ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

জেএমবির পরিকল্পনা ॥ হাসিনা খালেদা হত্যা

প্রকাশিত: ০৬:০৩, ২৭ অক্টোবর ২০১৪

জেএমবির পরিকল্পনা ॥ হাসিনা খালেদা হত্যা

০ ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদন ০ দুবাই বসে পাকিস্তানী গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই সব নিয়ন্ত্রণ করছে ০ বোমা মিজান এখন কলকাতায় শংকর কুমার দে ॥ বাংলাদেশের দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের নেত্রী আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াসহ দুই দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে হত্যার পরিকল্পনা করেছে জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি)। প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, এমপি, গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, স্বাধীনতার পক্ষের বুদ্ধিজীবীদের গুপ্তহত্যা এবং বঙ্গভবন, গণভবন, বিচারপতিদের বাসভবন, মন্ত্রী, এমপিদের বাসভবন, আদালতপাড়া, বিদ্যুতকেন্দ্র, টেলিভিশন ও রেডিও স্টেশন, ওয়াসা, গ্যাস ফিল্ডসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় গুপ্ত হামলার নীল নক্সা তৈরি করেছিল নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী সংগঠন হরকত-উল-জিহাদ (হুজি)। প্রায় ৮ মাস আগে ময়মনসিংহের ত্রিশালের সাইনবোর্ড এলাকায় প্রিজনভ্যানে গুলিবর্ষণ ও গ্রেনেড হামলার মাধ্যমে পুলিশ হত্যা করে আদালতে হাজিরা দিতে নিয়ে যাওয়া জেএমবির জঙ্গীদের ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে যাওয়া মৃত্যুদ-াদেশ সাজাপ্রাপ্ত আসামি বোমা মিজান এখন আত্মগোপন করে আছে ভারতের কলকাতায়। ভারতের পশ্চিমবঙ্গকে নিরাপদ ঘাঁটিতে পরিণত করে সেখান থেকে বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার বিরাট এক জঙ্গী ছক তৈরি করছিল নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি)। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্র এ খবর জানিয়েছেন। গোয়েন্দা সূত্র জানায়, শুধু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াই নন, সরকারের মন্ত্রী, এমপি, গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, স্বাধীনতার পক্ষের বুদ্ধিজীবীদের গুপ্তহত্যা এবং বঙ্গভবন, গণভবন, বিচারপতিদের বাসভবন, মন্ত্রী, এমপিদের বাসভবন, আদালতপাড়া, বিদ্যুতকেন্দ্র, টেলিভিশন ও রেডিও স্টেশন, ওয়াসা, গ্যাস ফিল্ডসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় গুপ্ত হামলার নীল নক্সা ছক তৈরি করেছিল নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী সংগঠন হরকত-উল-জিহাদ (হুজি)। এ জন্য দেশের সকল জঙ্গীদের সংগঠিত করে নতুন সংগঠন গড়ে তুলে তার নামকরণ দিয়েছে বাংলাদেশ জিহাদী দল। নেতৃত্ব দিচ্ছে কারাগারে আটক নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী সংগঠন হরকত-উল-জিহাদ (হুজি)-এর প্রধান মুফতি আবদুল হান্নান ও মাওলানা আবু সাঈদ ওরফে আবু জাফর। হরকত-উল-জিহাদ বাংলাদেশের অপারেশন উইংয়ের নেতা ও ফতুল্লা এলাকার একটি মসজিদের ইমাম মোঃ রফিক আহমেদ ওরফে সাজিদ, রাজধানীর প্রাইম ইউনিভার্সিটির কেমিস্ট্রি শেষ বর্ষের ছাত্র মোঃ উমর ওরফে ফয়জুল ওরফে রবি, মোঃ নাদিম ও মোঃ সালাউদ্দিন আহমেদকে দুটি মামলায় ছয় দিনের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করে এই ধরনের চাঞ্চল্যকর ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে বড় ধরনের ভয়াবহ নাশকতার নীল নক্সা বাস্তবায়নের জন্য যারা অর্থ যোগান দিত তাদের কয়েকজনের নাম পেয়েছে গোয়েন্দারা। এর মধ্যে দুই বাংলাদেশী ব্যবসায়ীকে শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের গ্রেফতারে বিষয়ে অভিযান পরিচালনার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এই ব্যবসায়ীরা হুজির জঙ্গীদের বলেছেন, ‘মানি ইজ নো প্রবলেম’ অর্থাৎ টাকার কোন অভাব হবে না। নীল