
তারেক রহমান
কারো আবেগতাড়িত ভুল সিদ্ধান্তের কারণে দেশে আর যেন ফ্যাসিবাদ বা চরমপন্থা পুনর্বাসন না হয় সে জন্য সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। শনিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর খামারবাড়ি কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ও শিক্ষকদের উদ্যোগে ‘গণঅভ্যুত্থান-২০২৪ : বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অবদান ও শহীদদের স্মরণ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান।
তারেক রহমান বলেন, জাতীয় নির্বাচন আসন্ন। তাই এ পরিস্থিতিতে কোনো আবেগতাড়িত বা ভুল সিদ্ধান্তে যাতে চরমপন্থা বা ফ্যাসিবাদ পুনর্বাসিত হওয়ার সুযোগ না পায়, সেজন্য সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। সাম্প্রতিক কিছু ঘটনার দিকে ইঙ্গিত করে সরকারকে আরও স্বচ্ছ ও সাহসী সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরামর্শও দিয়েছেন তিনি।
তারেক রহমান বলেন, কারো রাজনৈতিক অভিলাষ পূরণের প্রধান মাধ্যম হওয়া দরকার জনগণের রায়। রাজনৈতিক অধিকার নিশ্চিত করা না গেলে অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষে নির্বাচন আয়োজন সম্ভব কি না সেই প্রশ্ন তৈরি হয়। সাম্প্রতিক কিছু নৃশংস ঘটনা উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, এগুলো অন্তর্বর্তী সরকারের সক্ষমতাকে ক্ষেত্রবিশেষে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান, তারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আরও স্বচ্ছ ও সাহসী ভূমিকা রাখবে। গণতন্ত্রে বিশ্বাসী দলগুলো আপনাদের পাশে থাকবে।
তারেক রহমান বলেন, একাত্তরের শহীদ মুক্তিযোদ্ধারা যেভাবে জনগণের কাছে স্মরণীয় হয়ে আছেন, চব্বিশের শহীদরাও একইভাবে স্মরণীয়-বরণীয় হয়ে থাকবেন। তিনি বলেন, গত বছর কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরু হলেও ১৬ জুলাইয়ের পর তা আর কোটায় সীমাবদ্ধ ছিল না। চূড়ান্ত বিশ্বাস জন্মেছিল, মাফিয়া সরকারের পতন সময়ের ব্যাপার। সেই বিশ্বাস থেকেই সকল গণতান্ত্রিক দল পরিকল্পনা করেছিল। এই আন্দোলন যাতে একক দলের আন্দোলন হিসেবে পরিচিতি না পায়, সেটি নিশ্চিত করা হয়েছিল।
তারেক রহমান বলেন, গণঅভ্যুত্থানে বীর শহীদরা জাতির গৌরব। শহীদদের কাঙ্খিত বাংলাদেশ গড়ার মধ্য দিয়ে তাদের প্রতি সম্মান জানানোর সুযোগ তৈরি হয়েছে। তাদের কাঙ্খিত রাষ্ট্র বিনির্মাণের প্রথম শর্তই হলো জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা। যার জন্য, এমন পরিবেশ তৈরি জরুরি, যাতে মানুষ তার পছন্দের প্রার্থীকে নির্বাচিত করতে পারে।
আলোচনা সভায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দেশে গণতন্ত্রের সংকট দেখা যাচ্ছে, সবাইকে সজাগ থাকার আহ্বান জানাচ্ছি। সংগ্রাম শেষ হয়নি। সামনে গণতন্ত্রের যে সংকট দেখা যাচ্ছে সেই সংকট থেকে উত্তরণ করতে হলে আমাদেরকে অনেক সজাগ-সতর্কতার সঙ্গে আমাদেরকে ভবিষ্যতের জন্য কাজ করতে হবে।
ফখরুল বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছি, আহতদের জন্য সহানুভুতি জানাচ্ছি। তাদের অবদানের কথা আমরা কখনো ভুলব না। শহীদ পরিবারের সদস্যদের জন্য এবং আহতদের জন্য সহযোগিতার হাত বাড়াতে একটি ফান্ড গঠন করতে হবে।
ফখরুল বলেন, আমার বিশ্বাস আমাদের তরুণ নেতা যিনি আজকে সমস্ত বাংলাদেশের মানুষের কাছে একটা স্বপ্ন দেখিয়েছেন সেই স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করতে হলে আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে তার হাতকে শক্তিশালী করব, বাংলাদেশের মানুষকে জাগরিত করে তুলব। এবং সত্যিকার অর্থে একটা স্বাধীন সার্বভৌম অসাম্প্রদায়িক প্রগতিশীল সমৃদ্ধ বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলব।
ফখরুল বলেন, আজকে আমি আমার নেতা আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে একটা অনুরোধ রাখতে চাই, নির্বাচনের পরে আপনি যদি সরকার গঠন করেন জনগণের সমর্থনে তাহলে আমাদের প্রথম কাজ হওয়া উচিত এই যে পরিবারগুলো তাদের সন্তানকে হারিয়েছে, অসহায় হয়েছে তাদের পূনর্বাসনের ব্যবস্থা করা আমাদের প্রথম কাজ হবে। সেই সঙ্গে আমরা আরেকটা প্রস্তাব রাখতে চাই, এখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সলর আছেন, শিক্ষার্থীরা আছে, আমরা আছি, শুধু কথায় নয়, আসুন আমরা এই পরিবারগুলোর জন্য একটা ফান্ড তৈরি করি যে ফান্ডের মধ্য দিয়ে আমরা তাদেরকে সহযোগিতা করতে পারি। এটাই আমাদের তাদের জন্য সত্যিকার অর্থে কাজ।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, আজকে আমাদের রাজনৈতিক এই অবস্থার মধ্য থেকে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করার চেষ্টা করা হচ্ছে। ইনশাল্লাহ এটাকে আমরা রোধ করব। যাতে এদেশে একটা সহজ-সরল গণতন্ত্র আসে এবং আমরা ভোট দিতে পারি। আমি বলছি না বিএনপিকে জয়যুক্ত করেন। আমরাই ক্ষমতায় যাব। এরকম কথা আমাদের নেতা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানও বলেননি। কথা হলো যে, আমরা ভালো একটা নির্বাচন চাই। যে নির্বাচনের পরে দেশের সব মানুষ ঐক্যবদ্ধভাবে এক সঙ্গে দেশটাকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।
অধ্যাপক তৌফিকুল ইসলাম মিথিলের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব এবং জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থান, শোক ও বিজয়ের বর্ষপূর্তি পালন কমিটির আহ্বায়ক রুহুল কবির রিজভী, সদস্য সচিব অধ্যাপক মোর্শেদ হাসান খান, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আব্দুল হান্নান চৌধুরী, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব, ছাত্রদলের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি আবু হোরায়রা প্রমুখ। আরও বক্তব্য রাখেন গণঅভ্যুত্থানের শহীদ মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধ, ইমতিয়াজ আহমেদ আবির, ও সাজ্জাদ হোসেন সজলের স্বজনরা। আরও বক্তব্য রাখেন গণঅভ্যুত্থানে আহত আল মিরাজসহ অনুষ্ঠানের আয়োজক কমিটির অন্য নেতৃবৃন্দ।
প্যানেল হু