয়। ফরমান আলীর সঙ্গে লতিফ সিদ্দিকীও মূল ফটক দিয়ে কারাগারে প্রবেশ করেন। এ ক্ষেত্রে নিয়মের কোন ব্যত্যয় হয়নি বলে দাবি করেছেন ফরমান আলী। জেল সুপারের দাবি, তিনি ইচ্ছে করলে কারাগারের মূল ফটক খুলে ভেতরে প্রবেশ করতে পারেন। তাঁর সঙ্গে লতিফ সিদ্দিকী প্রবেশ করেছেন। কারাগারে ॥ ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ জেল সুপার ফরমান আলী জনকণ্ঠকে জানান, লতিফ সিদ্দিকীকে ২৬ নম্বর সেলে রাখা হয়েছে। এটি ডিভিশন সেল। তিনি সংসদ সদস্য হিসেবে ডিভিশন পেয়েছেন। ডিভিশনপ্রাপ্ত বন্দী হিসেবে তিনি থাকার জন্য খাট, লেপ তোশক, একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকা, কাজের জন্য একজন কয়েদী, রেডিও টেলিভিশনসহ আনুষঙ্গিক সুবিধা পাবেন। বিএনপি-জামায়াতের সরকারবিরোধী রাজনীতি ভেস্তে ॥ গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, বুধবারের মধ্যে লতিফ সিদ্দিকীকে গ্রেফতার করা না হলে আগামী বৃহস্পতিবার হেফাজতে ইসলাম ও ইসলামী ঐক্যজোট সারাদেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালন করার আগাম ঘোষণা দিয়েছিল। এমন কর্মসূচীকে পুঁজি করে কড়া আন্দোলন গড়ে তোলার প্রস্তুতি নিচ্ছিল সরকারবিরোধীরা। বিশেষ করে হেফাজতে ইসলাম, ইসলামী ঐক্যজোটের ডাকা হরতালের পরামর্শও দিয়েছিল বিএনপি ও জামায়াত। তারা পরামর্শের পাশাপাশি মাঠে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। হরতালে বড় ধরনের নাশকতা চালিয়ে সরকারবিরোধী আন্দোলন দীর্ঘমেয়াদী কর্মসূচী ঘোষণার পাঁয়তারা করছিল। ঢাকায় বিশাল শোডাউন দেয়ার কথা ছিল বিএনপি-জামায়াতের। এমনকি লতিফ সিদ্দিকী ইস্যুতে সারাদেশ অচল করে দেয়ার প্রস্তুতিও ছিল বিএনপি-জামায়াতসহ উগ্র ইসলামী দলগুলোর। লতিফ সিদ্দিকীর এহেন পরিস্থিতির প্রেক্ষাপট ॥ চলতি বছরের ২৮ সেপ্টেম্বর আমেরিকার নিউ ইয়র্কে এক ঘরোয়া অনুষ্ঠানে লতিফ সিদ্দিকী হজ ও তাবলীগ জামাত নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করেন। এরপর থেকেই সারা দুনিয়ায় তোলপাড় শুরু হয়। বিশেষ করে দেশে তিনি টক অব দি কান্ট্রিতে পরিণত হন। তারই জেরধরে সারাদেশে তাঁর বিরুদ্ধে ডজনখানেক মামলা হয়। কয়েকটি মামলায় তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি হয়। নানা মহল থেকেই তাঁকে গ্রেফতারের দাবি ওঠে। জনরোষের মুখে এবং ধর্মের মতো স্পর্শকাতর বিষয়ে বিরূপ মন্তব্য করায় গত ১২ অক্টোবর লতিফ সিদ্দিকীকে মন্ত্রিসভা ও দলের সভাপতিম-লীর সদস্যপদ থেকে বহিষ্কার করা হয়। এরপর গত ২৫ অক্টোবর লতিফ সিদ্দিকীকে দলের প্রাথমিক সদস্যপদ থেকেও চূড়ান্তভাবে বহিষ্কার করা হয়। গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, রবিবার রাত ৮টা ৪০ মিনিটে এয়ার ইন্ডিয়ার একটি ফ্লাইটযোগে হযরত শাহজাহাল বিমানবন্দরে পৌঁছেন লতিফ সিদ্দিকী। ইমিগ্রেশন শেষে তিনি বিমাবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জের চামেলীতে বেশ কিছুক্ষণ অবস্থান করেন। এরপর তিনি বাইরে অপেক্ষমাণ একটি গাড়িতে করে বিমানবন্দরের ভিআইপি গেট পরিহার করে কার্গো ভিলেজের দিক দিয়ে সোজা উত্তরার দিকে যান। এরপর তিনি আত্মগোপনে ছিলেন। মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত দিনব্যাপী লতিফ সিদ্দিকীর আত্মসমর্পণ, গ্রেফতারসহ নানা বিষয় ছিল টক অব দি কান্ট্রি। হেফাজতের ডাকা হরতাল, লতিফ সিদ্দিকীর প্রতি আওয়ামী লীগের সুদৃষ্টি থাকায় বিএনপির অভিযোগ, এরশাদের নিন্দাসহ নানা বিষয়ই ব্যাপক আলোচনা সমালোচনার জন্ম দিয়েছিল। কখনও তিনি থানায়, কখনও আদালতে আবার কখনও উচ্চ আদালতে হাজির হচ্ছেন বলে গুঞ্জন ছিল। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সোমবার বলেছিলেন, লতিফ সিদ্দিকী এমপি থাকায় তাঁকে গ্রেফতার করতে জাতীয় সংসদের স্পীকারের অনুমতি লাগবে। অবশ্য সোমবার বিকেলেই স্পীকার বলেছেন, লতিফ সিদ্দিকীকে গ্রেফতার করতে তাঁর অনুমতি লাগবে না। কেন স্পীকারের অনুমতি লাগবে না তারও আইনী ব্যাখ্যা দিয়েছেন স্পীকার। এদিকে মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, লতিফ সিদ্দিকী আত্মসমর্পণ করায় এখন আর গ্রেফতারের আইনী জটিলতা নেই। তিনি আরও বলেন, যেহেতু দাবি পূরণ হয়েছে তাই আগামী বৃহস্পতিবার হরতাল হবে না বলে আশা করছি। প্রসঙ্গত, বুধবারের মধ্যে লতিফ সিদ্দিকী গ্রেফতার না হলে আগামী বৃহস্পতিবার সারাদেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতালের ডাক দিয়েছিল হেফাজতে ইসলাম ও ইসলামী ঐক্যজোটসহ সমমনা ইসলামী দলগুলো। যদিও মঙ্গলবার লতিফ সিদ্দিকীকে গ্রেফতারের দাবিতে হরতাল পালন করেছে ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (এনডিএফ)।
×