নক্সা বাস্তবায়ন করার পথে অগ্রসর হও। পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হতেই গোপন সূত্রের মাধ্যমে পাওয়া খবরের ভিত্তিতে গ্রেফতার হয় হুজির চার জঙ্গী। হুজির চার জঙ্গীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পাওয়া তথ্যানুযায়ী জানা গেছে, যুক্তরাজ্যে আছে হুজির শত শত জঙ্গী সদস্য। তারা আন্তর্জাতিক জঙ্গী সংগঠন আইএসের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছে। পাকিস্তানের জঙ্গীদের সঙ্গে আছে তাদের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ। ভারতের তিহার জেলে আটক ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার অন্যতম আসামি দুই সহোদর মোরসালেহীন ও মুত্তাকীনের সঙ্গেও যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছে হুজির জঙ্গীরা। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানের খাগড়াগড়ের বোমা বিস্ফোরণে নিহত দুই জেএমবির জঙ্গী শাকিল আহমেদ ও সোবাহান ম-লসহ সেখানকার জঙ্গীদের সঙ্গেও তাদের যোগাযোগ রয়েছে বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে গ্রেফতারকৃত হুজির জঙ্গীরা। হুজির জঙ্গীদের জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, বাংলাদেশÑভারত সীমান্তের সাতক্ষীরায় তারা স্থায়ী জঙ্গী আস্তানা গড়ে তোলার জন্য জায়গা কেনার চেষ্টা করে যাচ্ছিল। এ জন্য জায়গাও চিহ্নিত করা হয়েছে। অর্থেরও যোগান প্রস্তুত। জঙ্গীরা রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্নস্থানে গুপ্ত হত্যা, গুপ্ত হামলা ও নাশকতা করে নিরাপদ স্থান হিসেবে সাতক্ষীরায় তাদের কেনা জায়গায় গড়ে তোলা আস্তানায় আশ্রয় নেয়ার পরিকল্পনা করেছিল। বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা যদি তাদের আস্তানায় হানা দিত তাহলে তারা সীমান্ত পেরিয়ে সহজে যাতে ভারতে চলে যাতে ভারতে চলে যেতে পারে সে জন্যই সাতক্ষীরায় জমি কিনে জঙ্গী আস্তানা গড়ে তোলার চেষ্টা করছিল। গোয়েন্দা সূত্র জানায়, হুজির প্রধান মুফতি আবদুল হান্নান ও মাওলানা সাইদুর রহমান ওরফে আবু জাফর কারাগারে আটক থেকে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে গুপ্ত হত্যা ও গুপ্ত হামলার নীল নক্সা বাস্তবায়নের জন্য নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছিল। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছিল হুজির বড় টার্গেট। গোপালগঞ্জে ৭৮ কেজি ওজনের বোমা পুঁতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনকে হত্যার চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর থেকে বার বার তাঁকে হত্যার টার্গেট করে যাচ্ছে হুজি। কিন্তু তাদের পরিকল্পনা ফাঁস হয়ে যাওয়ায় গ্রেফতার হয়ে যাচ্ছে হুজির সদস্যরা। তার পরও ভিআইপিদের টার্গেট করে ফের নতুন কৌশলে মাঠে নামে নিষিদ্ধ হুজিবি। সুযোগ পেলেই তারা এবার উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বোমা দিয়ে উড়িয়ে দিত ভিআইপিদের গাড়ি। আর এ জন্য তারা সংগঠিত হচ্ছিল। গ্রেফতারকৃত ভয়ঙ্কর ৪ জঙ্গীর কাছ থেকে এ ধরনের চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে এসেছে বলে জানিয়েছেন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। দুই নেত্রী টার্গেট ॥ বাংলাদেশের দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের নেত্রী আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াসহ দুই দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে হত্যার পরিকল্পনার করেছে জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি)। বাংলাদেশকে এই বিষয়ে দ্রুততম সময়ের মধ্যে একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তদন্তের বরাত দিয়ে ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওই কর্মকর্তা বলেছেন, তদন্তে প্রতিদিনই আমরা নতুন তথ্য পাচ্ছি। আমাদের মনে হচ্ছে এ বিষয়গুলোও প্রতিবেদনে যোগ করা উচিত। কেননা এসব