ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

P3.1-Panel copy.jpg----

শীতের আগে দারুণ শীত শীত সময়, অন্যরকম অনুভূতি

প্রকাশিত: ০৪:৫১, ২৯ অক্টোবর ২০১৪

শীতের আগে দারুণ শীত শীত সময়, অন্যরকম অনুভূতি

প্রকৃতিতে পরিবর্তনের হাওয়া মোরসালিন মিজান ॥ সবে কার্তিক। বাংলা মাসের ১৩ দিন গত হয়েছে। আজ বুধবার ১৪তম দিন। এভাবে পুরো মাস শেষ হবে। বিদায় নেবে অগ্রহায়ণ। তার পর শীত। পৌষের প্রথম দিন থেকে প্রিয় ঋতুর আনুষ্ঠানিক শুরু। শুরুটা হওয়ার কথা। অথচ উল্টোটি হচ্ছে এখন। হঠাৎ করেই যেন শীত নেমে এসেছে প্রকৃতিতে। গত দুই-তিন দিনের আবহাওয়া গায়ে রীতিমতো কাঁপন ধরিয়ে দিয়েছে। সোমবারের পর মঙ্গলবারও অভিন্ন ছিল অবস্থা। এ দিন ভোর বেলাটি বৃষ্টির জলে ধুয়ে গেছে। খুব নয়, হালকা বারিধারা। কিছুক্ষণ পর খ্যান্ত। তবে এরই মাঝে শীত সুযোগ করে নেয়। সারাদিন আর সূর্যি মাামার দেখা মেলেনি। সন্ধ্যার কিছু আগে সামান্য রোদের দেখা মিললেও, তাতে শীত দূর হয়নি। রাতে বরং বেড়েছিল। অবশ্য হেমন্তের শীত ঠিক শীত নয়। শীত শীত। হেমন্তে এ-ই হয়। শীতের বাহন হিসেবে কাজ করে হেমন্ত। বলা হয়ে থাকে, হিম থেকেই হেমন্ত। এই ঋতু শীতের আগমনী বার্তা বহন করে। বার্তাটি এবার একটু আগেভাগেই পেতে শুরু করেছে রাজধানীবাসী। এখন রাত সামান্য বাড়তেই শিশির ঝরছে। ঘাসের ডগায়, ফুলের পাপড়িতে টুকরো টুকরো জল। সকালের রোদে এই জল চিকচিক করে উঠছে। খোলা আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে গল্প করা, আড্ডা দেয়া মানুষের মাথা ভিজিয়ে দিচ্ছে রাতের শিশির। বিন্দু বিন্দু জল মাথায় নিয়ে বাড়ি ফিরছেন অনেকে। খুব যারা স্বাস্থ্য সচেতন, মাথায় ক্যাপ পরে নিচ্ছেন। রাতে ঘুমোনোর সময় বাতির সঙ্গে ফ্যানটি বন্ধ না করলে এখন চলছে না। শেষরাতে গায়ে জড়িয়ে নিতে হচ্ছে হালকা কাঁথাও। ভোরবেলায় সিগারেটের ধোঁয়ার মতো দেখতে কুয়াশা। ফলে দিনের শুরুতে হালকা পোশাক পরিত্যাগ করতে হচ্ছে। সে জায়গাটি নিতে শুরু করেছে ভারি জামা কাপড়। পরিবর্তনটা এখনও অত চোখে পড়ে না। তবে ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে ওঠবে। এখনকার শীতটি বর্ণনা করতে গিয়ে কবিগুরু লিখেছেন, হিমের রাতে ওই গগনের দীপগুলিরে/হেমন্তিকা করল গোপন আঁচল ঘিরে।/ঘরে ঘরে ডাক পাঠালÑ ‘দীপালিকায় জ্বালাও আলো/জ্বালাও আলো, আপন আলো, সাজাও আলোয় ধরিত্রীরে...।’ প্রকৃতিপ্রেমী কবি অন্যত্র লিখেছেনÑ হায় হেমন্তলক্ষ্মী, তোমার নয়ন কেন ঢাকা-/হিমের ঘন ঘোমটাখানি ধুমল রঙে আঁকা।/সন্ধ্যাপ্রদীপ তোমার হাতে মলিন হেরি কুয়াশাতে/কণ্ঠে তোমার বাণী যেন করুণ বাষ্পে মাখা...। বাংলার রূপে মহামুগ্ধ কবি জীবনানন্দ দাশের বর্ণনাটি এরকমÑ পা-ুলিপি কাছে রেখে ধূসর দ্বীপের কাছে আমি/নিস্তব্ধ ছিলাম বসে;/শিশির পড়িতেছিল ধীরে-ধীরে খসে;/নিমের শাখার থেকে একাকীতম কে পাখি নামি/উড়ে গেল কুয়াশায়, কুয়াশার থেকে দূর-কুয়াশায় আরো...। কবি সুফিয়া কামাল লিখেছিলেন, সবুজ পাতার খামের ভেতর/হলুদ গাঁদা চিঠি লেখে/কোন্ পাথারের ওপার থেকে/আনল ডেকে হেমন্তকে?/আনল ডেকে মটরশুঁটি,/খেসারি আর কলাই ফুলে/আনল ডেকে কুয়াশাকে/সাঁঝ সকালে নদীর কূলে।/সকাল বেলায় শিশির ভেজা/ঘাসের ওপর চলতে গিয়ে/হাল্কা মধুর শীতের ছোঁয়ায়/শরীর ওঠে শিরশিরিয়ে...। তবে প্রকৃতির এমন পরিবর্তন কিংবা শীত শীত অনুভবকে শীতের শুরু বলা যাবে না। আবহাওয়া অধিদফতর জানায়, এখন পশ্চিমা লঘুচাপের প্রভাবে মাঝে মধ্যে কিছু বৃষ্টি হচ্ছে। ফলে কিছুটা শীতের অনুভূতি হচ্ছে। অনেকেরই মনে হতে পারে, শীত বুঝি আগেভাগে চলে এসেছে। আদতে তা নয়। আবহাওয়া অফিস জানায়, সোমবার ঢাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২৭.২ ডিগ্রী সেলসিয়াস। সর্বনিম্ন ছিল ২২.৫ ডিগ্রী। দু’য়ের মধ্যকার ব্যবধান যথেষ্ট কম হওয়ায় শীত অনুভূত হয়েছে। এখন যত দিন যাবে ততই সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পার্থক্য কমতে থাকবে। পার্থক্য যত কমবে তত শীত বাড়তে থাকবে বলে জানান আবহাওয়াবিদরা। নবেম্বরটা এভাবেই যাবে। ডিসেম্বর থেকে বইতে শুরু করবে শীতের হাওয়া। বাংলা পৌষ ও মাঘÑ এই দুই মাস প্রকৃত শীতের সময়। এ সময় তীব্র থেকে তীব্রতর হবে শীত। হ্যাঁ, কিছু ভোগান্তির ব্যাপার তো থাকবেই। এর পরও সত্য, শীতকালের কোন তুলনা হয় না। বাঙালীর খুব প্রিয় ঋতুগুলোর অন্যতম এই শীত। আপাতত এর জন্য প্রতীক্ষা।
×