ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

জামায়াতী জঙ্গী অর্থায়নে মদদ দিচ্ছে আইএসআই

প্রকাশিত: ০৫:৩২, ৬ নভেম্বর ২০১৪

জামায়াতী জঙ্গী অর্থায়নে মদদ দিচ্ছে আইএসআই

গোয়েন্দা রিপোর্ট শংকর কুমার দে ॥ আমেরিকার পেন্টাগনের এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, তুলনামূলকভাবে শক্তিশালী ভারতীয় সেনাবাহিনীর মোকাবেলায় ছায়াযুদ্ধ (জঙ্গীযুদ্ধ) চালিয়ে আসছে পাকিস্তান। আর এ জন্য তারা ব্যবহার করছে বিভিন্ন জঙ্গী সংগঠনকে। বাংলাদেশের গোয়েন্দাদের রিপোর্ট অনুয়ায়ী, দেশের জঙ্গী অর্থায়নের নেপথ্যে মদদ দিচ্ছে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই। আর আইএসআইর সহযোগী হচ্ছে যুদ্ধাপরাধীর দল পাকিস্তানের পুরনো দোসর জামায়াতে ইসলামী। জামায়াতে ইসলামী ব্যবসায়িক সংগঠনের মাধ্যমে বছরে নিট মুনাফা করে দেড় হাজার কোটি টাকা। নিট মুনাফার ৩ শতাধিক কোটি টাকা ব্যয় করে জঙ্গী, সন্ত্রাসী ও দলীয় কর্মকা-ে। পাকিস্তান, সৌদি আরব, কুয়েত, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ বিভিন্ন দেশের বেসরকারী সংস্থার কাছ থেকে এই অর্থ পাচ্ছে জামায়াতে ইসলামী। জামায়াতে ইসলামীর বিভিন্ন ব্যক্তির নামে আছে বিভিন্ন ধরনের সহস্রাধিক ধরনের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেই বিদেশ থেকে আসা টাকা পাচ্ছে জামায়াত। ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে জামায়াতের বিভিন্ন কর্মকর্তার নামে যেসব টাকার লেনদেন হয়েছে তার বিরাট অংশ জঙ্গী অর্থায়ন হয়েছে এবং যুদ্ধাপরাধীর বিচার বাধাগ্রস্ত করতে দেশে-বিদেশে লবিস্ট নিয়োগসহ বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে অপ-প্রচারে ব্যয় করা হয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে এ খবর জানা গেছে। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্র জানান, জামায়াতের জঙ্গী অর্থায়নের অভিযোগে ইসলামী ব্যাংকের ৮০টি শাখায় যে বিরাট অঙ্কের টাকা লেনদেন হয়েছে সেই বিষয়ে তদন্ত হচ্ছে। ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে জঙ্গী অর্থায়নের তদন্ত করে প্রমাণও পেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ জন্য শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে, যা লঘু দ-ের মতো। জামায়াতে ইসলামীর বিভিন্ন কর্মকর্তার নামে ব্যাংক, বীমা, লিজিং কোম্পানি, ওষুধ শিল্প, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, ক্লিনিক, ট্রাস্টি, রিয়েল এস্টেট, ছাপাখানা, ইলেকট্রনিক ও প্রিন্টি মিডিয়া, এনজিওসহ বিভিন্ন ধরনের সহস্রাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করা হচ্ছে। এসব প্রতিষ্ঠানের নামে পাকিস্তান, সৌদি আরব, কুয়েত, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ বিভিন্ন বেসরকারী সংস্থার কাছ থেকে আসা টাকার বিরাট অংশ পাচ্ছে জামায়াত। দেশের ভেতরে ব্যাপক জঙ্গী তৎপরতার বিষয়ে জামায়াতের অর্থায়ন, সহায়তা, ভূমিকা রাখার বিষয়ে গ্রেফতারকৃত নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী সংগঠন জেএমবি, হুজি, হিযবুত তাহরীরসহ বিভিন্ন জঙ্গী সংগঠনের শীর্ষস্থানীয় জঙ্গী নেতাদের দেয়া স্বীকারেক্তিমূলক জবানবন্দীতেও এ ধরনের তথ্য পেয়েছে গোয়েন্দা সংস্থা। