ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বড়দিন সামনে রেখে চাঙ্গা দেশের তৈরি পোশাক খাত

প্রকাশিত: ০৬:২০, ২৬ অক্টোবর ২০১৪

বড়দিন সামনে রেখে চাঙ্গা দেশের তৈরি পোশাক খাত

ইইউ থেকে বিপুল অর্ডার এম শাহজাহান ॥ বড়দিন সামনে রেখে চাঙ্গা দেশের তৈরি পোশাক শিল্পখাত। ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এবং যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ১০-১৫ শতাংশ রফতানি আদেশ বৃদ্ধি পেয়েছে। খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের প্রধান উৎসব বড়দিন কেন্দ্র করে তৈরি পোশাকের প্রধান ক্রেতা ইইউ ও যুক্তরাষ্ট্রের বাজার এখন জমজমাট। আগামী ২৫ ডিসেম্বরের বড়দিনের মার্কেট ধরতে পোশাকের শিপমেন্ট পেতে তাগাদা দিচ্ছে ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো। আর এ কারণে নবেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকে পুরোদমে শিপমেন্ট কার্যক্রম শুরু হবে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রানা প্লাজা দুর্ঘটনা এবং জিএসপি ইস্যুতে এ শিল্পে যে বাড়তি চাপ তৈরি হয়েছিল তা কেটে যাচ্ছে। রফতানি আদেশ বৃদ্ধি পাওয়ায় পোশাক শিল্পের সুদিন আবার ফিরে আসছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। জানা গেছে, বড়দিন সামনে রেখে পুরনো এবং নতুন সব বাজারে পোশাক রফতানি বাড়ছে। বিশেষ করে নতুন বাজারে রফতানি প্রবৃদ্ধি সবচেয়ে ভাল। নতুন বাজার থেকে রফতানি আয়ে প্রবৃদ্ধি বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। ২০১২-১৩ অর্থবছরে নতুন বাজারে প্রবৃদ্ধি ছিল ১২ দশমিক ৭১ শতাংশ, যা ২০১৩-১৪ অর্থবছরে বেড়ে হয়েছে ২১ দশমিক ১৫ শতাংশ। এছাড়া বড়দিন সামনে রেখে পোশাকের বড় ক্রেতা ইইউ এবং যুক্তরাষ্ট্রের বাজারেও রফতানি আদেশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদী জনকণ্ঠকে বলেন, খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের প্রধান উৎসব বড়দিন সামনে রেখে তৈরি পোশাক শিল্পখাতের রফতানি আদেশ বৃদ্ধি পেয়েছে। গত তিন মাসে এ শিল্পের প্রবৃদ্ধি নেগেটিভ ধারায় থাকলেও এখন তা ইতিবাচক অবস্থায় রয়েছে। রফতানি আদেশই বলে দিচ্ছে এখন মার্কেট ভাল অবস্থায় রয়েছে। তিনি বলেন, বড়দিন একদিনের, কিন্তু উৎসব চলে কয়েকমাস ধরে। ফলে কেনাকাটাও শুরু হবে নবেম্বরের প্রথম দিক থেকেই। ইতোমধ্যে ১০-১৫ শতাংশ রফতানি আদেশ বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি বলেন, দেশের অধিকাংশ গার্মেন্টসে বড়দিনের পোশাক বানানো হচ্ছে। শিল্প মালিকরা যথাসময়ে পোশাক শিপমেন্ট করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। আশা করছি জিএসপি ও রানা প্লাজা ধসের পর এ শিল্পে বাড়তি যে চাপ তৈরি হয়েছিল তা কেটে যাবে। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) এবং বিজিএমইএর গবেষণা সেলের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত তিন অর্থবছর ধরে প্রতি বছর নতুন বাজারে রফতানি আয় দ্বিগুণ হারে বাড়ছে। গত ২০১৩-১৪ অর্থবছরে নতুন বাজারে সম্মিলিত প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২১ দশমিক ১৫ শতাংশ। আগের অর্থবছরে এই হার ছিল ১২ দশমিক ৭১ শতাংশ। ২০১১-১২ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি ছিল ৬ দশমিক ৫৬ শতাংশ। আর নতুন বাজার হিসেবে তুরস্ক, অস্ট্রেলিয়া, চীন, জাপান, কোরিয়া, মেক্সিকো, রাশিয়া, আফ্রিকা, ব্রাজিল, মধ্যপ্রাচ্য, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, আর্জেন্টিনা, চিলি, উরুগুয়ে, পর্তুগাল, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ অন্তত ২৫টি দেশকে নতুন বাজার হিসেবে বিবেচনা করেন রফতানিকারকরা। তবে আলোচ্য সময়ে এসব বাজারের মধ্যে শীর্ষে ছিল তুরস্ক। রফতানি হয়েছে ৬২ কোটি ২৩ লাখ ডলারের পণ্য। এসব বাজারের মধ্যে গত অর্থবছর শীর্ষে থাকা জাপান এবার দ্বিতীয় স্থানে নেমে এসেছে। তবে গত বছরের ৪৯ কোটি ডলার থেকে আয় বেড়ে হয়েছে ৫৭ কোটি ২২ লাখ ডলার। তালিকায় তৃতীয় স্থানে রয়েছে অস্ট্রেলিয়া। আগের বছরের আয় থেকে সামান্য বেড়ে রফতানি হয়েছে ৪৩ কোটি ডলারের পণ্য। নতুন বাজারের মধ্যে ব্রাজিল এবং দক্ষিণ আফ্রিকা ছাড়া সব বাজারেই আগের বছরের তুলনায় রফতানি আয় বেড়েছে। এ প্রসঙ্গে বিজিএমইএ সভাপতি মোঃ আতিকুল ইসলাম বলেন, রফতানি বাজার হিসেবে নির্দিষ্ট কয়েকটি দেশের ওপর নির্ভরতা কমাতে চান তাঁরা। এ কারণে নতুন নতুন বাজারের দিকে মনোযোগ দেয়া হচ্ছে। এসব বাজারে আবহাওয়া এবং স্থানীয় ফ্যাশন নিয়ে তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে চাহিদা অনুযায়ী পোশাক উৎপাদনে জোর দিচ্ছেন তাঁরা। এ কারণে রাশিয়া, ব্রাজিল, মেক্সিকোসহ লাতিন আমেরিকা, আফ্রিকারও বেশ কিছু দেশে রফতানি বাড়ানোর চেষ্টা চলছে। আগামীতে নতুন বাজারের রফতানি আয় উল্লেখযোগ্যহারে বাড়বে বলে আশা করেন তিনি।
×