ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

তত্ত্বাবধায়ক ছাড়া কোনো নির্বাচন নয় : মির্জা ফখরুল

স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল 

প্রকাশিত: ১৯:০২, ৫ নভেম্বর ২০২২

তত্ত্বাবধায়ক ছাড়া কোনো নির্বাচন নয় : মির্জা ফখরুল

বিএনপির সমাবেশে মির্জা ফখরুল ইসলাম

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ভোটের অধিকার নিয়ে একবার নয়, যখনই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে তখনই ভোট চুরি করে। তারা সন্ত্রাস করবে, চুরি করবে এটা হয় না। 

২০১৪ ও ২০১৮ সালে ভোট চুরি করে তারা ক্ষমতায় এসেছে। এখন আবার নতুন করে ভোট চুরির ফায়দা আঁটছে। নতুন বুদ্ধি এঁটে নতুন কমিশন দিয়ে আবার কৌশলে ভোট চুরির চিন্তা করছে। কিন্তু এই হাসিনা সরকারের অধীনে আর কোন নির্বাচন হতে দেয়া হবে না। তাই তত্ত্বাবধায়ক বা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠণ করে নির্বাচন করতে হবে।

ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ আজ বর্গীর (লুটতরাজ প্রিয়) রূপ নিয়েছে। এখন উন্নয়ন ছাড়া কিছুই দেখা যায় না! কিন্তু বাস্তবে গেলে কোনো কিছুতেই হাত দেওয়া যায় না। এ থেকে আমরা মুক্তি চাই, পরিত্রাণ চাই। আমাদের এই আন্দোলন বিএনপির জন্য নয়; খালেদা জিয়ার জন্য নয়; তারেক রহমানের জন্য নয় কিংবা আমাদের নেতাদের জন্য নয়। এ আন্দোলন জাতি ও দেশের প্রয়োজনে সমগ্র জাতিকে রক্ষা করার জন্য।

শনিবার বিকেলে বরিশাল নগরীর ঐতিহ্যবাহী বঙ্গবন্ধু উদ্যানে বিএনপির বিভাগীয় মহাসমাবেশ প্রধান অতিথি হিসেবে ১০ মিনিটের বক্তব্যে মির্জা ফখরুল বলেন, এই সরকার দুর্নীতি করেনি এমন একটা জায়গা দেখান। একটা চাকরিও কি তারা দিয়েছে? দিয়েছে তবে সেটি আওয়ামী লীগের ছেলেদের। ২০ লাখ টাকা নিয়ে দিয়েছে। বিনা পয়সার সার দেয়ার কথা বলেছে কিন্তু আমাদের সময়ের থেকে তিন গুণ দেশি দামে সার দিচ্ছেন।

তিনি আরও বলেন, সরকার হামলা আর মামলা করছে। ভোলায় লঞ্চে আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালিয়ে তাদের বিরুদ্ধেই আবার মামলা দিয়েছে। এখন দেশে কেউ নিরাপদ নয়। এ সময় খালেদা জিয়া বরিশালকে বিভাগ করেছেন, বিশ্ববিদ্যালয় দিয়েছেন বলেও উল্লেখ করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

বিএনপির মহাসচিব আরও বলেছেন, তত্ত্বাবধায়ক ছাড়া এ সরকারের অধীনে আর কোনো নির্বাচন হতে দেয়া হবেনা। তাই এই সরকারকে আগে বিদায় জানাতে হবে। এই নির্বাচন কমিশন নিজেদের ভালো দেখানোর জন্য কৌশল নিয়েছে।

পঞ্চম বিভাগীয় সমাবেশে শনিবার বিকেলে নগরীর ঐতিহাসিক বঙ্গবন্ধু উদ্যানে (বেলস পার্কে) বরিশাল বিভাগীয় গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির মহাসচিব বলেন, আমাদের উপর হামলা করে পার পাবেন না। বিদেশীরা বুঝে গেছে আপনারা সন্ত্রাসের দল। হামলা করে ক্ষমতায় টিকে আছেন। 

নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে ফখরুল বলেন, আমাদের সামনে কঠোর আন্দোলন ছাড়া বিকল্প নেই। গণঅভুত্থানে নিশিরাতের এ সরকারকে বিদায় জানাতে হবে। আমরা দেশকে গণতন্ত্রের পথে ফেরাতে চাই। যার ফয়সালা হবে রাজপথে।

ফখরুল আরো বলেন, সড়ক ও নৌপথের সবধরনের যোগাযোগ বন্ধ করার পরেও বরিশালের বিভাগীয় সমাবেশ আজ গণসমাবেশে রূপ নিয়েছে। সরকার যখন বুঝতে পেরেছে জনতার ঢল ঠেকানো যাবে না। তখন শুধু ভয় দেখিয়েই ক্ষান্ত হয়নি, তারা সারাদেশের সাথে বরিশালকে বিচ্ছিন্ন করে দুইদিনের ‘হরতাল’ ডেকেছে। অনতিবিলম্বে এই সরকারকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হবে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হবে এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর আসনে বসবেন বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।

বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশের প্রধান বক্তা বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস উপস্থিত নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেছেন, আপনারা যে এতো বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে জনসমাবেশকে জনসমুদ্রে রূপ দিয়েছেন তাতেই প্রমাণ হয়েছে বিএনপির প্রতি, দেশের প্রতি আপনাদের ভালবাসা কতোটা। 

তিনি বরিশাল নগরীকে জনসভার শহর, মিছিলেন শহর বলে মন্তব্য করে বলেন, এখানে এসে দেখলাম ফোনে কথা বলতে পারছি না। ইন্টারনেট বন্ধ। তাই লাইভ টেলিকাস্ট নাই। রাজপথ ও নৌপথ বন্ধ। তারপরেও আজ গোটা বরিশাল শহর জনসভার শহর, মিছিলের শহর। তাহলে সব বন্ধ করে কি লাভ হলো। সমস্ত বাধা উপেক্ষা করে বরিশালে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হলো।
তিনি আরও বলেন, এ সরকারকে বিদায় জানাতে হবে ভোটের মাধ্যমে। না হলে দেশের আর কিছু বাকি থাকবে না। এই সরকারের অধীনে নির্বাচন নয়, ইভিএমে নির্বাচন নয়। ১৫ বছর আগে আমার যে ভাই ভোটার হয়েছে সে বলতে পারবে না ভোট কেমন।

সমাবেশ প্রস্তুতি কমিটির প্রধান সমন্বয়ক ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এজেডএম ডাঃ জাহিদ হাসান বলেন, বিরোধী দল হরতাল কিংবা অবরোধের ডাক দেন; কিন্তু নিশিরাতের শেখ হাসিনার সরকার নিজেই হরতাল ডেকে নিজেদের বন্দী করেছে। যার মাধ্যমে প্রমাণ করে দিয়েছে এই সরকারের পতন এখন সময়ের ব্যাপার। 

তিনি আরও বলেন, বর্তমান সরকার মেগা প্রকল্পের নামে মেগা দুর্নীতি করেছে, বিদ্যুতে দুর্নীতি করেছে, তদন্ত কমিশন গঠন করে সব দুর্নীতিবাজদের খুঁজে বের করে উৎখাত করা হবে। নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার ও গ্রেফতারকৃতদের মুক্তির দাবি জানিয়ে তিনি আরও বলেন, মামলা প্রত্যাহার ও নেতাদের মুক্তি না দিলে আওয়ামী লীগ নেতারা পালাবার পথও খুঁজে পাবেন না। এই জনগণ অভ্যুত্থানের মাধ্যমে আপনাদের উৎখাত করবে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, বেগম খালেদা জিয়া চাইলে আওয়ামী লীগের মতো গুম-খুন করে ক্ষমতায় থাকতে পারতেন। তিনি গণতন্ত্র বিশ্বাস করেন তাই দেশের শান্তি ও উন্নয়নের জন্য ক্ষমতা ধরে রাখেননি। 

