ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আবুল হাসান ‘যে তুমি হরণ করো’

প্রকাশিত: ০৪:৫৪, ২৬ নভেম্বর ২০১৪

আবুল হাসান ‘যে তুমি হরণ করো’

তাঁর খ্যাতি কবি হিসেবে। অসম্ভব জনপ্রিয় কবি তিনি। তাঁর নাম আবুল হাসান। ১৯৪৭ সালের ৪ আগস্ট তৎকালীন ফরিদপুর জেলার টুঙ্গিপাড়ার বর্নি গ্রামে। ডাকনাম ‘টুকু’। ১৯৫৩ সালে বর্নি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, তারপর ‘ছিল্না-গুয়াদানা’ উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়ালেখা করেন। বাবার চাকরির সুবাদে আরমানিটোলা সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণীতে ভর্তি হন। স্কুল জীবন থেকেই আবুল হাসান নিয়মিত কবিতা লিখতে শুরু করেন। ১৯৬৫ সালে আবুল হাসান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজী বিভাগে ভর্তি হলেও প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা শেষ করেননি। প্রচ- আবেগী মানুষ হিসেবে তিনি পরিচিতি লাভ করেন বন্ধু মহলে। ১৯৬৯ সালের প্রথম দিকে তিনি দৈনিক ‘ইত্তেফাক’ পত্রিকায় মাত্র তিন মাসের জন্য চাকরি করেন। কোন পত্রিকাতেই তিনি একটানা বেশি দিন কাজ করেননি। স্বভাবে ছিলেন পুরোদস্তুর বোহেমিয়ান। ১৯৭২ সালের প্রথম দিকে আবুল হাসান ‘গণবাংলা’ পত্রিকায় যোগ দেন। ‘গণবাংলা’য় তখন সাহিত্য বিভাগের সম্পাদক ছিলেন কবি শহীদ কাদরী। সেখান থেকে তিনি যোগ দেন আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী সম্পাদিত দৈনিক ‘জনপদ’ পত্রিকায়। ‘জনপদ’ পত্রিকায় তিনি ১৯৭৪ সালের জুন মাস পর্যন্ত সাহিত্য সম্পাদনা করেন। ‘জনপদ’ পত্রিকায় আবুল হাসানের অনেক রচনা প্রকাশিত হয়েছেÑএর মধ্যে আছে কবিতা, প্রবন্ধ এবং উপ-সম্পাদকীয় নিবন্ধ। এই পত্রিকায় তিনি ‘আপন ছায়া’ এবং ‘খোলাশব্দে কেনাকাটা’ শীর্ষক দুটি উপ-সম্পাদকীয় কলাম লিখতেন। এখান থেকে গণকণ্ঠে যোগ দেন। ‘ফসলবিলাসী হাওয়ার জন্য কিছু ধান চাই’ শীর্ষক একটি উপ-সম্পাদকীয়তে তিনি লেখক হিসেবে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। ১৯৭০ সালে ‘শিকারী লোকটা’ কবিতার জন্য তিনি সমগ্র এশিয়াভিত্তিক এক প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অর্জন করে বিশেষ পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৭২ সালের ডিসেম্বর মাসে আবুল হাসানের প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘রাজা যায় রাজা আসে’ প্রকাশিত হয়। ‘রাজা যায় রাজা আসে’ কাব্যগ্রন্থটি প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই আবুল হাসান কবি হিসেবে তাঁর আসন বাংলা কবিতায় স্থায়ী করে নেন। এরপর অসুস্থতার বিরুদ্ধে নিয়ত সংগ্রামী আবুল হাসানের দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘যে তুমি হরণ করো’ হাসপাতালের বেডে শুয়ে আবুল হাসান তাঁর তৃতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘পৃথক পালঙ্ক’র পাণ্ডুলিপি তৈরি থেকে শুরু করে করেছেন সন্ধানী প্রকাশনী থেকে ‘পৃথক পালঙ্ক’ প্রকাশিত হয় ১৯৭৫ সালের অক্টোবর মাসে। ছোটবেলা থেকে আবুল হাসান বাতজ্বরে ভুগছিলেন। যৌবনে হৃদরোগে আক্রান্ত হন। তাঁর হৃৎপিণ্ড সম্প্রসারণজনিত ব্যাধি প্রথম ধরা পড়ে ১৯৭০ সালে। ওই সময় তাঁকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু হাসপাতাল থেকে মুক্তিলাভের পর অনিয়ন্ত্রিত জীবন, অনিয়মিত খাওয়া, অমানুষিক পরিশ্রম এবং রাত জাগার অভ্যাস আবুল হাসানকে দ্রুত হৃদরোগে জর্জরিত করে তোলে। অসুস্থ অবস্থায় তিনি পুনরায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন ১৯৭১ সালের মার্চ মাসের প্রথম দিকে। ১৯৭৪ সালের অক্টোবর মাসে তিনি পুনরায় মারাত্মকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন। অবস্থার অবনতি হলে কয়েক বন্ধুর আন্তরিক প্রচেষ্টায় তাঁকে চিকিৎসার জন্য পূর্ব জার্মানি পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়। প্রাথমিক চিকিৎসার পর আবুল হাসান খানিকটা সুস্থ হয়ে হয়ে ওঠেন এবং হাসপাতালের বেডে শুয়েই তিনি আবার কবিতা লিখতে শুরু করেন। জার্মানিতে থাকার সময় তাঁর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে শিল্পী গ্যাব্রিয়েলার সঙ্গে। ১৯৭৫ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকা। চাকরির চেষ্টা করতে থাকেন। অনেকেই তাঁকে আশ্বাস দেন কিন্তু শেষ পর্যন্ত কেউই তা রক্ষা করেননি। আবুল হাসানের অসুস্থতার কথা বিবেচনা করেই কেউ তাঁকে চাকরি দেননি। একদিকে অসুস্থতা, অন্যদিকে বেকার জীবন মাথার ওপর ভাই-বোনদের পড়ালেখার খরচ যোগানোর দায়িত্বÑ সব কিছু মিলিয়ে আবুল হাসান তখন এক অস্থির জীবনযাপন করেছেন। এ সময় তিনি আবারও অসুস্থ হয়ে পিজি হাসপাতালে ভর্তি হন ১৯৭৫ সালের ৪ নবেম্বর। ১৯৭৫ সালের ২৬ নবেম্বর মাত্র আটাশ বছর বয়সে আবুল হাসান মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর পর আবুল হাসান ১৯৭৫ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার এবং ১৯৮২ সালে একুশে পদক লাভ করেন। তাঁর মৃত্যুর পর প্রকাশিত হয় ‘আবুল হাসান গল্প সমগ্র’, কাব্য নাটক ‘ওরা কয়েকজন’, ‘আবুল হাসানের অগ্রন্থিত কবিতা’, ‘আবুল হাসান সমগ্র।’
×