ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

হারিয়ে যাচ্ছে বাগেরহাটের খাল-নদী

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ২২ নভেম্বর ২০১৪

হারিয়ে যাচ্ছে বাগেরহাটের খাল-নদী

স্টাফ রিপোর্টার, বাগেরহাট ॥ বাগেরহাটে অধিকাংশ নদী-খাল ভরাট ও দখলদারদের কবলে হারিয়ে যাচ্ছে। জেলার রেকর্ডীয় তিনশতাধিক খালের মধ্যে এখন প্রায় একশ’ খাল অদৃশ্য। মাছ চাষের নামে প্রভাবশালীরা বাঁধ দেয়ায় বাকিগুলোও মরতে বসেছে। ফলে মারাত্মক ব্যাহত হচ্ছে কৃষি কাজ ও স্বাভাবিক নৌ-যোগাযোগ। জলাবদ্ধতা ও পরিবেশ বিপর্যয় ক্রমেই বেড়ে চলেছে। রামপাল, চিতলমারী, কচুয়া, ফকিরহাট, মোল্লাহাট ও সদর উপজেলার এ অবস্থা মারত্মকরূপ নিয়েছে। স্থানীয় লোকজন জানান, গত ৩০ বছরে এ অঞ্চলের নদী ও খাল খনন না করার ফলে অধিকাংশ ভরাট হয়ে গেছে। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে সদর বাজারের হক ক্যানেলসহ বেশকিছু স্থানে সীমানা সংলগ্ন নদী ও খালের পাশে বসবাসকারী প্রভাবশালী লোকজন খাল দখল করে অবৈধ স্থাপনা গড়ে তুলেছে। কতিপয় অসাধু ব্যক্তি খালের মধ্যে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করছে। কেউ কেউ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের নামে খাল-নদীর ভরাটি জমি দখল করছে। ফলে জলাবদ্ধতা ও পরিবেশ বিপর্যয়ের পাশাপাশি নৌ-যোগাযোগ ও চাষাবাদ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ফসলের মাঠে পানি ওঠা-নামার কাজ দারুণভাবে ব্যাহত হচ্ছে। সামান্য বৃষ্টিতেই সৃষ্টি হচ্ছে জলাবদ্ধতা। প্রতিবছর বর্ষাকালে শত শত পুকুর ও চিংড়িঘের প্লাবিত হয়ে অসংখ্য দরিদ্র চাষী সর্বস্বান্ত হচ্ছে। রামপাল, দাউদখালী নদী, চিত্রা, মধুমতি নদীর অস্তিত্ব এখন নেই বললেই চলে। অথচ কয়েক বছর আগেও এসব নদী দিয়ে বড় বড় লঞ্চ, স্টিমার, কার্গো চলাচল করত। চিতলমারী উপজেলার বড়বারিয়া, কলাতলা, হিজলা, শিবপুর, চিতলমারী সদর, চরবানিয়ারী, সন্তোষপুরসহ মোট ৭টি ইউনিয়নে তিনটি প্রধান নদী ও ৫০টি খাল এবং শতাধিক শাখা খাল এখন নাব্যতা সঙ্কটে। এক সময়ের খরস্রোতা বলেশ্বর, মধুমতি ও চিত্রা নদী এখন কালের সাক্ষী মাত্র। হক ক্যানেল, পাটনিবাড়ি, পেতনীমারী, নারাণখালী, বাঁশতলী, খাগড়াবুনিয়া, শরৎখালীসহ প্রায় অর্ধশত খাল ভরাট ও দখলের কারণে এখন নাব্যতা সঙ্কটে । বর্তমানে এসব খালে জোয়ার-ভাটার পানি ওঠা-নামা না করার কারণে সেচ মৌসুমে বৃষ্টির পানিই চাষীদের একমাত্র ভরসা। একাধিক চাষী জানান, রায়গ্রাম, খিলিগাতীসহ এলাকার বেশ কিছু খালের মাঝে প্রভাবশালীরা বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করছে। তাদের কাছে এলাকার চাষীরা অসহায় হয়ে পড়েছেন। বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মুঃ শুকুর আলী এ বিষয়ে বলেন, ইতোমধ্যে প্রতিটি উপজেলার নির্বাহী অফিসারকে যেকোন অবস্থাতে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে নদী-খালের স্বাভাবিক প্রবাহ বজায় রাখার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তাছাড়া শীঘ্রই ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হবে। তিনি ভরাট খাল খননে প্রকল্প গ্রহণের কথাও উল্লেখ করেন।
×