ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

জামায়াতের হরতাল ঘিরে চট্টগ্রামে পুলিশের গ্রেফতার বাণিজ্য

প্রকাশিত: ০৫:১৯, ৭ নভেম্বর ২০১৪

জামায়াতের হরতাল ঘিরে চট্টগ্রামে পুলিশের গ্রেফতার বাণিজ্য

মাকসুদ আহমদ, চট্টগ্রাম অফিস ॥ চট্টগ্রামে সন্ত্রাস দমনের নামে পুলিশ গ্রেফতারবাণিজ্যে নেমেছে। ফলে থানায় আটক বা গ্রেফতারের সংখ্যা মিডিয়াকে জানাতে নারাজ সিএমপির কয়েক থানার ওসি। বিএনপি-জামায়াত আশীর্বাদপুষ্ট ওসিরাই সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করতে সন্ত্রাসী বাদ দিয়ে সাধারণদের হয়রানি শুরু করেছে। ফলে তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসীদের বাদ দেয়ায় এ ধরনের অভিযান নগরবাসীর কাছে পুলিশকে সমালোচনার মুখে ফেলে দিচ্ছে। এমনকি বিভিন্ন অপরাধে এজাহারভুক্তদেরও ছাড় দেয়া হচ্ছে অথচ, হয়রানি ও মামলার শিকার হচ্ছে সাধারণ মানুষ। অভিযোগ রয়েছে, পুলিশের এ ধরনের অভিযান চলছে হরতালকে কেন্দ্র করে পূর্বরাতে। এমনকি ৪৮ ঘণ্টার হরতালে পর পর দু’রাত টানা অভিযান পরিচালিত হয়েছে। থানার ওসি থেকে শুরু করে কনস্টেবল পর্যন্ত এ অভিযানে অংশ নেয়। কিন্তু উর্ধতন কর্মকর্তাদের আড়ালে চলছে গ্রেফতারবাণিজ্য। গত সোমবার নগরীর আকবর শাহ থানাধীন নিউ শহীদ লাইন এলাকায় রাত সাড়ে ৮টার দিকে অভিযান চালায় পুলিশ। এ অভিযানে নোয়াখালী থেকে বেড়াতে আসা বেলায়েত হোসেনকে তার আত্মীয়ের ঘরের পাশে থাকা দোকানের সামনে থেকেই তুলে নিয়ে যায় পুলিশ। এ অভিযানে ঐ রাতে পুলিশ শতাধিক লোককে আটক করে। বেলায়েত হোসেনকে ছাড়িয়ে আনতে বেলায়েতের আত্মীয়ের পক্ষ থেকে আকবর শাহকে থানায় ধর্ণা দিতে হয়। অবশেষে রাত আড়াইটায় বেলায়েতকে ছেড়ে দিতে থানার এসআই মাকসুদ ১৫ হাজার টাকা দাবি করেন। পরে দফারফা হয় মাত্র দেড় হাজার টাকায়। ঐ রাতেই এসআই মাকসুদ ওসির দোহাই দিয়ে এছাড়া আরও ৩ জনকে ৭ হাজার টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আরও কয়েক এসআই মোটা অঙ্কের বিনিময়ে ছেড়েছেন অন্তত ১৫ জনকে। অপরদিকে, গত সোমবার দুপুুরে নগরীর স্টেশন রোড এলাকা থেকে শাহাদাত হোসেন নামের মোস্তফা হাকিম কলেজের প্রথম বর্ষের এক ছাত্রকে গ্রেফতার করে কোতোয়ালি থানা পুলিশ। পুলিশের ভাষ্য মতে, ঐ সময়ে একটি মিছিল ঐ স্থান অতিক্রম করছিল। কিন্তু শাহাদাত জানিয়েছে সে গাড়ির জন্য রাস্তায় অপেক্ষা করছিল। গত সোমবার রাতেই কোতোয়ালি থানার ওসি মহিউদ্দিন সেলিম শাহাদাত হোসেনকে মিছিলকারী হিসেবে সন্ত্রাস দমন আইনে একটি মামলায় গ্রেফতার দেখান। শুধু শাহাদাত হোসেনই নয়, এ রকম আরও ৩৬ জনকে আসামি করা হয়েছে ঐ মামলায়। মঙ্গলবার বেলা সাড়ে এগারোটার দিকে কোতোয়ালি থানা থেকে শাহাদাতসহ আরও ৭-৮ জনকে আদালতে চালান দেয়া হয়। শেষ পর্যন্ত দেখা গেছে, শাহাদাতসহ অন্যদের নামে মোট ৩টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে গাড়ি ভাংচুর, বিস্ফোরক দ্রব্য ও সন্ত্রাসী কর্মকা-ের অভিযোগ। কোতোয়ালি থানার ওসি মহিউদ্দিন সেলিমের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, শাহাদাতের বাবা একজন ব্যবসায়ী এবং চাচা সরকারী চাকরিজীবী। উভয়েই শাহাদাতের পরিচয়পত্র নিয়ে ওসির সঙ্গে সাক্ষাত করার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু নাছোড়বান্দা ওসি সত্য ধামাচাপা দিতে বিশ্বাসী। ফলে হয়রানির শিকার এ অভিভাবকদের সঙ্গে থানায় তার দফতরে সাক্ষাত করতে অস্বীকার করেন। এমনকি বেশি বাড়াবাড়ি করলে আরও খারাপ অবস্থা করার হুমকি দেন। এ ব্যাপারে কোতোয়ালি থানার ওসি মহিউদ্দিন সেলিম জানিয়েছেন, শাহাদাতকে তিনি নিজ হাতে মিছিল থেকে পাকড়াও করেছেন। শাহাদাতের ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘প্রয়োজনে পত্রিকায় ছাপিয়ে দেন, কোন সমস্যা নেই।’ একই বিষয়ে ওসি (তদন্ত) মোঃ নেজামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, থানার পিআই জাহাঙ্গীর শাহাদাতকে মিছিল থেকে আটক করেছেন। ওসি সাহেব ঐ টিমের নেতৃত্বে ছিলেন। ফাঁকা গুলি করার পর দৌড়ে পালানোর সময় শাহাদাতকে আটক করা হয়।
×