ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

জেএসসি, জেডিসি পরীক্ষার দ্বিতীয় দিনে অনুপস্থিত প্রায় অর্ধ লাখ শিক্ষার্থী

প্রকাশিত: ০৫:২৬, ১০ নভেম্বর ২০১৪

জেএসসি, জেডিসি পরীক্ষার দ্বিতীয় দিনে অনুপস্থিত প্রায় অর্ধ লাখ শিক্ষার্থী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষার দ্বিতীয় দিনে নিবন্ধন করেও পরীক্ষা কেন্দ্রে অনুপস্থিত ছিল প্রায় অর্ধলক্ষ শিক্ষার্থী। সারাদেশে রবিবার অনুষ্ঠিত জেএসসির গণিত ও জেডিসির ইংরেজী প্রথম পত্র পরীক্ষায় অনুপস্থিত ছিল ৪৪ হাজার ১৩৪ জন। বিভিন্নস্থানে শিক্ষার্থী ছাড়াও শিক্ষকদের বিরুদ্ধে প্রশ্ন ফাঁস, নকল ও বাড়িতে বসে উত্তরপত্র তৈরির গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। অসদুপায় অবলম্বনের দায়ে ৪১ শিক্ষার্থীসহ এদিন ৭ শিক্ষককে বহিষ্কার করা হয়েছে। কুষ্টিয়ার খোকসায় গণিত পরীক্ষার প্রশ্নের উত্তরপত্র বাড়িতে বসে তৈরির দায়ে চার শিক্ষককে দুই বছর করে কারাদ- দিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। ফেসবুকে প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিভ্রান্তি ছড়ানোর অভিযোগে মুন্সীগঞ্জে এক মাদ্রাসা শিক্ষককে গ্রেফতার করা হয়েছে। পরীক্ষার আগে জামালপুরে প্রশ্নপত্রসহ আটক করা হয়েছে দুই ব্যক্তিকে। এর আগে টানা হরতালের পর শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের মনে নতুন ধ্বংসাত্মক কর্মসূচীর আতঙ্কের মধ্য দিয়েই গত শুক্রবার ছুটির দিনে ৮টি সাধারণ ও একটি মাদ্রাসা বোর্ডের অধীনে এ পরীক্ষা শুরু হয়েছে। প্রথম দিন পরীক্ষার জন্য নিবন্ধন করেও কেন্দ্রে অনুপস্থিত ছিল ৪৬ হাজার ৪০ পরীক্ষার্থী; যার মধ্যে জেডিসিরই ১৪ হাজার ২৪৩ জন। রবিবার পরীক্ষার দ্বিতীয় দিন নিবন্ধন করা ২০ লাখ ৩০ হাজার ১১৮ জনের মধ্যে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে ১৯ লাখ ৮৫ হাজার ৯৮৪ জন। এবার হরতালের কারণে প্রথম দফায় ২ ও ৩ নবেম্বরের পরীক্ষার তারিখ পরিবর্তন করা হয়। দ্বিতীয় দফায় ৫ ও ৬ নবেম্বরের পরীক্ষার তারিখ পরিবর্তন করা হয়েছে। পরিবর্তিত সূচী অনুযায়ী জেএসসির ৩ নবেম্বরের বাংলা দ্বিতীয় পত্র পরীক্ষা আগামী ১৪ নবেম্বর শুক্রবার সকাল ৯টায়; জেডিসির আকাইদ ও ফিকাহ এবং আত-তাওহীদ ওয়ালফিকহ (অনিয়মিত পরীক্ষার্থীদের জন্য) পরীক্ষা আগামী ১৪ নবেম্বর সকাল ৯টায় অনুষ্ঠিত হবে। ৫ নবেম্বরের পরীক্ষা আগামী ১৯ নবেম্বর ও ৬ নবেম্বরের পরীক্ষা ২০ নবেম্বর অনুষ্ঠিত হবে। এ বছর বাংলা দ্বিতীয় পত্র, ইংরেজী প্রথম ও দ্বিতীয় পত্র ছাড়া অন্য বিষয়ের পরীক্ষা হচ্ছে সৃজনশীল প্রশ্নে। বরাবরের মতো প্রতিবন্ধী পরীক্ষার্থীরা এবারও অতিরিক্ত ২০ মিনিট সময় পাচ্ছে। আর দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী, সেরিব্রাল পালসিজনিত প্রতিবন্ধী এবং যাদের হাত নেই তারা শ্রুতি লেখক সঙ্গে নিয়ে পরীক্ষা দিতে পারছে। বহু নির্বাচনী ও সৃজনশীল প্রশ্নপত্রে দুটি বিভাগ থাকলেও দুটি অংশ মিলে ৩৩ পেলেই পাস বলে গণ্য হবে। অর্থাৎ এসএসসির মতো দুটি অংশে আলাদা আলাদা পাসের প্রয়োজন নেই। এদিকে পরীক্ষা সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হলেও রবিবার বিভিন্নস্থানে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের বিরুদ্ধে প্রশ্ন ফাঁস, নকল ও বাড়িতে বসে উত্তরপত্র তৈরির গুরুতর অপরাধ করার প্রমাণ পাওয়া গেছে। কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলায় জেএসসির গণিত পরীক্ষার প্রশ্নের উত্তরপত্র বাড়িত বসে তৈরির দায়ে চার শিক্ষককে দুই বছর করে কারাদ- দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। তাদের প্রত্যেককে পাঁচ হাজার টাকা করে জরিমানাও করা হয়েছে। দ- পাওয়া ব্যক্তিরা হলেনÑখোকসার শোমসপুর উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আফিল উদ্দীন, দেব কুমার ঘোষাল ও সরওয়ার হোসেন এবং আমলাবাড়ি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক বিশ্বনাথ দাস। খোকসা উপজেলা নির্বাহী কার্যালয় (ইউএনও) সূত্র জানিয়েছে, শোমসপুর মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় কেন্দ্র থেকে জেএসসির গণিত পরীক্ষার প্রশ্ন বাইরে নিয়ে এক শিক্ষকের বাড়িতে বসে উত্তরপত্র তৈরি করা হচ্ছে বলে গোপন খবর