বরিশালে বঙ্গবন্ধু উদ্যানে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশে তিনি আরও বলেন, ২০১৪ সালে ভোটারবিহীন নির্বাচন আর ২০১৮ সালে নিশিরাতের নির্বাচনে অবৈধভাবে আওয়ামী লীগ ক্ষমতা দখল করে রেখেছে। পুলিশ-র‌্যাব-সরকারী কর্মকর্তাদের ব্যবহার করে এখন টিকে রয়েছে। আগামীদিনে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে। 

তিনি বলেন, ভোট চুরি তো গেলো, দেশ চুরির কী হবে? মানুষকে খাওয়ানোর পয়সা নাই, কিন্তু ভোট চুরির মেশিন কেনার পয়সা আছে। আওয়ামী লীগ কি আলাউদ্দিনের চেরাগ পেয়েছে? দুবাইসহ সারাবিশ্বে তাদের টাকা জমা আছে। ঘুষ ছাড়া দেশের কোনো মানুষ কাজ করতে পারে না। 

এবারের পরীক্ষায় আওয়ামী লীগ নকল করেও পাস করতে পারবে না। খালেদা জিয়াকে ব্ল্যাকমেইল করেও যেমন কাজ হবে না, তেমনি মামলা দিয়েও কাজ হবে না। দেশে খুন-গুম হওয়া থেকে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির সব কিছুর কারণ ভোট চুরি।

বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ড. আব্দুল মঈন খান বলেছেন, বরিশালের মানুষ দেখিয়ে দিয়েছে গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলন কাকে বলে। বাংলাদেশের পরিস্থিতি দুর্বিষহ করেছে আওয়ামী লীগ। এ দেশে শিক্ষা নেই, সততা নেই। সরকারের যারা আছে মিথ্যা ছাড়া কিছু বলে না। আওয়ামী লীগ যা বলে তা করেনা। আর যা করে তা বলে না। সুস্থ্য রাজনীতি নেই, ব্যাংকে টাকা নেই। এই যে মিডিয়াগুলো আছে, আমাদের বক্তব্যগুলো এডিট করে প্রচার করবে। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নেই।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, বাংলাদেশে একজন পরারষ্ট্রমন্ত্রী আছেন। তিনি ভারতে গিয়ে এই সরকারকে বহাল রাখার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন। তারা এই দেশের মানুষের জন্য ভালো কোনো কাজ করছে না। দেশের মানুষের প্রতি তাদের কোনো খেয়াল নেই। মানুষ কষ্টে আছে, না খেয়ে আছে তার কোনো খোঁজ রাখে না। অথচ ক্ষমতায় টিকে থাকতে বিদেশে গিয়ে ধরনা দিচ্ছে।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর বলেন, এখন আর জনগণের ভোট লাগে না। এক কোটি ৫০ লাখ টাকা দিলেই ইউনিয়ন চেয়ারম্যান হওয়া যায়। বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির অন্যতম ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী আলতাফ হোসেন চৌধুরী বলেছেন, আমরা ক্ষমতায় যেতে চাই না। শুধু নির্দলীয় সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন চাই। তারেক রহমান বীরের বেশে নয়, রাজার বেশে বাংলাদেশে ফিরে আসবেন।

দলের ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান বলেন, আওয়ামী লীগ কী করলো, বাধা দিয়ে একদিনের সমাবেশ তিন দিনে শেষ করলো। ষড়যন্ত্র করে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে একের পর এক মামলা দিয়েও বিএনপিকে দাবিয়ে রাখা যাবে না, এর প্রমাণ আজকের জনসমুদ্র।

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব এ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ার তার বক্তব্যে বলেছেন, আজ বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নেই। আজ বেতন না বাড়লেও নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে। স্বাধীনতা যুদ্ধ থেকে শুরু করে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের এ লড়াইয়ে বরিশালের মানুষ রক্ত দিয়েছে। তাই তাদের কখনোই দাবিয়ে রাখা যাবে না। এ সরকারে পতন না ঘটিয়ে ঘরে ফিরে যাবো না। মজিবর রহমান সরোয়ার আরও বলেন, খালেদা জিয়াকে প্রতিহিংসার কারণে আটকে রেখেছে শেখ হাসিনা। এখানে আইনের কোনো ব্যাপার নেই।

