
ছবিঃ সংগৃহীত
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির শাইখুল হাদিস আল্লামা মামুনুল হক বলেছেন, ‘আমরা পিন্ডির গোলামির জিঞ্জির ছিন্ন করেছিলাম, দিল্লির দাসত্ব করার জন্য নয়। ২০২৪ সালের আগস্টে আবার দিল্লির আধিপত্যবাদকে উৎখাত করেছি, ওয়াশিংটনের দাসত্বের জন্য নয়।’
শনিবার (১৯ জুলাই) বিকেলে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ আব্দুল মজিদ সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে শাপলা চত্বর, পিলখানা ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গণহত্যার বিচার এবং খেলাফত প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে গণজাগরণ সৃষ্টির লক্ষ্যে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস সুন্দরগঞ্জ উপজেলা শাখা আয়োজিত গণসমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদ্দেশে আল্লামা মামুনুল হক বলেন, ‘আপনি অল্প সময়ের মেহমান। দেশের অভ্যন্তরীণ ও প্রবাসী ভোটাররা যেন অবাধ, শান্তিপূর্ণ ও সর্বজনগ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে পারে, সে ব্যবস্থা করুন। পাশাপাশি মানবাধিকার কমিশন নামে কোনো রাষ্ট্রীয় বেহায়াপনা এজেন্ডা বাস্তবায়ন এবং পশ্চিমা শক্তির দোসরদের কাছে দেশকে তুলে দেওয়ার চেষ্টা করলে তার ফল ভালো হবে না, যা দেশের তাওহিদি জনতা মেনে নেবে না।’
বৈষম্যবিরোধী ও ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের সকল অংশগ্রহণকারীদের উদাত্ত আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপির ছাত্র ভাইদের সঙ্গে রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা করব, কিন্তু তা যেন পারস্পরিক হানাহানিতে না পরিণত হয়। কেউ যদি ফ্যাসিবাদী অপশক্তিকে পুনর্বাসনের চেষ্টা করে, তাহলে আমরা জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে প্রতিরোধ গড়ে তুলব।’
আল্লামা মামুনুল হক আরও বলেন, ‘ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা গত ১৬ বছরে লুটপাটের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতি ধ্বংস করেছে। ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের পর পালিয়ে গিয়ে ভারতের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করছে। কেউ যদি ফ্যাসিবাদী অপশক্তিকে বাংলার মাটিতে পুনর্বাসনের চেষ্টা করে, আমরা জনগণকে নিয়ে তা প্রতিহত করব।’
তিনি বলেন, ‘শাপলা চত্বর, পিলখানা ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের গণহত্যার বিচার না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে। হেফাজতের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা সব মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। খেলাফত আন্দোলনের মাধ্যমে আমরা দেশে নতুন গণজাগরণ সৃষ্টি করতে চাই।’
ভবিষ্যৎ লক্ষ্যের কথা উল্লেখ করে আল্লামা মামুনুল হক বলেন, ‘আমরা খেলাফত মজলিসকে একটি দৃষ্টান্ত হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই। আলেম সমাজকে শক্তিশালী করতে হবে। দেশের স্বাধীনতা নিয়ে আর ছিনিমিনি খেলতে দেব না। আমাদের সংগ্রাম রাজনৈতিক নয়, এটি ইসলামী মূল্যবোধ ও তাওহিদের লড়াই।’
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস সুন্দরগঞ্জ উপজেলা সভাপতি মুফতি মাহমুদ আল মামুনের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ, যুগ্ম মহাসচিব মুফতি শরাফত হোসাইন, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা এনামুল হক মুসা, কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য মাওলানা রেজাউল করিম ও কেন্দ্রীয় ছাত্র মজলিস সভাপতি মুহাম্মাদ আব্দুল আজিজ।
সাধারণ সম্পাদক হাফেজ মাওলানা মুহিব্বুল্লাহ মুত্তালিবের সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন গাইবান্ধা জেলা শাখার উপদেষ্টা হাফেজ মাওলানা মানসুরুর রহমান খান, জেলা সভাপতি মুফতি ইউসুফ কাসেমী, সাধারণ সম্পাদক মাওলানা শাহ আলম ফয়েজী, সহ-সভাপতি হাফেজ আব্দুল মজিদ, সহ-সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার মাহবুব আলম সরকার, ইমাম-ওলামা পরিষদের জেলা সভাপতি মুফতি মাহমুদুল হাসান কাসেমী, গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা খেলাফত মজলিসের সভাপতি হাফেজ মাওলানা সাইফুল ইসলাম, ইমাম-ওলামা পরিষদের সুন্দরগঞ্জ উপজেলা সভাপতি হাফেজ মাওলানা রুহুল আমীন, জেলা খেলাফত মজলিসের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মুহা. আইয়ুব বিন উসামা, বাংলাদেশ যুব মজলিস ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলা শাখার সভাপতি মুহা. আখতারুজ্জামান তারেক।
পরে আল্লামা মামুনুল হক গাইবান্ধা জেলার পাঁচটি সংসদীয় আসনের বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন। এর মধ্যে গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনে মুফতি মাহমুদ আল মামুন, গাইবান্ধা-২ (সদর) আসনে হাফেজ আব্দুল মজিদ, গাইবান্ধা-৩ (পলাশবাড়ী-সাদুল্লাপুর) আসনে মাওলানা শাহ আলম ফয়েজী, গাইবান্ধা-৪ (গোবিন্দগঞ্জ) আসনে মাওলানা সাইফুল ইসলাম ও গাইবান্ধা-৫ (সাঘাটা-ফুলছড়ি) আসনে মুফতি আবু ইউসুফ।
ইমরান