ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নেত্রকোণায় ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে ওবায়দুল কাদের

মিথ্যাচার নিষিদ্ধ হলে বিএনপির কোনো অস্তিত্ব থাকবে না  

সঞ্জয় সরকার, নেত্রকোণা 

প্রকাশিত: ১৯:০৫, ২৯ নভেম্বর ২০২২

মিথ্যাচার নিষিদ্ধ হলে বিএনপির কোনো অস্তিত্ব থাকবে না  

সম্মেলনে বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। ছবি: জনকণ্ঠ 

বিএনপির সমালোচনা করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, যদি আইন করে মিথ্যাচার নিষিদ্ধ করা হয়, তাহলে বিএনপির কোনো অস্তিত্ব থাকবে না। 

মঙ্গলবার (২৯ নভেম্বর) বিকেলে নেত্রকোণা জেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন তিনি।

সেতুমন্ত্রী বলেন, যারা সন্ত্রাস করে আওয়ামী লীগের ২১ হাজার নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে, হাজার হাজার মায়ের কোল খালি করেছে, অগণিত স্ত্রীদের স্বামীহারা করেছে, বোনদের ভাইহারা করেছে, তাদের কোনো ক্ষমা নেই। 

তিনি বলেন খেলা হবে। আন্দোলনে খেলা হবে। নির্বাচনে খেলা হবে। মোকাবিলায় খেলা হবে। হাওয়া ভবনের বিরুদ্ধে খেলা হবে। সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে খেলা হবে। তারা ভোট চুরি করেছে, ভুয়া ভোটার তৈরি করেছে। অর্থ পাচার করে মুচলেকা দিয়ে তাদের নেতা লণ্ডনে চলে গেছে। সেখানে বসে বসে মাঝে মাঝে হুংকার দেয়। আওয়ামী লীগ এসব হুংকারে ভয় পায় না। আর বাংলাদেশের মানুষও এমন নেতাকে মানে না। 

১০ ডিসেম্বর রাজধানীতে আয়োজিত বিএনপির সমাবেশ প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, আক্রমণ না করলে কোনো পাল্টা আক্রমণ করা হবে না। কিন্তু যদি আক্রমণের মতলব থাকে, তবে খবর আছে। তিনি দেশের জনসাধারণকে আতঙ্কিত না হবার পরামর্শ দিয়ে বলেন, আমরা জনগণের পাশে আছি। জনগণকে নিয়েই আমরা তাদের প্রতিহত করব।

শেখ হাসিনার সরকারের সাফল্য তুলে ধরে তিনি বলেন, বর্তমান সময়ে বিশ্বের বহু দেশে দুর্ভিক্ষের পদধ্বনি শোনা যাচ্ছে। কিন্তু সে তুলনায় আমরা বাংলাদেশের জনগণ অনেক ভালো আছি। শেখ হাসিনা ভালো থাকলে বাংলাদেশ ভালো থাকে। বঙ্গবন্ধুর পর সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং সাহসী নেতার নামটি হচ্ছে শেখ হাসিনা। তার নেতৃত্বেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে রক্ষা করতে হবে। গণতন্ত্রকে রক্ষা করতে হবে। সর্বোপরি আওয়ামী লীগকে বাঁচাতে হবে।

নেত্রকোণা জেলা আওয়ামী লীগের বিদায়ী সভাপতি মতিয়র রহমান খানের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক সমাজ কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা আশরাফ আলী খান খসরুর পরিচালনায় সম্মেলনের প্রথম অধিবেশনে আরও বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর আজ্জাক এমপি, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এমপি, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল এমপি, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, কেন্দ্রীয় সদস্য মারুফা আক্তার পপি, উপাধ্যক্ষ রেমন্ড আরেং, ওয়ারেসাত হোসেন বেলাল বীরপ্রতীক এমপি ও হাবিবা রহমান খান শেফালী এমপি প্রমুখ।


 
সম্মেলনে কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বিএনপি যতই বলুক না কেন, পৃথিবীর কোনো শক্তিই আওয়ামী লীগকে রাজনৈতিকভাবে পরাজিত ও ক্ষমতাচ্যুত করতে পারবে না। বিএনপির শাসনামলে গণতন্ত্র ছিল বিপন্ন। অর্থনীতি ছিল ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। তারা আওয়ামী লীগের অসংখ্য নেতাকর্মী ও বহু হিন্দু পরিবারের ধনসম্পদ লুণ্ঠন করেছে, বাড়িতে আগুন দিয়েছে, অত্যাচার করেছে। 

খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আবারও যদি সে তৎপরতা শুরু করতে চান- তাহলে সমুচিত জবাব দেয়া হবে। আর আপনার জায়গা হবে জেলখানায়, যেটি বিচারবিভাগ নির্ধারণ করে দিয়েছে।

শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এমপি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে বিএনপি ধ্বংস করে দিয়ে গেছে। সে পদ্ধতিতে আর নির্বাচনের সুযোগ নেই। সারা বিশে্ব যে পদ্ধতিতে নির্বাচন হয়, সে পদ্ধতিতেই দেশের সংবিধান অনুসারে বাংলাদেশের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ৭১, ৭৫ এবং ২১ আগস্টের খুনীদের আর বাংলার মাটিতে ঠাঁই হবে না। 

নতুন কমিটি ঘোষণা
সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি নেত্রকোণা জেলা আওয়ামী লীগের আংশিক নতুন কমিটি ঘোষণা করেন। কমিটিতে অ্যাডভোকেট আমীরুল ইসলামকে সভাপতি এবং অ্যাডভোকেট শামছুর রহমান লিটনকে (ভিপি লিটন) সাধারণ সম্পাদক করা হয়। 

অ্যাডভোকেট আমীরুল ইসলাম বিদায়ী জেলা কমিটির সহসভাপতি ছিলেন। এর আগে তিনি সাধারণ সম্পাদকেরও দায়িত্ব পালন করেছেন। শামছুর রহমান লিটন হচ্ছেন বিদায়ী জেলা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক। এর আগে তিনি নেত্রকোণা সরকারি কলেজের ভিপি ছিলেন। বিএনপি সর্বশেষ ক্ষমতা গ্রহণের পর সরকার দলীয় (বিএনপি) ক্যাডাররা তাকে ব্যাপক নির্যাতন ও প্রাণনাশের চেষ্টা করেছিল। 

লক্ষাধিক লোকের সমাবেশ 
আওয়ামী লীগের এ ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনকে কেন্দ্র করে নেত্রকোণা জেলা সদরের মোক্তারপাড়া মাঠ ও আশপাশের এলাকায় অন্তত লক্ষাধিক লোকের সমাবেশ হয়। পুরো মাঠটি কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। এমনকি শহরের প্রধান সড়কগুলোতেও ছিল প্রচুর লোকের ভিড়। 

সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রধান সড়কগুলোতে তেমন যানবাহন চলতে পারেনি। জেলা সদর ছাড়াও ১০ উপজেলার হাজার হাজার নেতাকর্মী ব্যানার, ফেস্টুন ও ব্যান্ডপার্টিসহযোগে মিছিল নিয়ে সম্মেলনে যোগ দেন। তাদের পদচারণায় গোটা শহরের পরিবেশ ছিল মুখরিত। সর্বত্র ছিল সাজসাজ রব। 

এসআর

সম্পর্কিত বিষয়:

×