বিষয় আমাদের মতো বাংলাদেশের জন্যও সমান গুরুত্বপূর্ণ। গত ২ অক্টোবর বর্ধমানে বিস্ফোরণের ঘটনার পর ভারতের জাতীয় তদন্ত সংস্থার (এনআইএ) অনুসন্ধানে পশ্চিমবঙ্গে ৫৮টি জঙ্গী ঘাঁটির সন্ধান পাওয়া গেছে। এই তথ্যসহ প্রতিবেদনের মাধ্যমে বাংলাদেশকে জঙ্গী তৎপরতার বিস্তারিত বিষয় জানানো হবে। এনআইএ এবং গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ ও ইন্টেলিজেন্স ব্যুরোর সরবরাহ করা তথ্যের ভিত্তিতে ওই প্রতিবেদন তৈরির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। জঙ্গী তৎপরতার সামগ্রিক বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনার জন্য সোমবার কলকাতায় পৌঁছাচ্ছেন ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল, ন্যাশনাল সিকিউরিটি গার্ডসের প্রধান জেএন চৌধুরী ও ইন্টেলিজেন্স ব্যুরোর প্রধান সৈয়দ আসিফ ইব্রাহিম। তদন্তের শুরুতে এ ঘটনায় এনআইএর তদন্তের বিরোধিতা করেছিল মমতার তৃণমূল সরকার। তারা বলেছিল, ভারতীয় সংবিধান অনুযায়ী আইনশৃঙ্খলার বিষয়টি রাজ্য সরকারেরই দেখার কথা। কেন্দ্র তখন বলেছে, বিষয়টি নিছক আইনশৃঙ্খলার বিষয় নয়। এটা এমন নয় যে একটি রাজনৈতিক দলের কর্মীরা প্রতিপক্ষকে মারবে বলে হাতবোমা বানাচ্ছিল। এর সঙ্গে আমাদের জাতীয় নিরাপত্তা এবং আমাদের প্রতিবেশী বন্ধু রাষ্ট্র বাংলাদেশের বিষয় জড়িত। কেন্দ্রের তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেছেন, যে জঙ্গী পরিকল্পনা আমরা উদ্ঘাটন করেছি তা তাদের গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে। ইন্ডিয়ান মুজাহিদীন ও কাশ্মীরের জঙ্গীদের সঙ্গে মিলে পশ্চিমবঙ্গে এসব জঙ্গী ঘাঁটি গড়ে তোলার ক্ষেত্রে পাকিস্তানী গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইএর ইন্ধন স্পষ্ট। জেএমবি ও পাকিস্তানের জঙ্গী সংগঠন আল মুজাহিদীনের নেতাদের মধ্যে অসংখ্য ফোন কল আদান-প্রদান হয়েছে। আল মুজাহিদীন আল কায়েদার সহযোগী হলেও আইএসআই তদের গোপনে মদদ দিচ্ছে। বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার পরিকল্পনা ॥ আইএসআই দুবাইয়ের গোপন স্থান থেকে বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার এই পুরো পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কাজ করছিল বলে তদন্তে পেয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা। তদন্তে পাওয়া তথ্যে দেখা গেছে, জঙ্গীদের তাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশে তালেবান স্টাইলের পরিস্থিতি সৃষ্টি করা, যাতে ভারতের বিরুদ্ধে গুপ্ত লড়াই চালানো সম্ভব হয়। শুধু তাই নয়, ভারতের পশ্চিমবঙ্গকে নিরাপদ ঘাঁটিতে পরিণত করে সেখান থেকে বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার বিরাট এক জঙ্গী ছক তৈরি করছিল নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি)। সেই বোমা মিজান কলকাতায় ॥ সেই বোমা মিজান মাসখানেক আগেও কলকাতার উপকণ্ঠে রাজারহাটে অবস্থান করছিলেন বলে তথ্য পেয়েছেন ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা এনআইএ। গত ২ অক্টোবর বর্ধমানের খাগড়াগড়ের বোমা বিস্ফোরণের ঘটনার পর নতুন করে মিজানের খোঁজে অনুসন্ধান শুরু করেছেন ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ত্রিশালের সাইনবোর্ড এলাকায় প্রিজনভ্যানে হামলা চালিয়ে পুলিশ হত্যা করে জেএমবির শূরা সদস্য রাকিবুল হাসান ও সালাউদ্দিন সালেহীন ওরফে সানি (৩৮) এবং বোমা বিশেষজ্ঞ মিজানকে (৩৫) ছিনিয়ে নেয় জেএমবির জঙ্গীরা। ছিনিয়ে নেয়া জঙ্গীরা পালানোর পথে ওইদিনই মির্জাপুরে গ্রেফতার হন রাকিবুল হাসান। পরে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন রাকিব। পলাতক জঙ্গীদের সীমান্ত পার হওয়া ঠেকাতে সতর্কতা জারি করা হয়। তাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কারও ঘোষণা করা হয় পাঁচ লাখ টাকা। বর্ধমানের খাগড়াগড়ের তদন্তে এসে ভারতের জাতীয় তদন্ত সংস্থার (এনআইএ) এক কর্মকর্তা বলেছেন, এখন আমরা