বর্তমান সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন চাল ও গমের দামে সেঞ্চুরি হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি হাবিব-উন নবী খান সোহেল। বিভাগীয় মহাসমাবেশে দেওয়া বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, আমাদের দেশেতো ধান উৎপাদন হয়। তাহলে ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে চালের দাম বাড়বে কেন? এ সরকার থাকলে অদূর ভবিষ্যতে চাল ও গমের দাম সেঞ্চুরি করবে। 

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আপনার জেলে যাওয়ার সময় হয়ে গেছে, প্রস্তুতি নিয়েন। চাচাতো, মামাতো, খালাতো ভাইয়ের খাওন বরিশালে নাই। তাদের কথা শোনার টাইম নাই বরিশালে। বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আরও বলেন, দিনের ভোট রাতে করা যায় কিন্তু এভাবে জনসমুদ্রে পরিণত করা যায়না। 

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণ হিসেবে এক সময় করোনাকে দায়ী করেছে সরকার। আবার রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধকে দায়ী করেছেন। ডিমের দাম দোকানভেদে ১৫ টাকা আপ-ডাউন করছে। ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ডিমের দাম বাড়বে কেন? ফার্মতো আমাদের দেশেই আছে।
বিএনপির অপর যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল তার বক্তব্যে সরকারী দলকে উদ্দেশ্য করে বলেন, প্রত্যেকটি জিনিসের পয়েন্টে পয়েন্টে হিসাব করা হবে। জনগণের আদালতে সবকিছুর বিচার হবে। আমরা মানুষের অধিকার আদায়ে আন্দোলন করে যাচ্ছি। এ আন্দোলন সফল হবেই হবে।

বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস জাহান শিরিন বলেছেন, জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে পালিয়ে যাননি, বরিশালের মানুষ বিএনপিকে বিশ্বাস করে, যার প্রমাণ এই মহাসমাবেশ। মহাসমাবেশে জনসমুদ্র প্রমাণ করেছে বরিশাল বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের ঘাঁটি, ধানের শীষের ঘাঁটি। বিভাগীয় গণসমাবেশে বক্তব্যে তিনি আওয়ামী লীগ সভানেত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ধানের শীষের এই বরিশালে আপনার মামাতো-ফুফাতো ভাইদের দিয়ে কিছু হবেনা। তাদের মতো আমরা রাতের আঁধারে পালিয়ে যাবো না। এই মহাসমাবেশ দেখুন, পায়ে হেঁটে মানুষ চলে এসেছে। এখন কী করবেন, বাধা দিয়ে তো কোনো লাভ হলো না।

শিরিন আরও বলেন, গত তিনদিন ধরে বরিশাল বিভাগের মানুষকে পিঁপড়ার মতো হেঁটে হেঁটে সমাবেশে উপস্থিত হতে হয়েছে। সড়কপথে কখনো ইজিবাইকে, আবার কখনো মোটরসাইকেল, ব্যাটারিচালিত ভ্যানে কিংবা পায়ে হেঁটে, নদীপথে ইঞ্চিনচালিত নৌকা ও ট্রলারে গাদাগাদি করে নেতাকর্মীরা বরিশালের সমাবেশস্থলে এসে গণজোয়ারের সৃষ্টি করেছেন। অনেকে হামলার শিকার হয়েছেন। পথে পথে বাঁধার সম্মুখীন হয়েছেন। তারপরেও সমাবেশে অংশগ্রহণ করার মধ্যদিয়ে বরিশালের মানুষ যথাযথ উত্তর দিয়েছেন।

ভোলায় বিএনপি নেতাকর্মীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা আব্দুর রহিমের স্ত্রী খাদিজা বেগম বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশে বক্তব্য দিতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পরেন। এসময় তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমি আমার স্বামীকে হত্যার বিচার শেখ হাসিনার সরকারের কাছে চাই না। আমি হত্যার বদলে হত্যা চাই, গুলির বদলে গুলি চাই, রক্তের বদলে রক্ত চাই!

