ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

হবসবম আর হিল কী সোভিয়েত গুপ্তচর ছিলেন?

প্রকাশিত: ০৫:৩০, ১১ নভেম্বর ২০১৪

হবসবম আর হিল কী সোভিয়েত গুপ্তচর ছিলেন?

ব্রিটেনের খ্যাতনামা মার্ক্সবাদী ইতিহাসবিদ এরিক হবসবম বিবিসিতে যোগ দিতে চেয়েছিলেন। ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করার ইচ্ছেও তাঁর ছিল। চাকরির জন্য তিনি দরখাস্তও পাঠিয়েছিলেন। দুটোর কোনটাই তাঁর ভাগ্যে জোটেনি। ব্রিটেনের নিরাপত্তা বিষয়ক গুপ্তচর সংস্থা দুটি ক্ষেত্রেই বাগড়া দিয়েছিল। তাদের অভিযোগ ছিল হবসবমের বিরুদ্ধে, তিনি সাবেক সোভিয়েত গুপ্তচরদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন। জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে হবসবমের মতো একই রকম কড়া নজরদারি ছিল ব্রিটেনের আরেক প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ ক্রিস্টোফার হিলের ক্ষেত্রেও। সম্প্রতি এরকম চাঞ্চল্যকর সব তথ্য প্রকাশ করেছে ইংল্যান্ডের জাতীয় মহাফেজখানা। এতদিন এসব তথ্য গোপন রাখা হয়েছিল। হবসবম ও হিল দু’জনই ব্রিটিশ কমিউনিস্ট পার্টির সক্রিয় সদস্য। প্রকাশিত নথি অনুযায়ী দেখা যায়, কয়েক দশক ধরে তাঁদের যাবতীয় গতিবিধির ওপর কড়া নজর রেখেছিল ব্রিটেনের গুপ্তচর সংস্থা এমআই-৫। লন্ডন পুলিশের বিশেষ শাখা দু’জনেরই ফোনে আড়ি পেতেছিল। তাঁদের টেলিফোনের যাবতীয় কথোপকথন রেকর্ডে রেখেছিল এমআই-৫। দেখা যায়, ১৯৪২-এ প্রথম এমআই-৫-এর নজরদারির আওতায় আসেন হবসবম। পরবর্তীকালে ইতিহাসবিদ হিসেবে জগতজোড়া খ্যাতি পেলেও সেই সময় হবসবমসহ তাঁর আরও ৩৮ সহকর্মীকে কট্টর মার্ক্সবাদীর তকমা দিয়ে তাঁদের সম্পর্কে গোপনে তল্লাশি শুরু করে এই গুপ্তচর সংস্থাটি। ঠা-া যুদ্ধ শুরুর আগেই সোভিয়েতের গুপ্তচর হিসেবে দোষী সাব্যস্ত হন ব্রিটিশ পদার্থবিদ এ্যালান নুন মে। এ্যালান নুন মে’র সঙ্গে হবসবমসহ ব্রিটিশ কমিউনিস্ট পার্টির শীর্ষনেতাদের বেশ ভালই যোগাযোগ ছিল। মূলত এ কারণে হবসবমের ওপর শুরু হয় কড়া নজরদারি। ২০১২ সালে মারা যান হবসবম। মৃত্যুর আগে হবসবম দাবি করেছিলেন, তাঁর বিরুদ্ধে তৈরি করা এমআই-৫-এর ফাইল তাঁর হাতে তুলে দেয়া হোক। তিনি চাননি তাঁর আত্মজীবনীতে কোন ভুল তথ্য থাক। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি শেষ পর্যন্ত ফাইল অবশ্য হাতে পাননি তিনি। ক্রিস্টোফার হিলও হবসবমের মতো একই রকম ভোগান্তির শিকার হন। ১৯৩৫-এ স্নাতকের ছাত্র থাকাকালীন রাশিয়া যান তিনি। সেখানে এক বছর থেকে হিল ফিরে আসেন। বস্তুত তখন থেকেই তিনি পড়ে যান এমআই-৫-এর খাস নজরে। রাশিয়া থেকে ব্রিটেনে অবতরণ করার পর বিমানবন্দরে তাঁর ব্যাগপত্রেও তল্লাশি চালানো হয়। ১৯৫০ সালে প্রকাশিত একটি রিপোর্টই বরং হিলকে কিছুটা অস্বস্তির মধ্যে ফেলে। সেই রিপোর্টে বলা হয়, মার্ক্সবাদের প্রতি হিলের দুর্বলতা ও আনুগত্যই তাঁর দাম্পত্য জীবনে খারাপ প্রভাব ফেলে। হিলের প্রথম পক্ষের স্ত্রী ইনেজ দাবি করেন, রাজনীতি করতে গিয়ে দেদার পয়সা ব্যয় করতেন হিল। অর্থ ব্যয়ের বিষয়টি থেকেই হিলের ব্যাপারে এমআই-৫-এর সন্দেহ হয়। এরপর তেপ্পান্ন সালে মেলে স্বস্তি। ‘অসামান্য ইতিহাসবিদ’ হিসেবেই তাঁকে স্বীকৃতি দেয় এমআই-৫। ৬১-তে হিলের পরমাণু অস্ত্র বিরোধিতা নিয়ে আবার ব্রিটিশ গোয়েন্দারা আপত্তি তোলে। ব্রিটিশ গোয়েন্দাদের সার্বক্ষণিক এসব নজরদারি অবশ্য হিলের চাকরি বা শিক্ষাজীবনে তেমন কোন প্রভাব ফেলতে পারেনি। আনন্দবাজার অবলম্বনে
×