দেখতে পাচ্ছি পশ্চিমবঙ্গে জেএমবির বিরাট এক নেটওয়ার্ক গড়ে উঠেছে। বিভিন্ন স্থানে বোমা তৈরি হচ্ছে। মিজান জেএমবির তরুণ জঙ্গীদের বোমা বানানোর প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। এমন সন্দেহ করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। তদন্ত সংস্থার সন্দেহ, একুশ শতকের শুরুর দিকে পাকিস্তানী জঙ্গী সংগঠন লস্কর-ই-তৈয়েবার কুখ্যাত জঙ্গী নসরুল্লাহর কাছ থেকে বোমা বানানোর প্রশিক্ষণ পেয়েছিলেন মিজান। পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে লস্কর-ই-তৈয়েবার ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ নেন তিনি। ভারতে বিভিন্ন জঙ্গী সংগঠনের বোমা বিশেষজ্ঞদের সঙ্গেও তার যোগাযোগ ছিল তার। মিজানকে ধরতে পারলে তা হবে আমাদের জন্য একটি বড় সাফল্য। বাংলাদেশ ও ভারতের জঙ্গী তৎপরতার অনেক অজানা কাহিনী বের হয়ে আসবে বলে মনে করেন তদন্ত সংস্থা। যেসব তথ্য দিচ্ছে চার হুজি ॥ গোয়েন্দারা বলছেন, ছোটখাটো নয়, উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বোমা তৈরি করার টার্গেট। এ নিয়ে রীতিমতো গবেষণাও শুরু করে তারা। গড়ে তোলা হয় গবেষণাগার। সেখানে রাত-দিন উচ্চ ক্ষমতার বোমা তৈরি নিয়ে চলত গবেষণা। নানা উপাদানসহ দেশী-বিদেশী বোমা তৈরির নির্দেশিকাও রাখা হতো। এ বিষয়ে প্রচুর পড়াশোনাও করতে হতো গবেষকদের। হরকত-উল- জিহাদ বাংলাদেশের (হুজিবি) এমন দুটি গবেষণাগারের সন্ধান পেয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। সেখানে অভিযান চালিয়ে পাকিস্তানে তৈরি কয়েকটি মেশিনগান, বিপুল পরিমাণ উচ্চ ক্ষমতার বিস্ফোরক, ডেটোনেটর বোস্টার, মেটালিক বোমা কন্টেনার, সুইচ, পিপেট, ফানেলসহ বোমা তৈরির বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়েছে। সেই সঙ্গে গ্রেফতার করা হয়েছে বোমা বানানোর বিশেষজ্ঞসহ চার হুজিবি সদস্যকে। গ্রেফতারের পর তারা বোমা তৈরি, ল্যাব তৈরির সহায়তাকারী, আর্থিক যোগানদাতাদের নামসহ ভয়াবহ তথ্য দিয়েছে। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থান ধ্বংসলীলায় পরিণত করার টার্গেট নিয়েই তারা গত রমজান মাসে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা ও রাজধানীর ওয়ারীর টিকাটুলীতে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বোমা তৈরির গবেষণাগার গড়ে তোলে। এই গবেষণাগারের পুরো খরচ বহন করতেন দেশের বিশিষ্ট কয়েকজন ব্যবসায়ী। ইতোমধ্যে তাদের ওপর নজরদারি শুরু করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। ওই ব্যবসায়ীরাও নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী সংগঠনগুলোর মতাদর্শের বলে জানিয়েছেন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। গত আগস্টে হামলার পরিকল্পনা ছিল গত আগস্টে রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে তাদের বড় ধরনের হামলার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু তাদের নেতা আগস্টে সেই পরিকল্পনা থেকে সরে আসার নির্দেশ দেয়। এজন্য কিছু ডেটোনেটরও তৈরি করেছিল তারা। ডেটোনেটর তৈরি সহজ নয়। উদ্ধারকৃত ল্যাবরেটরিগুলো থেকে ১০০ গ্রাম এইচএমডিটি উদ্ধার করা হয়। যা দিয়ে ২৫টি ডেটোনেটর তৈরি করা সম্ভব ছিল। ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রাজশাহীর গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ও স্থাপনার ওপর হামলার পরিকল্পনা ছিল তাদের। এছাড়া গণজাগরণ মঞ্চেও হামলার পরিকল্পনা ছিল। কারাগারে থাকা মুফতি হান্নান ও আবু জাফরের নির্দেশ পালন করত তারা। কারাগারে প্রায়ই তারা তাদের সঙ্গে সাক্ষাত করতে যেত তারা। বাংলাদেশে সব জঙ্গী গ্রুপ নিয়ে ‘বাংলাদেশ জিহাদী গ্রুপ বা দল নামে একটি প্লাটফর্ম বা সংগঠনস তৈরির কাজ করছিল তারা। গ্রেফতারকৃত ভয়ঙ্কর ৪ জঙ্গীকে ৬ দিনের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদে এই ধরনের চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে এসেছে।
×