খাদিজা বেগম আরও বলেন, আমি দুনিয়ায় অসহায় হয়ে পড়েছি। আমার সন্তানদের এতিম করে দেওয়া হয়েছে। আমার স্বামীর কোনো অন্যায় ছিল না। আমার স্বামীর অন্যায় ছিল তিনি শেখ হাসিনার বিপরীত মতাদর্শের নীতি ভালোবাসতেন। এটা কোনো অন্যায় হতে পারেনা।

গণসমাবেশে বরিশাল মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ফিরোজ খান কালু ও তার ভাই মিরাজ খানের মা ফিরোজা বেগম বলেন, আমার দুই ছেলেকে গুম করা হয়েছে। এই সরকার নিজেদের মানবতার সরকার বলে দাবি করে। আমার ছোট ছেলে মিরাজ খানের বয়স তখন মাত্র ১৫ বছর। আমার দুই ছেলের কী দোষ ছিল, কেন তাদের গুম করা হলো? আমার বুক খালি করা হলো! আমি আমার ছেলেদের ফেরত চাই।

বিএনপির চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি, নির্বাচনকালীন সরকার ও জ্বালানিসহ নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি, পুলিশের গুলিতে দলীয় নেতাকর্মী হত্যা, হামলা ও মিথ্যা মামলার প্রতিবাদে দেশের বিভাগীয় শহরগুলোতে গণসমাবেশের অংশ হিসেবে বরিশালে অনুষ্ঠিত বিভাগীয় সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন মহানগর বিএনপির আহবায়ক মনিরুজ্জামান ফারুক।

কলার ভেলায় নদী পাড়াপাড় ॥ নগরী আর উপজেলাকে বিচ্ছিন্ন করেছে কীর্তনখোলা নদী। বরিশালের নৌবন্দরের পাশে চরকাউয়া পয়েন্টে খেয়াই যাতায়াতের সহজ মাধ্যম। সেই খেয়া পারাপার শুক্রবার থেকে বন্ধ রয়েছে। তাই কীর্তনখোলার ওপারের ইউনিয়নগুলোর সাথে শহরের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। বিএনপির নেতকর্মীরা শনিবার সকালে সেই নদী সাঁতরে সমাবেশস্থলে পৌঁছেছেন, এমনটাই দেখা গেছে। প্রায় ৩০ মিনিট সাঁতরে তারা কীর্তনখোলা নদী পাড়ি দিয়ে সমাবেশস্থলে এসেছেন। তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন ছাত্রদল নেতা সবুজ তালুকদার। এছাড়াও একাধিক কলার ভেলায় অসংখ্য নেতাকর্মীরা নদী পাড়ি দিয়েছেন।

কাফনের কাপড় জড়িয়ে সমাবেশস্থলে নেতাকর্মীরা :

বরিশালে বিএনপির গণসমাবেশে কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস জাহান শিরিনের নেতৃত্বে কাফনের কাপড় পরে মিছিলে যোগদান করেছেন নেতাকর্মীরা। 

এছাড়াও হুইল চেয়ারে সমাবেশস্থলে আসেন সদর উপজেলার বিএনপির কয়েকজন প্রতিবন্ধী ব্যক্তি। কাফনের কাপড় পরে আসা মিছিলের নেতৃত্ব দেওয়া বিলকিস জাহান শিরিন বলেন, আমাদের হাজার হাজার নেতাকর্মী সমাবেশস্থলে এসেছে। সরকারের কোনো বাধাই কাজে আসেনি। নেতাকর্মীরা গুম ও খুনের প্রতিবাদে কাফনের কাপড় পরে এ সমাবেশে এসেছেন।

মঞ্চ ভেঙে দুই সাংবাদিক আহত :

