ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

শ্রমিক নেতার বাড়িতে হামলা, সাংবাদিকদের মারধর, ক্যামেরায় আগুন

রংপুরে যুবলীগ নেতাকে পিটিয়ে হত্যার পর ব্যাপক সহিংসতা

প্রকাশিত: ০৫:০৭, ১২ নভেম্বর ২০১৪

রংপুরে যুবলীগ নেতাকে পিটিয়ে হত্যার পর ব্যাপক সহিংসতা

স্টাফ রিপোর্টার, রংপুর ॥ রংপুর সিটি কর্পোরেশনের ৩০ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা মোটর মালিক সমিতির টোল আদায়কারী (চেইন মাস্টার) ইমরান হোসেন (৩২) সোমবার মধ্যরাতে দুষ্কৃতকারীদের হাতে নির্মমভাবে খুন হয়েছেন। এ ঘটনার জন্য মোটর মালিক সমিতির লোকজন জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মজিদকে দায়ী করে এবং ঘটনার প্রতিবাদে মঙ্গলবার ভোরে তারা মোটর ইউনিয়নের সাতমাথা কার্যালয় ও তাজহাট অবস্থিত মজিদ ও তার বড় ভাই সাবেক শ্রমিক নেতা মরহুম আবুল কালাম আজাদের বাড়ি-ঘরের ঘুমন্ত লোকজনের ওপর হামলা চালায়। এতে উভয়পক্ষের কমপক্ষে ৩০ জন আহত হয়। মালিক পক্ষের লোকজন হামলা চালিয়ে চলে যাবার পরই শ্রমিকপক্ষের লোকজন রংপুর-লালমনিরহাট-কুড়িগ্রাম মহাসড়কের সাতমাথা এবং তাজহাট মোড়ে অবস্থান নেয় এবং সকাল ৭টা থেকে ওই মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে। ঘটনার সময় বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিক এবং ফটোগ্রাফার সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে মালিক ও শ্রমিকপক্ষের লোকজন অন্তত ১০ জন সাংবাদিককে মারধর করে এবং চ্যানেল আইয়ের ক্যামেরা ছিনিয়ে নিয়ে আগুন ধরিয়ে ক্যামেরা পার্সনকে গুরুতর আহত করে। সকাল ১০টায় মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মজিদ সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে ঘোষণা দেন, তার কার্যালয় ও বাসায় হামলাকারীদের গ্রেফতার না করা পর্যন্ত অনির্দিষ্টকাল ধরে রংপুর বিভাগের ৮ জেলায় পরিবহন ধর্মঘট অব্যাহত থাকবে। পরে বিকাল ৫টায় পরিবহন ধর্মঘট স্থগিত করে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে তার বাসায় হামলাকারীদের গ্রেফতার করা না হলে আবারো ধর্মঘট শুরু হবে। জানা গেছে, নগরীর সাতমাথা স্ট্যান্ডের টোল আদায়কে কেন্দ্র করে মোটর মালিক ও শ্রমিকপক্ষের মাঝে বেশ কিছুদিন ধরেই বিরোধ চলে আসছিল। সোমবার রাত আনুমানিক ১টায় মালিকপক্ষের টোল আদায়কারী ও ওয়ার্ড যুবলীগ নেতা ইমরান হোসেন হোটেল থেকে খাবার খেয়ে বাসায় যাবার পথে কে বা কারা তার পথরোধ করে তাকে উপর্যুপরি পেটাতে থাকে। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে ভোর সাড়ে তিনটায় তিনি মারা যান। এ খবর মালিকপক্ষে ছড়িয়ে পড়লে তারা একজোট হয়ে সাতমাথার ও কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের শ্রমিক কার্যালয়ে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। পরে তারা তাজহাট মোড়ে মজিদ ও তার বড় ভাই আবুল কালাম আজাদের বাসায় হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাংচুর চালায়। এরপর তারা অবস্থান নেয় সাতমাথা এলাকায় এবং খবর পেয়ে মজিদের শ্রমিক ইউনিয়নের লোকজন এসে অবস্থান নেয় তাজহাট মোড়ে। সকাল ৭টা থেকে ১০টা পর্যন্ত তারা রংপুর-কুড়িগ্রাম-লালমনিরহাট সড়ক অবরোধ করে রাখে। পরে রংপুর বিভাগের ৮ জেলায় অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘট ডাকে। মালিক ও শ্রমিকপক্ষের লোকজন সাংবাদিকদের ছবি তুলতে বাধা দেয় এবং অনেককেই ধাওয়া করে। তারা চ্যানেল আইয়ের ক্যামেরা ছিনিয়ে নিয়ে আগুন দেয় এবং ক্যামেরা পার্সন সুমনকে বেধড়ক মারপিট করে। এছাড়া দৈনিক যুগান্তরের ফটোসংবাদিক সাহেদ হোসেনের একটি মোটরসাইকেল জ্বালিয়ে দেয়া ছাড়াও আরও ৩টি ট্রাক, ১টি বাস ও বেশ কয়েকটি অটোতে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। ভোর ৬টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত থেমে থেমে চলতে থাকে এ অবস্থা। নিহত ইমরান হোসেনের বাড়ি সাতমাথা বালাটারী বীরভদ্র গ্রামে। তিনি দুলাল হোসেনের ছেলে। উল্লেখ্য, ৭ বছর আগে নিহত ইমরানের বড় ভাই আযম আলীও সন্ত্রাসীদের হামলার শিকার হয়ে প্রাণ হারান। বিকাল ৪টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত নিহত ইমরানের লাশ হাসপাতালের হিমঘরেই রাখা ছিল। এদিকে মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে দুই সন্তান সন্ত্রাসী হামলার শিকারে প্রাণ হারানোর ব্যথায় তাদের বৃদ্ধ পিতা দুলাল হোসেন মঙ্গলবার দুপুরে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে বর্তমানে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। বর্তমানে কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল, কামারপাড়া বাসস্ট্যান্ড, সাতমাথা, তাজহাট মোড়সহ শ্রমিক অধ্যুষিত বিভিন্ন এলাকায় শ্রমিকদের মাঝে তুমুল উত্তেজনা বিরাজ করছে। নগরময় প্রচুর পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
×