ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

অধিকাংশ কোম্পানিতে দক্ষ ব্যবস্থাপনা পর্ষদ নেই

প্রকাশিত: ০৫:৩৩, ২৫ নভেম্বর ২০১৪

অধিকাংশ কোম্পানিতে দক্ষ ব্যবস্থাপনা পর্ষদ নেই

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ দেশের অধিকাংশ কোম্পানিতে পেশাগত ও দক্ষ ব্যবস্থাপনা পর্ষদ নেই বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. এ বি মির্জা আজিজুল ইসলাম। সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবে অনলাইন দি রিপোর্ট টুয়েন্টিফোরডটকম ও এ্যাপোলো ইস্পাত আয়োজিত ‘বর্তমান প্রেক্ষাপটে শেয়ারবাজারের সম্ভাবনা’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এ কথা বলেন। বৈঠকে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, জিডিপির হার অনুসারে আমাদের পুঁজিবাজারের মার্কেট ক্যাপিটাল হচ্ছে সর্বনিম্ন। বিনিয়োগ ক্ষেত্রে ব্যাংক খাত থেকে যে পরিমাণ ঋণ যাচ্ছে, তার তুলনায় পুঁজিবাজার থেকে যে অর্থ যাচ্ছে তা একেবারেই নগণ্য। তিনি আরও বলেন, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের বাচবিচার করেই বিনিয়োগ করতে হবে। মনে রাখতে হবে এটা আপনার টাকা। আপনিই এখানে বিনিয়োগ করছেন। এর প্রয়োজনীয় বিশ্লেষণ আপনাকে করতে হবে। দীর্ঘ মেয়াদে বিশ্লেষণ করতে পারলে অবশ্যই এখান থেকে লাভবান হওয়া যাবে। মির্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, সরকারী কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হলে পরিচালকরা যে গাড়ি সুবিধা পান, বোর্ড মিটিং বাবদ যে অর্থ পান তাতে কিছুটা অসুবিধা সৃষ্টি হবে। এই অসুবিধা দূর করার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব রয়েছে। সরকারের এই রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব কবে দূর হবে তা বলা দুরূহ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, কিছু কোম্পানি পুঁজিবাজার থেকে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে টাকা তুলছেন। এর কিছুদিন পরই আবার বোনাস শেয়ার ঘোষণা করছেন। এতে শেয়ারটির সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এ বিষয়টি বিবেচনা করে বোনাস শেয়ারের ওপর একটি নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা উচিত। ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক স্বপন কুমার বালা বলেন, বাজারে কিছু ট্রেজারি বিল আছে যেগুলোর কোন লেনদেন হয় না। মিউচুয়াল ফান্ডগুলোর অবস্থাও ভাল না। ফান্ড ম্যানেজমেন্টের কারণেই মিউচুয়াল ফান্ডের বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ফান্ড ম্যানেজারদের কঠোর নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আনা দরকার। ডিএসইর পরিচালক ও সাবেক সভাপতি শাকিল রিজভী বলেন, নিরীক্ষা প্রতিবেদনের ওপরই সব কিছু নির্ভর করে। এটি গুণগত মানসম্পন্ন না হলে সঠিক দাম পাওয়া যাবে না। বাজারে কোম্পানির নিরীক্ষা প্রতিবেদন ভাল, কোম্পানির প্রবৃদ্ধি ভাল সেই বাজারকেই ভাল বাজার বলা যায়। দেশের অর্থনীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে যে বাজার বাড়ে সেই বাজার স্থিতিশীল হয়। অন্যথায় বাজার স্থিতিশীল হয় না। কোম্পানির প্রবৃদ্ধি কোম্পানির লভ্যাংশ, শেয়ারপ্রতি আয়, নেট সম্পদমূল্য দেখে শেয়ার কেনা উচিত। ডিএসইর সাবেক সভাপতি আহসানুল ইসলাম টিটু বলেন, আগে ধারণা ছিল আইপিও আসলে স্টক এক্সচেঞ্জের সদস্যরা কিছু লুটেপুটে খাবে। এখন পরিস্থিতি পরিবর্তন হয়েছে। এখন বাজারকে এগিয়ে নিতে হলে আইপিও অনুমোদনের ক্ষেত্রে আগে কোম্পানিকে তালিকাভুক্ত সব শর্ত পূরণ করতে হবে। তারপর নিয়ন্ত্রক সংস্থা সংশ্লিষ্ট কোম্পানির আইপিও অনুমোদন দেবে। এটি করা হলেই আইপিও নিয়ে যে কথা হচ্ছে তা বন্ধ করা সম্ভব হবে। পাশাপাশি এসএমই কোম্পানি, গ্রিন ফিন্ড কোম্পানি কিভাবে পুঁজিবাজার থেকে টাকা তুলতে পারে তার একটা নীতিমালা করতে হবে। সিএসই ব্যবস্থাপনা পরিচালক অলিউর মারুফ মতিন বলেন, ফোর্সসেল বলে কিছু নেই। ফোর্সসেল বন্ধের কারণেই বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তিনি বলেন, ডিমিউচুয়ালাইজড স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালনা পর্ষদকেও বাজার সম্পর্কে বিস্তারিত জ্ঞান রাখতে হবে, নইলে প্রতিষ্ঠানটিকে লাভজনক করা কঠিন হয়ে পড়বে। আইডিএলসি ইনভেস্টমেন্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বিএমবিএর সহসভাপতি মোঃ মনিরুজ্জামান বলেন, আইপিওতে আসার আগে কোম্পানিগুলোর অস্বাভাবিক মুনাফা বাড়ে। এটি খতিয়ে দেখা উচিত। তিনি আরও বলেন, সম্প্রতি বেশ কিছু কোম্পানির অস্বাভাবিকভাবে দর বাড়ছে। এগুলো ইনসাইডার ট্রেডিং বা কৃত্রিম কিনা সেটি খুঁজে বের করা জরুরী।
×