সমাবেশস্থলে সংবাদ সংগ্রহের জন্য সাংবাদিকদের জন্য করা স্টেজ বিএনপি কর্মীদের হুলস্থুলের কারণে ভেঙে পরেছে। শুক্রবার রাতে মঞ্চ ভেঙে আহত হওয়া বেসরকারি সময় টিভির বরিশালের ক্যামেরা পার্সন সুজয় দাস বলেন, বিএনপি নেতাকর্মীরা সাংবাদিকদের জন্য করা স্টেজে উঠে লাফালাফি করছিল। আমরা সে সময় অনেক সংবাদকর্মী কাজ করছিলাম। তাদের প্রথমবার নামিয়ে দেওয়ার তারা পুনরায় স্টেজে উঠে লাফালাফি শুরু করলে স্টেজটি ভেঙে পরে। এতে আমি মাথায় আঘাত পেয়েছি। এছাড়াও আরও এক সংবাদকর্মী আহত হয়ে একটি টিভি ক্যামেরাও ভেঙে গেছে। তবে রাতের মধ্যেই ভেঙে পরা মঞ্চটি মেরামত করা হয়।

সমাবেশে আসার পথে মৃত্যু 

বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশে আসার পথে বরগুনা সদর উপজেলার নলটোনা ইউনিয়নের বিষখালী নদীতে শুক্রবার রাতে বরিশালগামী একটি ট্রলার থেকে লাফ দিয়ে আরেকটি ট্রলারে যাওয়ার সময় আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে ছগির খান (৩০) নামের এক বিএনপি কর্মী মারা গেছেন। তিনি নলটোনা ইউনিয়নের মোস্তাকপুর বাজারে ইলেকট্রিক ও মোবাইল সার্ভিসিংয়ের ব্যবসা করতেন। ছগিরের চাচা পলাশ খান তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, গুরুত্বর আঘাতপ্রাপ্ত ছগিরকে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে নেয়ার পর চিকিৎসক তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। 

ড্রামে নদী পার :

বরিশালে সব ধরনের যাত্রীবাহী যান চলাচল বন্ধ থাকায় বিভিন্ন পন্থায় বিএনপির সমাবেশস্থলে এসেছেন নেতাকর্মীরা। কেউ নৌকায়, আবার কেউ ট্রলারে চেঁপে বরিশালে এসেছেন। আবার কেউবা ড্রামের ভেলায়ও নদী পারপার হয়েছেন। দুপুরে ড্রামের ওপর ভেসে নেতাকর্মীদের নগরীর  মুক্তিযোদ্ধা পার্ক সংলগ্ন নদীতে ট্রলার থেকে তীরে, আবার তীর থেকে ট্রলারে উঠতে দেখা গেছে।

মুন্সীগঞ্জের ভিডিও বরিশালের দাবি :

 নদীপথে এগিয়ে চলছে ট্রলারের বহর, প্রতিটি ট্রলারে মানুষের গাদগাদি। ৩৮ সেকেন্ডের এমন একটি ভিডিও ক্লিপ শুক্রবার রাতে ফেসবুকে নিজের অ্যাকাউন্টে পোস্ট করেছেন বরিশাল জেলা ছাত্রদলের সহ-সভাপতি লেনিন খান মোরশেদ। 

পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘পুরো বরিশালে এখন ঈদের আমেজ’। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভিডিওটি বরিশালের নয়, মুন্সিগঞ্জের। গত ২ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হওয়া মুন্সিগঞ্জের হোসেন্দী ইউনিয়নের উপ-নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীর প্রচারণার ভিডিওটি। এ ব্যাপারে জেলা ছাত্রদলের সহ-সভাপতি লেনিন খান মোরশেদ বলেন, বরিশাল রুটে বাস-লঞ্চ বন্ধ, তাই শনিবারের সমাবেশে যোগ দিতে আমাদের নেতাকর্মীরা নদীপথে ট্রলারে করে আসছেন। 

আমি ভিডিওটি করিনি, ফেসবুক থেকে পেয়ে আমাদের নেতাকর্মীদের মনে করে পোষ্ট করেছি। এর আগে রংপুরের সমাবেশে অংশগ্রহন করা বিএনপি নেতাকর্মীদের একটি বাইসাইকেল র‌্যালি বরিশালের দাবি করে ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয়া হয়।

এমএস

সম্পর্কিত বিষয়:

×