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্র জানান, রাজধানীর উত্তরায় অবস্থিত আল হারমাইন, চট্টগ্রামে অবস্থিত আল রাবেতাসহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থায় অভিযান চালিয়ে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মকর্তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে এবং এসব স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের বিশেষ করে সৌদি আরব ও কুয়েত থেকে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের নামে যেসব টাকা আসত তা গোপনে জঙ্গী অর্থায়নের কাজে ব্যয় হতো। জঙ্গী অর্থায়নের বিষয়ে মদদ দিয়ে আসছে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই। দেশের ভেতরে ব্যাপক জঙ্গী তৎপরতা, ধারাবাহিক গ্রেনেড-বোমা হামলা, বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও বিস্ফোরক সংগ্রহ, তথ্যপ্রযুক্তি, জঙ্গী ও দলীয় ক্যাডারদের প্রশিক্ষণ, গ্রেফতারকৃত নেতা, কর্মী, ক্যাডার ও জঙ্গীদের মুক্ত করা, প্রচার ও দলীয় বিভিন্ন কাজে এই অর্থ ব্যয় করে চলেছে জামায়াত। যুদ্ধাপরাধীর বিচার শুরু হওয়ার পর জামায়াত যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে বিরাট অঙ্কের টাকা ব্যয়ে লবিস্ট নিয়োগ করে যুদ্ধাপরাধীর বিচার বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করেছে। এমনকি যুদ্ধাপরাধীর বিচার চলাকালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত হয়েছিল তুরস্ক থেকে আসা মুসলিম বাদ্রার হুডের কর্মকর্তারা। যুক্তরাজ্যে বিরাট অর্থের বিনিময়ে নিয়োগ দেয়া হয় লবিস্ট ক্যাডম্যানকে। ইসলামী ব্যাংককে জরিমানা ॥ বাংলাদেশ ইসলামী ব্যাংককে জঙ্গী অর্থায়নের ব্যাপারে একাধিকবার জরিমানা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী সংগঠন জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশকে (জেএমবি) আইন ও বিধিবিধান ভঙ্গ করে অর্থ লেনদেন করেছে ব্যাংকটি। ইসলামী ব্যাংককে শাস্তি দেয়ার বিষয় ও জঙ্গী অর্থায়নের বিষয়ে প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। জঙ্গী অর্থায়নের উৎস সন্ধানে টাস্কফোর্স গঠন ॥ তৃণমূল থেকে জঙ্গীবাদ নির্মূল, জঙ্গীবাদের অর্থের উৎস খুঁজে বের করা এবং এ কার্যক্রমে অধিকতর সমন্বয়ের লক্ষ্যে শিল্পমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি শক্তিশালী টাস্কফোর্স গঠন করেছে সরকার। দু’জন প্রতিমন্ত্রী, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান এবং বিভিন্ন স্তরের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তার সমন্বয়ে ১৭ সদস্যবিশিষ্ট এই টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। পাকিস্তানের নাগরিক ২০ কোটি টাকা পাঠিয়েছে চট্টগ্রামের ব্যাংকে পাকিস্তানের এক নাগরিক লন্ডনের বার্কলেস ব্যাংক থেকে চট্টগ্রামের একটি ব্যাংকে ২০ কোটি টাকা পাঠিয়েছে উগ্র মৌলবাদী জঙ্গী সংগঠনের জন্য। নিষিদ্ধ ঘোষিত উগ্র জঙ্গী সংগঠন জেএমবির সিøপার সেল গ্রুপ নিজেদের পরিচয় গোপন রাখার জন্য ‘শূন্য যোগাযোগ’ পদ্ধতি অবলম্বন করেছে। লন্ডনে এক বাংলাদেশী যুবককে উগ্র মৌলবাদী জঙ্গী সদস্য সন্দেহে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করার বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছেন গোয়েন্দারা। জেএমবির এক সিøপার সেল সদস্য যিনি আহসানউল্লাহ বাংলা টিমেরও সদস্য খোরশেদ আলম রুবেল নামের এমন এক উগ্র মৌলবাদী জঙ্গী সদস্যকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে ডিবি পুলিশ। গোয়েন্দা সূত্র জানান, এক পাকিস্তানী নাগরিক লন্ডনের বার্কলেস ব্যাংক থেকে ১৫ লাখ পাউন্ড, যা বাংলাদেশী টাকায় প্রায় ২০ কোটি টাকা পাঠিয়েছে বাংলাদেশের উগ্র মৌলবাদী জঙ্গীদের অর্থায়নের জন্য। চট্টগ্রামের একটি ব্যাংকে এই