ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ফিটনেসবিহীন গাড়ির বিরুদ্ধে অভিযানে কোন সমন্বয় নেই

প্রকাশিত: ০৪:৫৫, ১২ নভেম্বর ২০১৪

ফিটনেসবিহীন গাড়ির বিরুদ্ধে অভিযানে কোন সমন্বয় নেই

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ফিটনেসবিহীন গাড়ি ও লাইসেন্সবিহীন চালকদের বিরুদ্ধে সারাদেশে অভিযান শুরু করেছে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ)। নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করার লক্ষ্যেই বিশাল এই কর্মযজ্ঞ। কিন্তু বাস্তবতা হলো, দেশব্যাপী দ্বিতীয় দিনের মতো অভিযান পরিচালনায় কোন সমন্বয় নেই সরকারী এই পরিবহন নিয়ন্ত্রণ সংস্থাটির। মোবাইল কোর্ট পরিচালনা ও দিনভর অভিযানের ফল রাতেও আসে না বিআরটিএ সদর দফতরে। কর্মকর্তাদের কাছেও এ সংক্রান্ত কোন সদুত্তর নেই। এমন বাস্তবতায় মঙ্গলবারও অনেকটা নিষ্ফল অভিযান হয়েছে দেশজুড়ে। সরকারী হিসাবে শুধু রাজধানীতেই এক লাখ সনদহীন যানবাহন চলছে। এসব পরিবহন ধরতে মাত্র তিনটি মোবাইল কোর্ট বসেছিল নগরীর তিন পয়েন্টে। দিনভর অভিযানের ফল হলো মাত্র ছয়টি গাড়ি ডাম্পিং, ৯২ হাজার ৮০০ টাকা জরিমানা ও ৮৬টি মামলা অথচ সারাদেশে প্রায় সোয়া তিন লাখ অবৈধ যানবাহন রয়েছে। সাত লাখের বেশি অবৈধ চালক গাড়ি চালাচ্ছেন নিয়মিত। এসব পরিবহন ও চালককে পাকড়াও করতে কতগুলো মোবাইল কোর্ট হয়েছে তা কেউ জানেন না। রাজধানীতে দ্বিতীয় দিনের অভিযানেও পরিবহন চালকরা মোবাইল কোর্টের সঙ্গে লুকোচুরি খেলা খেলেছেন। যেদিকে মোবাইল কোর্ট সেদিকে গণপরিবহন চলাচল কমে যায়। তাছাড়া যেসব গাড়ির ফিটনেস আছে ও চালকদের লাইসেন্স আছে সেগুলোই বেশিরভাগ রাস্তায় চলতে দেখা গেছে। তবে সকাল থেকে অভিযানের ভয়ে পরিবহন কম থাকায় দুর্ভোগে পড়তে হয় অফিসমুখো যাত্রীদের। ফার্মগেট, সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ী, শাহবাগ, কমলাপুর, মুগদা, বাসাবো, গুলশান, বিমানবন্দর, শ্যামলী, খিলক্ষেত, পল্টন, কাকরাইল, রামপুরা, মালিবাগ, বাংলামোটর, ফার্মগেট, মিরপুর, শ্যাওড়াপাড়া, আগরগাঁও, তালতলা, ধানম-ি, রাইফেলস স্কয়ার, মোহাম্মদপুর, ঝিগাতলা, শংকরসহ নগরীর বিভিন্ন স্থানে যাত্রীদের দীর্ঘ সময় পরিবহনের জন্য অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। সব মিলিয়ে জনবল কম, সমন্বয়হীনতা, জনদুর্ভোগের মধ্য দিয়ে অভিযান চলছে। যার ফল উল্লেখ করার মতো নয়। তবে লক্কড়-ঝক্কড় মার্কা পরিবহন চোখে পড়েনি। অনুমোদনহীন যানবাহনও রাস্তায় খুব একটা দেখা যায়নি। পরিবহন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মোবাইল কোর্টের অভিযানে তেমন একটা সফলতা নেই। তাহলে কি অবৈধ পরিবহনগুলো ঢাকা শহর থেকে উধাও হয়ে গেল। সেগুলোর দেখা মিলছে না কেন? তাদের পরামর্শ বাস টার্মিনাল ও গ্যারেজে অভিযান চালিয়ে পরিবহন জব্দ করা। সেই সঙ্গে গাড়ি লুকিয়ে রাখার অপরাধে মালিকের বিরুদ্ধে আর্থিক জরিমানা করারও পরামর্শ দেন তারা। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ পরিষদের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ১৮ লাখ নসিমন, করিমন, ভটভটি বিভিন্ন সড়কে চলাচল করছে। যার একটিও সরকারীভাবে অনুমোদিত নয়। ৩ লক্ষাধিক ব্যাটারিচালিত রিক্সা ও ইজিবাইক মহাসড়কে চলতে দিয়ে কোন অবস্থাতেই নিরাপদ সড়ক বাস্তবায়ন সক্ষম হবে না। বাবুবাজার ব্রিজ এলাকায় স্থাপিত মোবাইল কোর্টের দায়িত্ব পালন করেন বিআরটিএ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দেবাশীষ নাগ। রাতে জনকণ্ঠ’কে তিনি জানান, দিনভর অভিযানে ২২টি মামলা, ২৯ হাজার ৬০০ টাকা জরিমানা ও ২টি গাড়ি ডাম্পিংসহ একটি গাড়ির অবৈধ কাগজপত্র নষ্ট করা হয়েছে। শ্যামলী আশা টাওয়ারের সামনে অভিযান পরিচালনা করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাসিরউল্লাহ খান। তিনি জানান, দিনভর অভিযানে বিভিন্ন পরিবহনের বিরুদ্ধে ২৯টি মামলা, ৩৭ হাজার টাকা জরিমানা ও তিনটি গাড়ি ডাম্পিংয়ে পাঠানো হয়েছে। নগরীর জোয়ার সাহারা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ আবুল বাশার। তিনি জানান, দিনভর অভিযানে ৩৫টি মামলা করা হয়েছে। নানা অপরাধে বিভিন্ন পরিবহন থেকে আদায় করা হয়েছে ২৬ হাজার ২০০ টাকা জরিমানা। একটি গাড়ি ডাম্পিংয়ে পাঠানোর কথা জানান তিনি। বিআরটিএ পরিচালক এনফোর্সমেন্ট বিজয় ভূষণ পাল অভিযান সম্পর্কে মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টায় জনকণ্ঠ’কে বলেন, আজকের ফল আমাদের কাছে আসেনি। অভিযানের ফল পাওয়া যাবে বুধবার। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা এখনও কোন তথ্য বিআরটিএ সদর দফতরে পাঠাননি বলে জানান তিনি। পণ্য আমদানি ও রফতানিকাজে নিয়োজিত এক লাখ ২০ হাজার ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান অভিযানের আওতার বাইরে রাখার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ ট্রাক কাভার্ডভ্যান, ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মোতালেব। পাশাপাশি ২৪ ফিট চেসিস যুক্ত ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান রেজিস্ট্রেশন দিতে বিআরটিএসহ যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের প্রতি আহ্বান জানানো হয় সমিতির পক্ষ থেকে।
×