পাওয়া যায়। কেন্দ্র থেকে ওই বাড়ির দূরত্ব প্রায় দেড় কিলোমিটার। এমন খবরের ভিত্তিতে বেলা পৌনে ১১টার দিকে জনৈক শিক্ষক দেব কুমার ঘোষালের বাড়িতে পুলিশ নিয়ে অভিযান চালান ইউএনও রেবেকা খান। বাড়ির ভেতরে একটি কক্ষে বসে জেএসসির গণিতের উত্তরপত্র তৈরিকালে চার শিক্ষককে হাতেনাতে ধরা হয়। তাদের কাছ থেকে গণিতের একটি প্রশ্নপত্র, নয়টি উত্তরপত্র, দুটি অতিরিক্ত খাতা, একটি ক্যালকুলেটর ও একটি জ্যামিতির বই উদ্ধার করা হয়েছে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক রেবেকা খান চার শিক্ষকের প্রত্যেককে দুই বছর করে কারাদ- ও পাঁচ হাজার টাকা করে জরিমানা করেন। পরে রেবেকা সাংবাদিকদের বলেন, অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ওই চার শিক্ষককে দ- দেয়া হয়েছে। মুন্সীগঞ্জ থেকে আমাদের স্টাফ রিপোর্টার জানিয়েছেন, ফেসবুকে জেএসসি গণিত পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিভ্রান্তি ছড়ানোর দায়ে মাদ্রাসা শিক্ষক রাসেল সরদারকে (২৮) গ্রেফতার করেছে পুলিশ। রবিবার ভোরে সদর উপজেলার আধারা গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। তিনি আধারা দারুল সুন্নাত ইসলামিয়া মাদ্রাসার শিক্ষক। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে তার অবস্থান নিশ্চিত করে এই গ্রেফতার অভিযানে নেতৃত্ব দেন মুন্সীগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন ও সহকারী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ইমদাত হোসাইন। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জানান, প্রশ্নপত্র ফাঁস বা বিভ্রান্তিজনিত অপতৎপরতার সঙ্গে অন্য জড়িতদের বের করার চেষ্টা চলছে। তবে গ্রেফতারকৃত রাসেল সরদার পুলিশের কাছে জানিয়েছে, হাতে লেখা অঙ্ক পরীক্ষার সাজেশনের ছবি সামাজিক গণমাধ্যম ফেসবুকে আপলোড করেছেন মাত্র। আজ (রবিবার) জেএসসি ও জেডিসি গণিত পরীক্ষা চলছে। যে প্রশ্নে পরীক্ষা হচ্ছে তার সঙ্গে ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয়া এই প্রশ্নের তেমন মিল নেই। তাই পরীক্ষায় কোন প্রভাব পড়ছে না। মুন্সীগঞ্জের জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ সাইফুল হাসান বাদল জানান, পরীক্ষার্থীদের বিভ্রান্তিতে ফেলাসহ এই অপতৎপরতা গুরুতর অপরাধ। সেই অনুযায়ী আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। গ্রেফতারকৃত রাসেল সরদার আধারা গ্রামের লিয়াকত আলীর পুত্র। পুলিশ আরও জানায়, সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে রাসেলের জড়িত থাকার খবরটি মুন্সীগঞ্জে পুলিশকে শুক্রবার রাতে অবগত করা হয়। ঐ রাতেই পুলিশ অভিযানে নামে। কিন্তু ফেসবুকে তথ্যগত সাদৃশ্যের কারণে অন্য রাসেলকে টার্গেট করা হয়। শুক্রবার গভীর রাতে ওই রাসেলের বন্ধু রুবেল শেখকে টঙ্গীবাড়ি উপজেলার সোনারং দেউলবাড়ি গ্রামের নিজবাড়ি থেকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়। পরে তার অভিভাবক ও জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে বন্ধু রাসেল শেখ ও রবিন রাঢ়ীকে শনিবার রাতে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে আনা হয় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য। এই তিন বন্ধু মিলে সোনারং গ্রামে এমআর কোচিং সেন্টার পরিচালনা করছিলেন। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার অবস্থান নিশ্চিত করে মাদ্রাসা শিক্ষক রাসেল সরদারকে গ্রেফতারের পরই নির্দোষ তিন বন্ধুকে ছেড়ে দেয়া হয়। এদিকে শনিবার রাতে জামালপুরের একটি ফটোকপি দোকান থেকে গণিতের একটি প্রশ্নপত্রসহ দুজনকে আটক করে পুলিশ। আটকদের মধ্যে একজন দোকান মালিক খায়রুল ইসলাম বকুল (৪৫) এবং অন্য কিশোর জামালপুর শহরের বেলটিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র। জামালপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুজিবুর রহমান মজুমদার বলেন, রাতে ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে পুলিশ অভিযান চালিয়ে মধুপুর রোডে বঙ্গতাজ ফটোস্ট্যাট দোকানে অভিযান চালিয়ে দুজনকে আটক করে। ওসি জানান, তাদের কাছে পাওয়া প্রশ্নপত্রটি আসল কিনা, তা তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে জড়িত সবাইকে বের করতে পুলিশ কাজ করছে।
×