ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

অভিযানে তেমন সাফল্য নেই ॥ মন্ত্রী বললেন ‘যে কোন সময় যে কোন স্থানে অভিযান চলবে’

এবার অবৈধ গাড়ি ও চালক পাকড়াওয়ে খোদ মন্ত্রী!

প্রকাশিত: ০৪:২৪, ১৩ নভেম্বর ২০১৪

এবার অবৈধ গাড়ি ও চালক পাকড়াওয়ে খোদ মন্ত্রী!

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ফিটনেসবিহীন গাড়ি ও লাইসেন্সবিহীন চালকদের পাকড়াওয়ে এবার সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের নিজেই মাঠে নেমেছেন। বুধবার ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কের চান্দনা চৌরাস্তায় অভিযানে অংশ নেন তিনি। বাসচালকদের বিআরটিসির লাইসেন্সে নিজেই ত্রুটি ধরলেন মন্ত্রী। অতঃপর চালকের বিরুদ্ধে জরিমানা। মন্ত্রীর উপস্থিতিতে অভিযানের খবর দ্রুত ছড়িয়ে যায় চারদিকে। কমে যায় গণপরিবহন চলাচল। বিশেষ করে দূরপাল্লার বাস খুব একটা চলেনি। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে নসিমন, করিমন, ভটভটি চলাচল একেবারেই ছিল না। অবশ্য অভিযান শেষ হওয়ার পর পরই সবকিছু ফের স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে! বিআরটিএ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রাস্তায় চলা বেশিরভাগ যানবাহনই ত্রুটিযুক্ত। বেশিরভাগ যানবাহনের ফিটনেস নেই। অথবা মেয়াদোত্তীর্ণ। ভাঙ্গা-চোরা, লক্কড়-ঝক্কড় মার্কা গাড়ি চলছে দিনের পর দিন। চালকদের অবৈধ লাইসেন্স বা লাইসেন্স নেই এমন সংখ্যাও কম নয়। একেবারেই রুট পারমিট নেই এমন যানবাহনের সংখ্যাও অসংখ্য। আইন না মেনে গাড়ি চালান বেশিরভাগ চালক। এসব কারণেই সড়ক দুর্ঘটনা কমানো যাচ্ছে না। দক্ষিণ এশিয়াসহ গোটা বিশ্বের মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনার দিক থেকে বাংলাদেশ এখন প্রথম অবস্থানে। এ পরিস্থিতিতে সারাদেশে অবৈধ পরিবহন ও চালকদের বিরুদ্ধে অভিযানে নামে সড়ক পরিবহন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তবে তিন দিনের অভিযানে উল্লেখ করার মতো সফলতা নেই। বলতে গেলে রাজধানীসহ গোটা দেশেই নামমাত্র অভিযান পরিচালনা হচ্ছে। বিআরটিএর সমন্বয়হীন অভিযানের কারণে অবৈধ বেশিরভাগ যানই এখন গা ঢাকা দিয়েছে। ফলে উদ্দেশ্য খুব একটা সফল হচ্ছে না। মোবাইল কোর্টের ভয়ে পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা গণপরিবহন চালানো বন্ধ করে দিয়েছে। এতে জনদুর্ভোগ চরমে উঠেছে। বুধবার রাজধানীতে অন্যদিনের তুলনায় গণপরিবহন চলাচল কম ছিল। লক্কড়-ঝক্কড় কিছু গাড়ি রাস্তায় চললেও মোবাইল কোর্ট কম হওয়ায় সেগুলো ধরা পড়েনি। নগরীতে মাত্র দুটি মোবাইল কোর্ট অভিযান চালায়। বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) তথ্য মতে, রাজধানীতে তিন দিনের মোবাইল কোর্ট পরিচালনায় মাত্র তেরোটি গাড়ি ডাম্পিং করা হয়েছে। জরিমানা আদায় করা হয়েছে ২ লাখ ২৭ হাজার টাকা। মামলা হয়েছে ২২৩। এতে সন্তুষ্ট হওয়ার কোন সুযোগ নেই বলে মনে করেন পরিবহন সংশ্লিষ্টদের অনেকে। শুধুমাত্র দিনের বেলায় অভিযান হওয়ায় রাতে রাজধানীজুড়ে চলা ট্রাক, কাভার্ড ভ্যানসহ পণ্যবাহী গাড়িগুলো অবাধে চলার সুযোগ পাচ্ছে। সরকারী হিসেবে শুধুমাত্র রাজধানীতেই এক লাখ সনদহীন যানবাহন চলছে। দ্বিতীয় দিনের অভিযানে ছয়টি