ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বিদ্যুৎ বিপর্যয়

প্রকাশিত: ০৫:২৫, ৭ নভেম্বর ২০১৪

বিদ্যুৎ বিপর্যয়

শনিবার জাতীয় গ্রিডে কারিগরি ত্রুটির কারণে সারাদেশ অন্ধকারে ছেয়ে যায়। বন্ধ হয়ে যায় দেশের সব ক’টি বিদ্যুতকেন্দ্র। শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে এ বিদ্যুত বিপর্যয়ের সূত্রপাত হয়। এই দুঃসহ অবস্থা প্রায় দশ ঘণ্টা স্থায়ী হয়। বিদ্যুত, জ্বালানি ও খনিজ মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়, কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলার বাহিরচর ইউনিয়নের ষোলোদাগ গ্রামে জাতীয় গ্রিডে ত্রুটির কারণে সারাদেশে বিদ্যুত সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। এর ফলে রাজধানীসহ সারাদেশে জনগণের ভোগান্তির সীমা ছিল না। সবচেয়ে অসুবিধা হয়েছে দেশের হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতে। একই সঙ্গে বিদ্যুতের ওপর নির্ভরশীল শহরের আবাসিক এলাকার লোকজনকে ব্যাপক দুর্ভোগের শিকার হতে হয়। এসব এলাকায় জেনারেটর নিরন্তর চালু রেখে বিদ্যুত সরবরাহের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু এভাবে কতক্ষণ? যেসব আবাসিক এলাকা ও বহুতল ভবনে জেনারেটর নেই, সেখানে পানি সঙ্কটের সৃষ্টি হয়। এ ছাড়া সিএনজি ও জ্বালানি তেলের ফিলিং স্টেশনগুলোতে জ্বালানি সরবরাহের ক্ষেত্রে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। সারাদেশে অন্ধকার থাকায় রাজধানীসহ দেশের শহরাঞ্চলে ছিনতাই ও সন্ত্রাসী তৎপরতা বেড়ে গিয়েছিল। এই বিদ্যুতবিহীন অন্ধকারকে অনেকেই জাতীয় বিপর্যয়ের সঙ্গে তুলনা করেছেন। বাংলাদেশের মতো একটি অতি ঘনবসতিপূর্ণ দেশে এ ধরনের বিপর্যয় যে কতখানি ক্ষতিকর ও আতঙ্কজনক তা শনিবার বেলা ১১টা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত দেশের মানুষ গভীরভাবে উপলব্ধি করেছে। বিদ্যুত কিংবা জেনারেটরের সংযোগ না থাকায় অনেক বহুতল আবাসিক ভবনেই লিফট বন্ধ ছিল। সঙ্কটাপন্ন রোগীদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে মারাত্মক সমস্যার সৃষ্টি হয়। একই সঙ্গে বিদ্যুতের অভাবে বেশ কিছু হাসপাতালে অচলাবস্থা বিরাজ করেছে। তাই দেশব্যাপী এ ধরনের বিদ্যুত বিপর্যয় যাতে আর না হয়, সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সর্বক্ষণিকভাবে সচেতন থাকতে হবে। তবে এবারের এই জাতীয় বিপর্যয়ের সঠিক কারণ খুঁজে বের করা দরকার। সঠিক কারণ সম্পর্কে এখনও কেউ নিশ্চিত হতে পারছেন না। অনেকেই বাংলাদেশ-ভারত বিদ্যুত সরবরাহ লাইন শনিবার দুই দফায় ট্রিপ হওয়ার কথা বলেছেন। বিদ্যুত বিপর্যয়ের মূল কারণ সবারই জানা দরকার। সবারই প্রত্যাশা, এ বিষয়ে যথাযথ তদন্ত হবে। শনিবার মাঝরাত থেকে বিদ্যুত সরবরাহ অনেকাংশে স্বাভাবিক হয়ে আসে। তবে এ ধরনের বিদ্যুত বিপর্যয়ের ক্ষেত্রে পূর্বপ্রস্তুতি জরুরী। ব্ল্যাকআউটের সুযোগ নিয়ে যাতে অপরাধীরা তৎপর হতে না পারে, সেই লক্ষ্যে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা দরকার। জাতির জীবনে এ ধরনের বিপর্যয় যে কোন সময় ঘটতে পারে। তাই বিকল্প ব্যবস্থার কথা ভাবা প্রয়োজন। এবারের এই বিপর্যয়ের কারণ খুঁজে বের করতে হবে এবং বিশেষজ্ঞদের নিয়ে এ ধরনের বিপর্যয় রোধে সম্ভাব্য সব ব্যবস্থা গ্রহণ করার কথা ভাবতে হবে।
×