টাকা পাঠানোর খরব পাওয়ার পর তোলপাড় শুরু হয়েছে। লন্ডন থেকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রায়ত্ত একটি ব্যাংক শাখায় একটি জামে মসজিদের ডাইরেক্টর ও ডেভেলপমেন্ট নামের এ্যাকাউন্টসে চেকের মাধ্যমে এই টাকা পাঠানো হয়েছে। উগ্র মৌলবাদী জঙ্গী সংগঠনের জন্য এই টাকা পাঠানো হয়েছে বলে গোয়েন্দারা সন্দেহ করছে। লন্ডনের ২৪০ ওয়াইট চ্যাপেল রোডের বার্কলেস পিএলসি ব্রাঞ্চ থেকে এই টাকা যেই পাকিস্তানী পাঠিয়েছেন তার নাম পরিচয় অজ্ঞাত। ঢাকা ট্রিউবিন নামে অনলাইনের এক সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, র‌্যাব, এনএসআই, চট্টগ্রামের জনতা ব্যাংক শাখার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিষয়টি অবগত করা হয়েছে। উগ্র মৌলবাদী জঙ্গী সংগঠনের জন্য এই টাকা কোন পাকিস্তানী নাগরিক পাঠিয়েছে তার তদন্ত করে দেখা হচ্ছে বলে জানা গেছে। পাকিস্তানী নাগরিক চেকের মাধ্যমে কেন এত বিপুল অঙ্কের টাকা পাঠিয়েছে তা নিয়ে তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। ভারতের তদন্ত সংস্থা এনআইএ ॥ পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা থেকে ৬০ কোটি টাকা পাঠানো হয়েছে ইসলামিক ব্যাংক অব বাংলাদেশ (আইবিবিএল) ব্যাংকে। এই ব্যাংকে পাঠানো টাকা চলে গেছে মধ্যপ্রাচ্যে। মধ্যপ্রাচ্য থেকে হাত ঘুরে ভারতের জঙ্গীদের কাছে পৌঁছানো হয়েছে। টাকা পাঠানোর মাধ্যম হচ্ছে হুন্ডি। আর এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে ইসলামী ব্যাংকের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান যুদ্ধাপরাধী জামায়াত নেতা মীর কাশেম আলী। ব্রিটেনে থাকা দুই বাংলাদেশী জামায়াত নেতাও জঙ্গী অর্থায়নের সঙ্গে জড়িত। বর্ধমানের খাগড়াগড়ের বিস্ফোরণের তদন্তকারীদের তদন্তের জালে এ ধরনের তথ্য ধরা পড়েছে। বাংলাদেশ সরকারের কাছে এই বিষয়ে তথ্য চাইবে ভারতের তদন্ত সংস্থা এনআইএ। এনআইএর তদন্তে পাওয়া গেছে, বর্ধমানের খাগড়াগড়ের বোমা তৈরিকারী বাংলাদেশের জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) জঙ্গীরা। তারা বাংলাদেশে নাশকতা ঘটানো এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার ছক তৈরি করেছিল। বাংলাদেশের জামায়াত নেতারা পশ্চিমবঙ্গের শাসক দলের এক নেতার মাধ্যমে জঙ্গীদের কাছে টাকা পাঠাত। খুব শীঘ্রই বাংলাদেশের কাছে ভারত এই বিষয়ে তথ্য তুলে দিবে। পেন্টাগনের রিপোর্ট ॥ আমেরিকার পেন্টাগনের এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, তুলনামূলকভাবে শক্তিশালী ভারতীয় সেনাবাহিনীর মোকাবেলায় ছায়াযুদ্ধ চালিয়ে আসছে পাকিস্তান। আর এ জন্য তারা ব্যবহার করছে বিভিন্ন জঙ্গী সংগঠনকে। আফগানিস্তানের প্রতিপত্তি খোয়ানোর বদলা ও ক্রমশ শক্তিশালী হয়ে ওঠা ভারতীয় সেনার সঙ্গে টক্কর দিতেই বিভিন্ন জঙ্গী সংগঠনকে ব্যবহার করে ছায়াযুদ্ধ চালাচ্ছে পাকিস্তান। ভারত ও আফগানিস্তানের সুস্থিতি নষ্ট করাই পাকিস্তানের এই কাজের উদেশ্য। আফগানিস্তান পরিস্থিতি নিয়ে ছ’মাস অন্তর একটি রিপোর্ট দেয় পেন্টাগন। ছ’মাসের রিপোর্টে পেন্টাগন এই তথ্য জানিয়েছে মার্কিন কংগ্রেসকে। রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, দিল্লীর সঙ্গে ইসলামাবাদের সম্পর্ক বেশ তিক্ত। সীমান্তে গোলাগুলি চলছে। রবিবারের ওয়াগা সীমান্তে আত্মঘাতী হামলায় নিহত হয়েছে ৬০ জন। রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়, আমরা বার বারই বলছি ছায়াসেনাদের (জঙ্গী) লেলিয়ে দিচ্ছে পাকিস্তান। কারণ আফগানিস্তানে তাদের প্রভাব কমে আসছে।
×