
তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান গঠনে ভোট নয়, রাজনৈতিক ঐকমত্য প্রক্রিয়াকেই একমাত্র গ্রহণযোগ্য পথ হিসেবে অভিহিত করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের।রোববার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপ শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।
তাহের বলেন, “তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান গঠনে ৫ বা ৭ সদস্যের কমিটির যে দুটি প্রস্তাব এসেছে, আমরা কোনোটিরই বিরোধিতা করছি না। আমাদের মূল কথা একটাই কমিটির সদস্য মনোনয়ন হোক সর্বসম্মতভাবে, কোনোরকম ভোটাভুটির মাধ্যমে নয়।”
তিনি বলেন, “র্যাঙ্কড চয়েস ভোটিং বা ভোটের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নিলে তা নেতিবাচক রাজনীতির পথ খুলে দেবে, যার ফলে অশুভ দরকষাকষি, হর্স ট্রেডিং হতে পারে এটা আমরা অতীতে দেখেছি।”
তাহেরের বিকল্প প্রস্তাব, “যদি কমিটিতে রাজনৈতিক ঐকমত্যে উপনীত হওয়া সম্ভব না হয়, তবে সর্বশেষ অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান করা যেতে পারে।”
তিনি জানান, পাঁচ সদস্যের কমিটি হলে সরকার ও বিরোধী দল থেকে দুজন করে এবং তৃতীয় বৃহত্তম দল থেকে একজন সদস্য রাখা যেতে পারে। সাত সদস্যের কমিটির ক্ষেত্রেও সরকার ও বিরোধী পক্ষ থেকে তিনজন করে এবং তৃতীয় দলের একজন সদস্য রাখা যেতে পারে।
তবে তিনি জোর দিয়ে বলেন, “কমিটির সদস্য সংখ্যা যাই হোক, তা হতে হবে সর্বসম্মতিক্রমে। কাউকে বাদ দিয়ে, ভোটের মাধ্যমে সংখ্যাগরিষ্ঠের বলে সিদ্ধান্ত গ্রহণ যেন না হয়।”
ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণ প্রসঙ্গে তাহের বলেন, “প্রধানমন্ত্রী, সংসদ নেতা ও দলের প্রধান এই তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পদ একই ব্যক্তি বহাল রাখলে রাজনৈতিক ভারসাম্য থাকে না। এতে সংসদ সদস্যরা মুখ খুলতে পারেন না, দলীয় নেতা-কর্মীরাও আতঙ্কে থাকেন।”
তাহের বলেন, “আমরা মনে করি, একজন ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা হতে পারেন, তবে একইসঙ্গে দলের প্রধান থাকা যাবে না। এতে রাজনৈতিক কাঠামোতে ভারসাম্য ফিরে আসবে, নেতৃত্ব বিকাশের সুযোগ তৈরি হবে।”
সংলাপ শেষে তাহের বলেন, “আমরা বলছি না, এসব প্রস্তাব স্থায়ীভাবে থাকুক। কুরআনের আয়াত নয় যে চিরন্তন থাকবে। এখন যে সংকট চলছে, তার জন্য কিছু অস্থায়ী নিয়ম দরকার। রাজনীতিতে বিশ্বাস ফিরলে ভবিষ্যতে এসব শিথিল করা যেতে পারে।”
তিনি বলেন, “রাজনীতি বন্ধ করে দেওয়ার কথা আমরা বলছি না, বরং কিছু সময় থেমে ভুলগুলো সংশোধনের জন্য বলছি—তারপর আবার রাজনীতি চলুক, কিন্তু ভারসাম্যের পথে।”
আফরোজা