
ছবি: সংগৃহীত
বিগত সরকারের আমলে জুলাই মাসে দেশব্যাপী চলমান ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর শীর্ষ নেতৃত্বে থাকা বর্তমানে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম গুম হওয়ার আগে একটি হৃদয়বিদারক বার্তা পাঠিয়েছিলেন দেশবাসীর উদ্দেশে। তিনি সেই বার্তায় ছাত্র-জনতার পক্ষ থেকে আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিত ব্যাখ্যা, সরকারের দমনমূলক পদক্ষেপের নিন্দা এবং আগামী দিনের কর্মসূচির ঘোষণা দিয়ে গুম হন বলে জানিয়েছেন।
এই বার্তাটি পাঠানো হয় ২০২৪ সালের ১৯ জুলাই, রাত ১০টা ৪৫ মিনিটে। ইন্টারনেট, মোবাইল নেটওয়ার্ক ও মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সেবা সম্পূর্ণভাবে বন্ধ থাকায় এটি সংবাদকর্মীদের মোবাইলে এসএমএস আকারে পাঠানো হয়। তবে কোনো প্রচলিত গণমাধ্যমে তা প্রকাশ পায়নি।
নাহিদ তাঁর বার্তায় লেখেন—“গত ৫ জুন হাইকোর্ট কোটা-সংক্রান্ত একটি পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে। সেই সিদ্ধান্তকে ভিত্তি করে আমরা ১ জুলাই থেকে 'বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন' নামে আন্দোলন শুরু করি। আমাদের একমাত্র লক্ষ্য ছিল কোটা সংস্কার করে সংসদের মাধ্যমে একটি ন্যায়সঙ্গত আইন প্রণয়ন।”
তিনি দাবি করেন, সরকারের প্রতিক্রিয়াহীনতা এবং প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে অপমানজনক বক্তব্য এই আন্দোলনকে সংঘর্ষে পরিণত করেছে।
তাঁর ভাষায়—“সাধারণ শিক্ষার্থীদের নাগরিক সত্তাকে কলুষিত করে যে বক্তব্য প্রদান করা হয়েছে, তা দেশের জন্য চরম অপমানজনক। এই পরিস্থিতির সম্পূর্ণ দায় সরকারের।”
নাহিদের বার্তায় সবচেয়ে গুরুতর অভিযোগ ছিল ‘ডিজিটাল ক্র্যাকডাউন’ নিয়ে। তিনি বলেন—“গতকাল সন্ধ্যা থেকে পুরো দেশে ইন্টারনেট, ব্রডব্যান্ড, মোবাইল ব্যাংকিং, এমনকি এটিএম সেবা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। আমাদের আন্দোলনের প্রধান টার্গেট করা হয়েছে। এটি মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন।”
তিনি বিগত সরকারের উদ্দেশ্যে স্পষ্ট ভাষায় দাবি জানান—“ডিজিটাল যোগাযোগব্যবস্থা অবিলম্বে সচল করতে হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে রাজপথ ও ক্যাম্পাস থেকে প্রত্যাহার করতে হবে। আমাদের দাবির প্রেক্ষিতে আলোচনার সুযোগ তৈরি করতে হবে।”
সবশেষে তিনি দেশবাসীকে জানান—“আগামীকাল ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। দেশবাসীকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে এতে অংশ নিতে আহ্বান জানাচ্ছি। সেনাবাহিনী যেন এই খুনি সরকারকে সমর্থন না করে, বরং ছাত্র-জনতার পাশে দাঁড়ায়—এটাই আমাদের প্রত্যাশা।”
এই বার্তা পাঠানোর অল্প সময় পর থেকেই নাহিদ ইসলাম নিখোঁজ হন।
নাহিদ তাঁর শেষ বার্তায় জুলাই শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন—“যারা শহীদ হয়েছেন, তাঁদের রুহের মাগফিরাত কামনা করছি। এই হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই। সরকার এর দায় এড়াতে পারে না।”
আসিফ