ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

খালেদা জিয়া ফের হরতালের অজুহাত দেখিয়ে আদালতে গেলেন না

প্রকাশিত: ০৬:০১, ২৭ অক্টোবর ২০১৪

খালেদা জিয়া ফের হরতালের অজুহাত দেখিয়ে আদালতে গেলেন না

স্টাফ রিপোর্টার ॥ এবার হরতালে নিরাপত্তাহীনতার অজুহাত দেখিয়ে আদালতে হাজির হননি এতিমের টাকা লুটসহ দুই দুর্নীতি মামলার (জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট) আসামি বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। এ দুই মামলায় শুনানির জন্য এ পর্যন্ত নির্ধারিত ৪৫ কার্যদিবসে ৪০ দিনই অনুপস্থিত থেকেছেন তিনি। রবিবার ঢাকার তিন নম্বর বিশেষ জজ বাসুদেব রায়ের আদালতে এই দুই মামলার বাদী দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপপরিচালক হারুন অর রশীদের সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য নির্ধারিত দিন ছিল। তবে হরতালের নিরাপত্তাহীনতা ও সুপ্রীমকোর্টে শুনানির অপেক্ষায় থাকা লিভ টু আপীল (আপীল অনুমতি) আবেদনের আইনজীবীর মাধ্যমে সময় আবেদন করেন খালেদা জিয়া। পরে খালেদা জিয়ার আবেদন মঞ্জুর করে সাক্ষ্য গ্রহণে জন্য আগামী ৯ নবেম্বর ধার্য করেছেন আদালত। কয়েকটি ইসলামী দলের ডাকে সারাদেশে সকাল-সন্ধ্যা এই হরতাল আহ্বান করা হয়। অন্যদিকে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার লিভ টু আপীল (আপীল অনুমতি) আবেদনের শুনানির জন্য আগামী ৬ নবেম্বর বৃহস্পতিবার দিন ধার্য করেছে সুপ্রীমকোর্ট। রবিবার প্রধান বিচারপতি মোঃ মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বে আপীল বিভাগের পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ এ দিন ঠিক করে। এর আগে আপীল বিভাগের অবকাশকালীন চেম্বার বিচারপতি মোঃ আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা গত ১৪ অক্টোবর এক আদেশে খালেদা জিয়ার আবেদনের ওপর আপীল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে ২৭ নবেম্বর শুনানির দিন ধার্য করেছিল। এরপর দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) শুনানির দিন এগিয়ে আনতে গত ১৬ অক্টোবর আবেদন করে। আপীল বিভাগের চেম্বার বিচারপতির আদালত গত ১৯ অক্টোবর এ আবেদনের ওপর শুনানির জন্য আপীল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে গত ২৩ অক্টোবর দিন ধার্য করে দিয়েছিল। ওই দিন আবেদনটির ওপর শুনানি শেষে রবিবার আদেশের জন্য রাখা হয়েছিল। আবেদনের ওপর দুদকের পক্ষে আইনজীবী খুরশীদ আলম খান এবং পরে খালেদা জিয়ার পক্ষে এ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন শুনানি করেন। এ সময় রাষ্ট্রপক্ষে এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও অতিরিক্ত এ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন। এ বিষয়ে খুরশীদ আলম খান সাংবাদিকের বলেন, এ মামলায় নিম্ন আদালতে সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য রয়েছে। কিন্তু একই মামলা নিয়ে আসামি পক্ষ বার বার উচ্চ আদালতে আসছে। ফলে সাক্ষ্য গ্রহণ করা যাচ্ছে না। আদালত আগামী ২৭ নবেম্বর খালেদা জিয়ার লিভ টু আপীল শুনানির জন্য রেখেছিল। শুনানির দিন এগিয়ে আনার জন্য দুদকের পক্ষে আবেদন করা হয়েছিল। শুনানি শেষে আদালত দুদকের আবেদন মঞ্জুর করে শুনানির তারিখ এগিয়ে এনে নতুন তারিখ ধার্য করে দিয়েছে। এর আগে গত ১৯ মার্চ ঢাকার তিন নম্বর বিশেষ জজ বাসুদেব রায় জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াসহ অন্য আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। এ অভিযোগ গঠনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে খালেদা জিয়া গত ১৩ এপ্রিল হাইকোর্টে রিভিশন আবেদন করেন। হাইকোর্ট ২৩ এপ্রিল আবেদনটি খারিজ করে দেয়। এ খারিজ আদেশের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়া আপীল বিভাগে লিভ টু আপীল আবেদন করেন। নিম্ন আদালতে সাক্ষ্য গ্রহণ ৯ নবেম্বর ॥ এর আগে গত ২২ সেপ্টেম্বর জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার প্রথম সাক্ষী বাদী দুদকের উপপরিচালক হারুন অর রশীদের আংশিক সাক্ষ্য গ্রহণের পর গত ১৩ অক্টোবর তার অসমাপ্ত সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য ছিল। কিন্তু ১৩ অক্টোবর খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা আদালতের প্রতি অনাস্থা এনে সাক্ষ্য গ্রহণ পেছানোর আবেদন জানান। রাজধানীর বকশীবাজারে ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে স্থাপিত তিন নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক বাসুদের রায় সাক্ষ্য গ্রহণ মুলতবি করে ২৬ অক্টোবর খালেদা জিয়াকে আদালতে হাজির হতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। একই সঙ্গে অপমাপ্ত সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য ২৬ অক্টোবরই নির্ধারণ করেছিলেন। কিন্তু হরতালে নিরাপত্তাহীনতার কারণ দেখিয়ে আদালতে হাজির না হয়ে আইনজীবীর মাধ্যমে সাক্ষ্য গ্রহণ পেছাতে সময়ের আবেদন জানান খালেদা জিয়া। খালেদা জিয়ার পক্ষে তাঁর আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া এ আবেদন জানান। খালেদার আইনজীবীরা আদালতকে জানান, জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট মামলায় খালেদার লিভ টু আপীলের শুনানির জন্য ৬ নবেম্বর তারিখ রাখা হয়েছে। তার আগ পর্যন্ত সাক্ষ্য মুলতবি রাখার আবেদন জানানো হচ্ছে। শুনানি শেষে খালেদার আবেদন মঞ্জুর করে বাদীর অসমাপ্ত সাক্ষ্য গ্রহণ পিছিয়ে ৯ নবেম্বর নতুন দিন ঠিক করেন আদালতের বিচারক বাসুদেব রায়। ওই দিন খালেদা জিয়াকে আদালতে হাজির করাতে আইনজীবীদের আদেশ দিয়েছে আদালত। মামলারও বাদী ও সাক্ষী দুদকের উপ-পরিচালক হারুন অর রশীদ আদালতে উপস্থিত ছিলেন। তিনি জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলারও বাদী ও সাক্ষী। এ মামলাটির সাক্ষ্য গ্রহণ পরে হবে। এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলি মোশাররফ হোসেন কাজল জনকণ্ঠকে বলেন, এবার সুপ্রীমকোর্টে শুনানির অপেক্ষা। আপীল বিভাগে খালেদা জিয়ার করা লিভ টু আপীল আবেদন যদি খারিজ হয়ে যায়, তবে নিম্ন আদালতে অভিযোগের ওপর (চার্জ) শুনানি শুরু হবে। আপীল বিভাগে খালেদা জিয়ার অভিযোগ চার্জ গঠন সঠিক হয়নি। ৬ নবেম্বর এ আবেদনের ওপর আপীল বিভাগে শুনানি শুরু হবে। খালেদা ছাড়া জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার অপর পাঁচ আসামি হচ্ছেন-বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান, মাগুরার সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল ওরফে ইকোনো কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমান। তাদের মধ্যে কাজী সালিমুল হক কামাল ওরফে ইকোনো কামাল এবং শরফুদ্দিন আহমেদ জামিনে আছেন। তারা আদালতে হাজির ছিলেন। মামলার অপর আসামি বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশের বাইরে আছেন। তার পক্ষে তার আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া আদালতে হাজিরা দেন। অপর দুই আসামি ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমান মামলার শুরু থেকেই পলাতক। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের নামে দুর্নীতির অভিযোগে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় মামলাটি দায়ের করে দুর্নীতি দমন কমিশন। এতিমদের সহায়তা করার উদ্দেশ্যে একটি বিদেশী ব্যাংক থেকে আসা ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাত করার অভিযোগ এনে এ মামলা দায়ের করা হয়। মামলাটি তদন্ত করে দুদকের সহকারী পরিচালক হারুনুর রশীদ খালেদা জিয়া তারেক রহমানসহ অপর চারজনকে অভিযুক্ত করে ২০০৯ সালের ৫ আগস্ট আদালতে চার্জশীট দাখিল করেন। অন্যদিকে ২০১১ সালের ৮ আগস্ট জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে অর্থ লেনদেনের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়াসহ চারজনের নামে তেজগাঁও থানায় জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা দায়ের করেছিলেন দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক হারুন অর রশীদ।
×