ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পাকিস্তান-অস্ট্রেলিয়া সিরিজ নির্ধারণী টেস্ট শুরু

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ৩০ অক্টোবর ২০১৪

পাকিস্তান-অস্ট্রেলিয়া সিরিজ নির্ধারণী টেস্ট শুরু

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ একটি সাফল্য সব কিছু কিভাবে বদলে দেয় পাকিস্তান তার বড় প্রমাণ। মাত্র দশদিন আগেও যে পাকিরা ছিল নাজুক, কোণঠাসা সেই তারাই এখন উজ্জীবিত। আবুধাবিতে প্রবল প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজ নির্ধারণী দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টে আজ ফুরফুরে মেজাজে মাঠে নামছেন মিসবাহ-উল হক! চিড়ধরা মনে আত্মবিশ্বাস ফিরিয়েছে প্রথম টেস্টের সাফল্য। র‌্যাঙ্কিংয়ের দ্বিতীয়সেরা অসিদের ২২১ রানের বড় ব্যবধানে ধরাশায়ী করে পঞ্চমস্থানে উঠে এসেছে তারা। তিন নম্বর জায়গাটা হাতছানি দিয়ে ডাকছে! এ জন্য আবুধাবির এই ম্যাচে জয়, অথবা ড্র করে সিরিজ পকেটে পুড়লেই চলবে। অন্যদিকে ঘরের মটিতে এ্যাশেজে ইংলিশদের উড়িয়ে দেয়া অসিরা ঘুরে দাঁড়াতে মরিয়া। এ জন্য দক্ষিণ আফ্রিকার স্মৃতি থেকে রসদ নিচ্ছেন মাইকেল ক্লার্ক। ফেব্রুয়ারির ওই সফরে শেষ টেস্ট জিতেই সিরিজ পকেটে পুড়েছিল তারা। ‘আমরা অস্ট্রেলিয়ানরা শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত লড়ে যেতে পছন্দ করি। গত ১২ মাস অসাধারণ ক্রিকেটে খেলেছি। দক্ষিণ আফ্রিকায় পিছিয়ে পড়েও সিরিজ জিতেছি। সুতরাং এখানেও সম্ভব। এ জন্য প্রথমত ব্যাটসম্যানদের প্রতিপক্ষ স্পিনারদের বিপক্ষে ভাল খেলতে হবে। ওদের সুযোগ না দিয়ে ফ্রন্টফুটে গিয়ে স্ট্রোক খেলতে হবে। স্টিভেন স্মিথ আর গ্লেন ম্যাক্সওয়েলরা আইপিএলে যেমনটা করে থাকে। পাশাপাশি বোলারদেরও ভাল করতে হবে। অন্য পেসারদের যেমন মিচেল জনসনকে সাপোর্ট দিতে হবে, তেমনি নাথান লেয়নের মতো অভিজ্ঞ স্পিনারদের কাছ থেকে বেশি কিছু আশা করব।’ বলেন ক্লার্ক। ব্যাট হাতে অস্ট্রেলিয়া অধিনায়কের সময়টাও ভাল যাচ্ছে না। ইনজুরি কাটিয়ে ফিরলেও ফর্ম ফিরে পাননি তিনি। অথচ গত দুই মৌসুমে সাফল্যের অন্যতম রূপকার ব্যাটসম্যান-ক্লার্ক। ২ ও ৩ রান করে স্পিনারদের বলে আউট হয়েছেন তিনি। দক্ষিণ আফ্রিকা আর আরব আমিরাত যে এক নয়, পাকিস্তানী স্পিনাররাই সেটি প্রমাণ করে দিয়েছেন। অবৈধ এ্যাকশনের জন্য নিষিদ্ধ তুখোর তারকা সাঈদ আজমলের অভাব ভুলিয়ে দিয়েছেন দুই নবীন স্পিনার জুলফিকার বাবর ও ইয়াসির শাহ্। ম্যাচে প্রতিক্ষের ১৪ উইকেটই ভাগাভাগি করেছেন তারা। মূলত স্পিন জুজুতেই নাকাল হয়েছে প্রতাপশালী অস্ট্রেলিয়া। দুই ইনিংসে সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে জয়ের নায়ক অবশ্য অভিজ্ঞ ইউনুস খান। সেঞ্চুরি পেয়েছেন সরফরাজ আহমেদ ও আহমেদ শেহজাদ। এমন স্বপ্নীল পারফর্মেন্সের পর দ্বিতীয় টেস্টের দলে কোন পরিবর্তন আনেনি পাকিস্তান। তবে অতি আত্মবিশ্বাসে না ভুগতে শিষ্যদের সতর্ক করে দিয়েছেন কোচ ওয়াকার ইউনুস। দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব নেয়ার পর প্রথম সাফল্যের মুখ দেখা সাবেক এই তারকা বলেন, ‘বিশ্ব ক্রিকেটে অস্ট্রেলিয়া এমন এক দল যারা যে কোন পরিস্থিতিতে ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম। ইংন্ড্যালকে এ্যাশেজে হোয়াইটওয়াশ, দক্ষিণ আফ্রিকায় জয়ের পর ক্লার্করা এখানে এসেছে। ওয়ানডেতেও আমাদের দাঁড়াতেই দেয়নি। সুতরাং আত্মতুষ্টিতে ভোগার সুযোগ নেই। আমাদের আরও ভাল ক্রিকেট খেলতে হবে।’ সিরিজ জিতলে শ্রীলঙ্কা-ইংল্যান্ডকে পেছনে ফেলে র‌্যাঙ্কিংয়ের তৃতীয়স্থানে ওঠার সুযোগ। সঙ্গে ইতিহাসের হাতছানি মিসবাহদের সামনে। ১৯৯৫ সালের পর অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ জেতেনি পাকিস্তান। ব্যক্তিগত মাইলফলকের সামনে দাঁড়িয়ে অধিনায়ক নিজেও। ৪১ বছর বয়সী মিসবাহর ৩০ টেস্টে নেতৃত্ব দিয়ে ১৩তম জয় এটি। ১৪টি করে জয় নিয়ে তার চেয়ে এগিয়ে আছেন শুধু ইমরান খান ও জাভেদ মিয়াদাদ। সুতরাং সাবেক দুই গ্রেটকে ছোঁয়ার অপেক্ষায় তিনি। দুবাই সাফল্যে ১৯৯৫ সালের পর এই প্রথম অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টানা দুই টেস্টে জিতল পাকিস্তান। যদিও আগের জয়টি ছিল প্রায় পাঁচ বছর আগে, ইংল্যান্ডের লিডসে ২০১০Ñএ মুখোমুখি আগের ম্যাচে ৩ উইকেটে জিতেছিল তারা! দুই দশক আগের সাফল্যের পুনরাবৃত্তির সুযোগ পাকিদের সামনে। মিসবাহ-ওয়াকার এ্যান্ড কোং কি পারবেন? প্রশ্নটা থাকছে দলটি ‘আনপ্রেডিক্টেবল’ পাকিস্তান বলেই!
×