ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

বঙ্গবন্ধুর সহচর মমতাজ আহমেদ ছিলেন নির্লোভ নিরহঙ্কার

প্রকাশিত: ০৪:৪২, ৯ নভেম্বর ২০১৪

বঙ্গবন্ধুর সহচর মমতাজ আহমেদ ছিলেন নির্লোভ নিরহঙ্কার

মিজানুর রহমান, কলারোয়া থেকে ফিরে ॥ বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর, সাতক্ষীরা অঞ্চলের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক মমতাজ আহমেদের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে আয়োজিত স্মরণসভায় বক্তারা বলেছেন, মমতাজ আহমেদ ছিলেন চারণ রাজনীতিবিদ, শিক্ষাবিদ এবং নির্লোভ ও নিরহঙ্কার মানুষ। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য তিনি হেঁটে হেঁটে আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন। দেশকে স্বাধীন করতে তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত হতে উদ্বুদ্ধ করেছেন্ । তার দেখনো পথ মানুষের জীবনকে আলোকিত করতে সহায়তা করবে। লাখো শহীদের রক্তে অর্জিত স্বাধীনতাকে জামায়াতসহ যারা বিশ্বাস করে না তাদের এদেশে থাকার অধিকার নেই উল্লেখ করে বক্তারা বলেন, এই স্বাধীনতাবিরোধীদের প্রতিহত করতে এবং বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে মুক্তিযোদ্ধাদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার বিকল্প নেই। শনিবার দুপুরে কলারোয়া উপজেলার বোয়ালিয়া গ্রামে মমতাজ আহমেদ মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স চত্বরে আয়োজিত স্মরণসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন মুক্তিযুদ্ধের ৮ নং সেক্টরের সাবসেক্টর কমান্ডার ক্যাপ্টেন মাহবুবউদ্দিন আহমদ বীরবিক্রম। জেলা শহর থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে এই স্মরণসভায় জেলার বিভিন্নস্থান থেকে আসা মুক্তিযোদ্ধাদের সমাগম ছিল অনেক বেশি। সাতক্ষীরা ১ আসনের সংসদ সদস্য এ্যাডভোকেট মুস্তফা লুৎফুল্লাহর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত স্মরণসভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন অধ্যক্ষ আলি আহমেদ, অধ্যাপক এম এ ফারুক, মুক্তিযোদ্ধা জেলা ইউনিট কমান্ডার মোশাররাফ হোসেন মশু, ফিরোজ আহমেদ স্বপন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোদাচ্ছেরুল হোসেনসহ বিভিন্ন মুক্তিযোদ্ধা ও বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। মমতাজ আহমেদ মৃত্যুবার্ষিকী উদযাপন কমিটি এই স্মরণসভার আয়োজন করে। প্রধান বক্তা ক্যাপ্টেন মাহবুবউদ্দিন বলেন, বঙ্গবন্ধু যে সোনার বাংলা বাস্তবায়নের স্বপ্ন দেখেছিলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা এখন সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করছেন। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াই করায় সারা বিশ্ব এখন বাংলাদেশের পক্ষে। বঙ্গবন্ধুর ডাকে জীবন বাজি রেখে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে না পড়লে দেশ স্বাধীন হতো না উল্লেখ করে ক্যাপ্টেন মাহবুবউদ্দিন বলেন, বঙ্গবন্ধুকন্যা বেঁচে থাকলে আগামীতে আর কেউ মুক্তিযোদ্ধাদের গা স্পর্শ করতে পারবে না। বক্তারা স্মৃতিচারণে বলেন, সাতক্ষীরার রাজনৈতিক অঙ্গনের প্রবীণতম ব্যক্তি মমতাজ আহমেদ ১৯৫৪ সালে এমএলএ নির্বাচিত হন। ১৯৭০ সালে এমপিএ (প্রাদেশিক আইন সভার সদস্য) নির্বাচিত হন এবং ১৯৭৩ সালে তিনি এমসিএ (কেন্দ্রীয় আইন সভার সদস্য) নির্বাচিত হন। রাজনৈতিক জীবনে তার এই সাফল্য তাকে বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগের রাজনীতির খুব কাছে নিয়ে আসে। মহান মুক্তিযুদ্ধকালে তিনি ৮ এবং ৯ নম্বর সেক্টরে রাজনৈতিক উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করেন। একই সময় তিনি ছিলেন বিথারি আঞ্চলিক সংগ্রাম কমিটির সভাপতি। মমতাজ আহমেদ তার জীবদ্দশায় একজন শিক্ষক হিসাবে পেশাগত সাফল্য লাভ করেন। তিনি বালতি হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক, ঝিকরগাছা বদরুদ্দিন মুসলিম হাই মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক ও ১৯৫১ সালে বাগআঁচড়া হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৪৮ সালে তিনি কলারোয়ার কেড়াকাছি ইউনিয়ন বোর্ডের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। এছাড়া ১৯৫১ সাল থেকে টানা ১০ বছর তিনি ছিলেন কলারোয়া হাইস্কুলের সেক্রেটারি। মমতাজ আহমেদ বহু স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা। একাধারে তিনি একজন কবিও । জীবনের শেষদিন পর্যন্ত তিনি জনকল্যাণ ও সমাজসেবামূলক কাজে নিয়োজিত ছিলেন। মরহুম মমতাজ আহমেদ ১৯১৭ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৪০ সালে কলারোয়া হাইস্কুল থেকে এন্ট্রান্স পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। পরে যশোর এমএম কলেজের প্রথম ব্যাচের ছাত্র হিসাবে এফএ (ফার্স্ট অব আর্টস) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯৪৫ সালে একই কলেজ থেকে ¯œাতক পাস করেন মমতাজ আহমেদ। কলকাতা ইসলামিয়া কলেজে পরীক্ষার কেন্দ্র হওয়ায় তিনি সে সময় সেখানকার হোস্টেলে থাকতেন। সেখানেই তিনি বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্যে আসেন। এরপর থেকে বঙ্গবন্ধুর মতাদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি একই রাজনীতিতে নিজেকে সমর্পণ করেন। আজীবন তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন । স্মরণসভা শেষে মমতাজ আহমেদ স্মরণে রচিত স্মরণিকার মোড়ক উন্মোচন করা হয় এবং বিভিন্নক্ষেত্রে অবদানের জন্য ৩১ জনকে মমতাজ আহমেদ স্মৃতিপদক প্রদান করা হয়।
×