ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

রামরুর সংবাদ সম্মেলনে তথ্য

দারিদ্র্যের কারণে বিশেষ কিছু এলাকার লোক অবৈধ পথে পাড়ি দিচ্ছে

প্রকাশিত: ০৫:১৭, ২৩ নভেম্বর ২০১৪

দারিদ্র্যের কারণে বিশেষ কিছু এলাকার লোক অবৈধ পথে পাড়ি দিচ্ছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দারিদ্র্য, জলবায়ু পরির্বতন ও অভিবাসনে সামাজিক যোগাযোগের অনুপস্থিতির কারণে বিশেষ কিছু এলাকার লোকেরা সমুদ্রপথে অবৈধভাবে অভিবাসী হওয়ার চেষ্টা করছে। শনিবার বিকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে গবেষণা প্রতিষ্ঠান রিফ্যুজি এ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্ট রিসোর্স ইউনিট (রামরু) এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানায়। এতে লিখিত বক্তব্য রাখেন রামরুর চেয়ার ড. তাসমি সিদ্দিকী। তিনি বলেন, অক্টোবর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত সমুদ্র শান্ত থাকায় এ সময় সমুদ্রপথে অবৈধ অভিবাসন ও পাচারের হার বেড়ে যায়। ড. তাসমি সিদ্দিকী বলেন, যশোর, খুলনা, রংপুর, দিনাজপুর, রাজশাহী, কুড়িগ্রাম, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ ও সাতক্ষীরা অঞ্চলের লোকেরা অবৈধপথে অভিবাসী হওয়ার চেষ্টা করছে। ২০১২-১৩ সালে নরসিংদী এলাকা অবৈধপথে অভিবাসী হওয়ার চেষ্টাকারীদের ঘাঁটি হিসেবে চিহ্নিত হলেও এখন তা কমে এসেছে। তবে তাদের কেউ কেউ এখন দালালচক্রের সঙ্গে জড়িত হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন রামরুর চেয়ার। তিনি জানান, ইউএনএইচসিআর’র রিপোর্ট অনুযায়ী ২০১২ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৮৭ হাজার লোক সমুদ্রপথে অবৈধপথে থাইল্যান্ড হয়ে মালয়েশিয়ার পথে পাড়ি দিয়েছে। তবে গত বছর এই সংখ্যা ছিল ৫৩ হাজার, যা আগের বছরের তুলনায় শতকরা ৬১ ভাগ বেশি। রামরুর চেয়ার বলেন, প্রতিবছর কত সংখ্যক লোক সমুদ্রপথে অবৈধভাবে অভিবাসী হওয়ার চেষ্টা করে তার সঠিক পরিসংখ্যান কারও জানা নেই। তবে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী গত এক বছরে (জুলাই ২০১৩- জুন ২০১৪) ১৫-২০ হাজার বাংলাদেশী সমুদ্রপথে অবৈধভাবে অভিবাসী হয়। ড. তাসমি সিদ্দিকী বলেন, সিরাজগঞ্জ জেলায় গবেষণা চালিয়ে তারা দেখতে পান ৪ হাজারেরও বেশি তরুণ অবৈধপথে মালেশিয়ায় অভিবাসী হওয়ার চেষ্টা করে। যাদের মধ্যে চার শতাধিক এখনও নিখোঁজ রয়েছে। তিনি বলেন, সমুদ্রপথে অবৈধ অভিবাসন প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত রয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধীচক্র, আন্দামান ও থাইল্যান্ড সীমান্তের জলদস্যুরা এবং মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডে কম বেতনে শ্রমিক নিয়োগে আগ্রহী প্রতিষ্ঠান। এ ধরনের ভয়াবহতার হাত থেকে তরুণ প্রজন্মকে রক্ষা করতে সমুদ্রপথে অবৈধ অভিবাসন চেষ্টা বন্ধে থাই সরকারের প্রতি আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টি, বাংলাদেশ-মালয়েশিয়ার জি টু জি কার্যক্রম পুনর্মূল্যায়ন ও বৈধ পথে অভিবাসনের সুযোগ ফিরিয়ে আনা, অভিবাসন আইন ২০১৩-এর অধীনে সমুদ্রপথে অবৈধ অভিবাসনের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা করা এবং সমুদ্রপথে অবৈধ অভিবাসনের কুফল সবার সামনে তুলে ধরার ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সরকারের প্রতি রামরুর পক্ষ থেকে দাবি জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সমুদ্রপথে অবৈধ অভিবাসী হতে গিয়ে গত ১৯ অক্টোবর থাই পুলিশের হাতে আটক হয় ১৭১ জন বাংলাদেশী। মালয়েশিয়ায় অভিবাসী হতে গিয়ে বহু বাংলাদেশী থাইল্যান্ডের জঙ্গলে মানবেতর জীবনযাপন করছে। সমুদ্রপথে অবৈধ অভিবাসী হতে গিয়ে নিখোঁজ হওয়া পরিবারের কয়েকজন সদস্য এ সময় তাদের পরিবারের সদস্য হারানোর কথা তুলে ধরেন। তাদের মধ্যে আবুল হাশেম জানান, তাঁর ভাই জব্বার আলী ৮ মাস আগে চট্টগ্রাম যায়। সেখান থেকে সে নিখোঁজ হয়। ৩০ দিন পর সে ফোন করে জানায়, মালয়েশিয়ায় যাওয়ার জন্য সে সমুদ্রেপথে রওনা হয়েছে। এখন ২ লাখ ২০ হাজার টাকা দিলে তাকে মালয়েশিয়ায় পাঠানো হবে। না হয় তার ওপর অত্যাচার করা হচ্ছে। পরে এক দালালের মাধ্যমে টাকা দেয়া হয়। এরপর থেকে তার ভাইয়ের কোন খোঁজ পাচ্ছেন তাঁরা, আর ওই দালালেরও কোন খোঁজ নেই তাঁদের কাছে। এমন আরেক ভুক্তভোগী ক্বারী আমিনুর রহমান। তিনি বলেন, ছেলে তাঁর সঙ্গে কাজে যেত। হঠাৎ একদিন সে কাজে না গিয়ে হারিয়ে যায়। পরে ফোন করে জানায়, মালয়েশিয়ায় যেতে গিয়ে সে আটক আছে।
×