গাড়ি ডাম্পিং, ৯২ হাজার ৮০০ টাকা জরিমানা ও ৮৬ মামলা হয়। অথচ সারাদেশে প্রায় সোয়া তিন লাখ অবৈধ যানবাহন রয়েছে। সাত লাখের বেশি অবৈধ চালক গাড়ি চালাচ্ছেন নিয়মিত। এসব যানবাহন ও চালকদের পাকড়াও করতে কতোগুলো মোবাইল কোর্ট হয়েছে তা কেউ জানেন না। অভিযান শুরুর দিন ৭৭ মামলা এবং ৯৫ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। এছাড়াও একজন গাড়িচালককে পাঁচ দিনের জেল, একটি গাড়ি ধ্বংস ও দুইটি ডাম্পিংয়ে পাঠানো হয়েছে। গাজীপুরে অভিযান শেষে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, যতোই বাধা আসুক অবৈধ যানবাহনের বিরুদ্ধে অভিযান চলবে। যে কোন সময় যে কোন স্থানে অভিযানে চালানো হতে পারে। তিনি বলেন, অভিযান একটি চলমান প্রক্রিয়া। মাঝে মাঝে ঝটিকা অভিযান পরিচালনা করা হবে। মহাসড়কে চলা অযান্ত্রিক পরিবহন সড়ক দুর্ঘটনার জন্য দায়ী এ কথা উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, মহাসড়কে চলা নসিমন-করিমনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। অভিযানের কারণে যাত্রীদের সাময়িক অসুবিধা হলেও ফল পেতে সময় লাগবে। ফল যা আসবে তা হবে সবার জন্য ইতিবাচক। সড়ক দুর্ঘটনা কমবে। সড়ক-মহাসড়কে ফিরে আসবে শৃঙ্খলা। এর আগে বিআরটিসির একটি দোতলা বাস আটকান মন্ত্রী। ঢাকা মেট্রো-ব-১১-৫৭৩৯ নম্বরের বাসটির চালকের লাইসেন্সে ত্রুটি পাওয়া যায়। পরে মন্ত্রীর নির্দেশে চালকের বিরুদ্ধে জরিমানা করে ভ্রাম্যমাণ আদালত। সকাল থেকে রাজধানীর বিভিন্ন রাস্তায় গণপরিবহন কম চলতে দেখা যায়। চালকরা জানিয়েছেন, আদালতের ভয়ে সব গাড়ি রাস্তায় নামছে না। এ ব্যাপারে মালিকদের অঘোষিত নির্দেশনা রয়েছে। যদিও অভিযানে সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন পরিবহন মালিক নেতৃবৃন্দ। শেষ পর্যন্ত তারা কথা রাখেননি। উল্টো গাড়ি চালানো বন্ধ করে দিয়েছেন। রাস্তা থেকে হঠাৎ করে উধাও হয়ে গেছে গণপরিবহন। ফলে রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে মানুষের জটলা দেখা গেছে। বিশেষ করে সকালে ও বিকেলে এ চিত্র ছিল লক্ষণীয়। একটি বাস আসা মাত্রই রীতিমতো প্রতিযোগিতা। বাম্পারে ঝুলে কিংবা ছাদে ঝুঁকি নিয়ে যাত্রীদের চলাচল করতে দেখা গেছে। মোবাইল কোর্টে প্রাইভেটকার তেমন একটা আটকাতে দেখা যায়নি। বাস, অটোরিক্সা, ট্যাক্সিসহ পণ্যবাহীগুলোই সবচেয়ে বেশি আটকানো হয় মোবাইল কোর্টে। রাজধানীর কলাবাগান এলাকায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেন বিআরটিএ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাসিরউল্লাহ খান। তিনি জনকণ্ঠকে জানান, দিনভর অভিযানে ১৯ মামলা, ১৮ হাজার ৭০০ টাকা জরিমানা ও একটি গাড়ি ডাম্পিংয়ে পাঠানো হয়েছে। অপর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দেবাশীষ নাগ জানান, অভিযানে চালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স পরীক্ষাসহ গাড়ির বৈধতা আছে কিনা তা দেখা হয়। ফিটনেস সার্টিফিকেটও দেখা হয়। এছাড়া ট্রাফিক আইন ভঙ্গ করলেও চালকদের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্ট ব্যবস্থা নিতে পারে। তিনি জানান, দিনভর অভিযানে ২৬ যানবাহনের বিরুদ্ধে মামলা, সাড়ে ১১ হাজার টাকা জরিমানা ও ৯ অবৈধ কাগজ জব্দ করা হয়।
×