ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ঘোর আঁধারে পথ দেখাবে আগুনের নিশান...

প্রকাশিত: ০৫:২৫, ৩০ অক্টোবর ২০১৪

ঘোর আঁধারে পথ দেখাবে আগুনের নিশান...

মোরসালিন মিজান ॥ মানুষের পক্ষে সংগ্রাম। শোষণের বিরুদ্ধে লড়াই। সাম্যের সমাজ সমতার রাষ্ট্র বিনির্মাণের স্বপ্ন। না, অস্ত্র হাতে নয়। বাঙালীর শুদ্ধতম সংস্কৃতির শক্তিতে বলিয়ান হয়ে এগিয়ে চলা। গণসঙ্গীত দ্রোহের কবিতা নাটকের ভাষায় মনের কথাটি বলা। কখনও কখনও বেদম চিৎকার। সেøাগানে মুখর রাজপথ। সব মিলিয়ে উদীচী। উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী। সেই ১৯৬৮ সালের ২৯ অক্টোবর যাত্রা শুরু। তারপর পথ চলা। কেবল সামনের দিকে। ঐতিহ্যবাহী সংগঠনের গতকাল বুধবার ছিল ৪৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। এ উপলক্ষে ‘ঘোর আঁধারে পথ দেখাবে আগুনের নিশান’ সেøাগানে আনন্দঘন মিলনমেলার আয়োজন করা হয়। বাংলা একাডেমিতে আয়োজিত অনুষ্ঠানে গোষ্ঠীর বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা যোগ দেন। গণসঙ্গীতসহ নানা আয়োজনে মুখরিত ছিল মিলনায়তন। জাতীয় সঙ্গীত ও জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠানমালা। মূল পর্বটি ছিল মিলনায়তনের ভেতর। প্রথমেই আলোচনা। নাতিদীর্ঘ আলোচনায় অংশ নেন উদীচীর উপদেষ্টা মঞ্জুরুল আহসান খান, সাবেক সভাপতি গোলাম মোহাম্মদ ইদু, সৈয়দ হাসান ইমাম, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইকরাম আহমেদ, মাহমুদ সেলিম, রেজাউল করিম সিদ্দিক রানা, হাবিবুল আলম, হেলেন করিম ও উদীচীর সুহৃদ শামসুজ্জামান খান। বক্তারা বলেন, উদীচীর দীর্ঘদিনের পথ চলা। শত বাধা এড়িয়ে লক্ষ্যের দিকে উদীচী এগিয়ে চলেছে। বর্তমান সময়টিকে ব্যবসাবাদী সমাজ উল্লেখ করে বক্তারা বলেন, এখন রাজনীতি ও ব্যবসা সমার্থক। উৎসব অনুষ্ঠান এমনকি দেশপ্রেম পণ্য হয়ে যাচ্ছে। আনন্দ যন্ত্রণা সব এখন পণ্য। এই বিরুদ্ধ সময়ে পাহাড়সম বাধা ডিঙিয়ে এগিয়ে চলেছে উদীচী। এই সংগঠন মানুষের আকাক্সক্ষাকে পণ্য করে না। গানে সেøাগানে সংগ্রামে বঞ্চিতদের কথা বলে। মেহনতি মানুষের জয়গান করে। এদিন বড় মিলনায়তন পাওয়া গেলেও, উপস্থিতি ছিল কম। সেই কম উপস্থিতির একটি ব্যাখ্যাও দেয়ার চেষ্টা করেন এক বক্তা। বলেন, মনে করা যেতেই পারে, পুরোটা মিলনায়তন ভরা থাকলে ভাল হতো। তা হয়নি। না হোক। আকাশে তো কোটি কোটি তারা। কিন্তু ধ্রুবতারা একটি-ই। তিনি বলেন, সংখ্যা নয়। গুণটাই বড়। উদীচীকে সেই গুণ ধরে রাখার পরামর্শ দেন তিনি। বলেন, উদীচী-ই পারে আলোকবর্তিকা হয়ে পথ দেখাতে। অনেকদিন গোষ্ঠীর সঙ্গে থেকে যারা দূরে এখন তাদের স্মৃতিচারণ করেন বক্তারা। বলেন, অনেকে উদীচীর সঙ্গে আগের মতো নেই। তবে প্রিয় সংগঠনের আদর্শ থেকে দর্শন দূরে সরে যাননি। উদীচী থেকে কেউ চলে যেতে পারে না। উদীচী একক আছে। অনেক সংগঠন হয়ে যায়নি। কারণ এর প্রাণশক্তি। প্রাণের তাগিদে জমাটবদ্ধ হয়ে থাকে এই সংগঠনের কর্মীরা। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদসহ অনেক সংগঠনের প্রতিষ্ঠালগ্নে উদীচীর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল জানিয়ে বক্তারা বলেন, এখন এসব সংগঠন আমাদের অবদানের স্বীকৃতি দিতে চায় না। বন্ধুরা না দিলেও, শত্রুরা উদীচীকে সব সময় স্বীকৃতি দিয়ে যাচ্ছে। এ প্রসঙ্গে যশোরে উদীচীর সমাবেশে মৌলবাদীদের বোমা হামলার ঘটনাটি উল্লেখ করেন বক্তারা। এভাবে অমø মধুর আলোচনা ও স্মৃতিচারণের মধ্য দিয়ে শেষ হয় পর্বটি। অনুষ্ঠানে সদ্য প্রকাশিত ‘সত্যেন সেন স্মারক গ্রন্থ’র মোড়ক উন্মোচন করা হয়। বইতে সত্যেন সেনের বর্ণাঢ্য জীবন, রাজনৈতিক ভাবনা, বাংলা সাহিত্যে তাঁর অবদানসহ নানা বিষয় ওঠে এসেছে। সত্যেন সেনের বড় বোন প্রতিভা সেনসহ পরিবারের সদস্যরা স্মৃতিচারণ করেছেন। লিখেছেন দেশের শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি জগতের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা। সত্যেন সেনের সংক্ষিপ্ত জীবনপঞ্জি, প্রকাশিত ও অপ্রকাশিত গ্রন্থতালিকা, তাঁর রচিত ব্যঙ্গ কবিতা এবং বেশ কিছু কালজয়ী গণসঙ্গীতও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে সাড়ে সাত শ’ পৃষ্ঠার গ্রন্থে। একই দিন নব আঙ্গিকে যাত্রা শুরু করে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর ওয়েবসাইট। পরে শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। উদীচীর শিল্পীরা অনুষ্ঠানে গণসঙ্গীত, নৃত্য ও আবৃত্তি পরিবেশন করেন। এছাড়াও ছিল সমগীত, স্পন্দনসহ কয়েকটি সংগঠনের পরিবেশনা। আর পরস্পরের সঙ্গে দেখা, বহুদিন হয় নাÑ এমন আড্ডা তো ছিলই। তবে যেটি ছিল না, সেটি আত্ম সমালোচনা। এ জায়গায় উদীচী আরও একটু কাজ করতে পারে বৈকি।
×