সাবেক রেলমন্ত্রী জিল্লুল হাকিম
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের রেলমন্ত্রী জিল্লুল হাকিমের ইচ্ছাপূরণে কোটি টাকা গচ্চা দিয়েছে রেলওয়ে। সাবেক এই মন্ত্রীর জেলা রাজবাড়ীতে ট্রেন চালু করা হয়েছিল প্রস্তাবের মাত্র চার দিনে। অন্যান্য ট্রেনের টিকিটের হাহাকার থাকলেও ঢাকা-ভাঙ্গা-রাজবাড়ী রুটের ভাঙ্গা কমিউটার ও চান্দনা কমিউটারের ৯০ শতাংশের বেশি টিকিট অবিক্রীত থেকেছে। টিকিট বিক্রির টাকায় তেলের পয়সাও ওঠেনি। ৪২৪ আসনের ট্রেন দুটি কখনও কখনও মাত্র তিনজন যাত্রী নিয়েও চলেছে।
রাজবাড়ী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জিল্লুল হাকিম মন্ত্রী হওয়ার চার মাসের মাথায় গত ৪ মে তাঁর উপস্থিতিতে ঢাকা-রাজবাড়ী রুটে ট্রেন চালু করা হয়। রেলওয়ে থেকে কমিউটার ট্রেন চালুর প্রস্তাব করা হয়েছিল ৩০ এপ্রিল। তবে তা ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত চালানোর প্রস্তাব ছিল। মন্ত্রীর ইচ্ছায় এ প্রস্তাব বদলে ট্রেনটিকে ভাঙ্গা থেকে রাজবাড়ী পর্যন্ত বর্ধিত করা হয় চান্দনা কমিউটার নামে। চালুর আগে করা হয়নি যাত্রী চাহিদার সমীক্ষা। লোকসান হবে জেনেও মন্ত্রীর ইচ্ছা রক্ষায় ট্রেন দুটি চালু করেছিল রেলওয়ে।
আওয়ামী লীগের পতনের পর গত ১৩ আগস্ট রেলসেবা সচল হলেও লোকসানি ভাঙ্গা ও চান্দনা কমিউটার চালু হয়নি। রেলের মহাপরিচালক সরদার সাহাদাত আলী বলেন, ‘যাত্রী চাহিদা না থাকায় ট্রেন দুটি বন্ধ রয়েছে।’
সাবেক মন্ত্রীর ইচ্ছাপূরণে রেলের এই লোকসানের দায় কে নেবে– প্রশ্নে রেল উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবীর খান বলেন, ট্রেনের সব রুট সমীক্ষা করা হচ্ছে। রুট রেশনালাইজ করা হবে। যারা দায়ী, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
একটি ট্রেনই ঢাকার কমলাপুর থেকে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া, পদ্মা সেতু, মাদারীপুরের শিবচর হয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত চলত ভাঙ্গা কমিউটার নামে। সেখান থেকে রাজবাড়ী পর্যন্ত চলত চান্দনা কমিউটার নামে। গত ৯ জুলাই ৪২৪ আসনের ট্রেনের এই অংশে ছিল মাত্র তিনজন যাত্রী।ক্ষমতাচ্যুতির পর তিনি রয়েছেন আত্মগোপনে।
ওঠেনি তেলের খরচও ৬৫০০ সিরিজের লোকোমোটিভে (ইঞ্জিন) চলত ব্রডগেজ ভাঙ্গা কমিউটার ও চান্দনা কমিউটার। ঢাকা থেকে রাজবাড়ীর দূরত্ব ১৪৬ কিলোমিটার। এ দূরত্বের জন্য কমবেশি ৩০০ লিটার হাইস্পিড ডিজেল লাগে।
পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রাম বন্দরে এক টন হাইস্পিড ডিজেলের দাম ১ হাজার ২০০ ডলার। এই হিসাবে প্রতি লিটারের দাম ১৪১ টাকা। ঢাকা থেকে রাজবাড়ী ট্রেন নিতে ৪২ হাজার ৩০০ টাকার ডিজেল লাগে। আসা-যাওয়ায় খরচ ৮৪ হাজার ৬০০ টাকার ডিজেল।
সাপ্তাহিক ছুটির দিন বাদে ৪ মে থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত ৫০ দিন চলে ভাঙ্গা ও চান্দনা কমিউটার। এতে ডিজেল লাগে ৪২ লাখ ৩০ হাজার টাকার। এ সময় টিকিট বিক্রি হয় ১০ লাখ ৮৯ হাজার ৭০ টাকার। শুধু ডিজেলেই ৩০ লাখ ৪০ হাজার ৯৩০ টাকা লোকসান হয়। লোকোমাস্টার (চালক), গার্ডসহ রানিং স্টাফদের বেতন-ভাতা, অন্যান্য খরচসহ ১৮ জুলাই পর্যন্ত লোকসানের অঙ্ক কোটি টাকা। ৩০ জুন পর্যন্ত ভাঙ্গা ও চান্দনা কমিউটারের ৯০ হাজার ৭৬৬টি আসনের ৭ হাজার ২৪৪টি টিকিট বিক্রি হয়। ৯২ শতাংশ টিকিটই অবিক্রীত ছিল।
ফুয়াদ