ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২০ জুলাই ২০২৫, ৪ শ্রাবণ ১৪৩২

ব্যবসা একটি এলিট পেশা, চরিত্রের পরীক্ষা

মোসাঃতানজিলা

প্রকাশিত: ২২:০৯, ১৯ জুলাই ২০২৫

ব্যবসা একটি এলিট পেশা, চরিত্রের পরীক্ষা

ছবি: প্রতীকী

আমার কাছে পৃথিবীর অন্যতম এলিট পেশা হলো বিজনেস। এটা শুধু একটা পেশা না, চরিত্রের পরীক্ষা।

এমন একটা পেশা, যেটা সভ্যতার গোড়া থেকেই মানুষকে গঠন করতে শিখিয়েছে, তৈরি করেছে অর্থনীতি, বদলে দিয়েছে  মানচিত্র। যেখানে পুঁজি শুধু টাকা নয়, সেখানে পুঁজি হলো বিবেক, বুদ্ধি আর বিশ্বাস।

সমাজবিজ্ঞানী Max Weber তার বিখ্যাত “Protestant Ethic and the Spirit of Capitalism” গ্রন্থে তিনি বলেছিলেন, 

“ব্যবসা যত না লাভের খেলা, তার চেয়েও বেশি এটা শৃঙ্খলা, আত্মসংযম ও দায়িত্ববোধের একটি অনুশীলন।”

আপনি যদি একজন ব্যবসায়ী হিসেবে সত্যবাদী হন, আপনার লেনদেনে যদি আমানতদার থাকেন তবে হাশরের ময়দানে আপনার মর্যাদা নবী, সিদ্দিক আর শহীদদের কাতারে।

Just imagine, আল্লাহ আপনার অবস্থান কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন!

রাসূল ﷺ বলেন:
“সৎ ও আমানতদার ব্যবসায়ী কিয়ামতের দিন নবী, সিদ্দিক ও শহীদদের সঙ্গে থাকবে।”
[তিরমিযীঃ ১২০৯]

কিন্তু কথা হলো, এমন একটা এলিট পেশায় এসে এখন টিকে থাকাটাই সবথেকে বড় চ্যালেঞ্জ। আর এথিক্স বজায় রাখা, সে আলাদা এক যুদ্ধ।

অনেকের ধারণা, চাকরি করতে হলে শিক্ষাগত যোগ্যতা লাগে, কিন্তু ব্যবসা?

“ও তো অশিক্ষিতরাও করে!”

এই ভাবনাটা আসলে যতটা সরল, বাস্তবতা ঠিক ততটাই জটিল।

ব্যবসার জন্য প্রয়োজন হয় আরও গভীর যোগ্যতা। আপনার হাতে টাকা থাকলেই আপনি দোকান বসাতে পারেন ঠিকই, কিন্তু সেই দোকান টিকিয়ে রাখতে লাগে সঠিক ভিশন, মার্কেট বোঝার চোখ, ক্রেতার মনের হদিস, আর নিজের জায়গাটা বোঝার একটা পরিপক্বতা। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার  হলো -সৎ থেকে খেলাটা খেলা।

ব্যবসা একটা উপার্জনের পথ, চ্যারিটি না। এখানে প্রফিটেবল হওয়াই নিয়ম। কিন্তু আপনি যদি শখে-শখে একটা সেক্টরে এসে প্রফিট বাদ দিয়ে, গালভরা ‘মানবসেবা’র নামে চ্যারিটি করতে থাকেন, আর ভাবেন সবাই বাহবা দেবে চিরকাল—তাহলে আপনি দিবাস্বপ্নই দেখছেন।

আপনি যদি নিজের পেশাকে না বোঝেন, ইন্ডাস্ট্রির কাঠামো না জানেন, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড না বুঝে শুধু পাকনা পাকনা ভাব নিয়ে ‘ভিন্নধর্মী ব্যবসা’ করতে আসেন—তাহলে একসময় সেটা একেবারে প্রহসনে গিয়ে ঠেকে।
মানুষ স্বভাবতই লোভাতুর, এই গুণের ক্ষেত্রে আমরা বাঙালীরা আবার এক কাঠি বেশি-ই গুণী। যতক্ষণ আপনি তাদের দিতে পারেন, ততক্ষণ আপনাকে মাথায় রাখবে।

কিন্তু একসময় আপনার মুরোদ ফুরাবে, তাইনা?

তখন এই যারা আপনার বাহবায় ছেঁচে যাচ্ছিল, তারাই একদিন নিচে ফেলে পায়ে মারবে দেখবেন । এটাই প্রকৃতির নিয়ম "কিফারা" বলে একটা ব্যাপার আছে তো!

আপনি যখন একটা ইন্ডাস্ট্রিতে ঢোকেন, তখন সেটা আপনার একার না। আপনার সাথে আর দশজন আছে, যারা দিনরাত খেটে, স্ট্র্যাটেজি নিয়ে ব্যবসা করছে।

আপনি যদি ‘উড়বেন’ বলে একেবারে মগডালে গিয়ে বসে গাছের গোড়াতেই কোপ মারেন—তাহলে সেটা শুধু আপনার পতনই ডেকে আনবে না বরং তার সমূলে উৎপাটন হবে,তাই সংশ্লিষ্ট সবারই বিপদ ডেকে আনবেন।

আমরা ছোটবেলায় শুনতাম,
বেশি বাড় বেড়ো না, ঝড়ে পড়ে যাবে।
এই কথাটা তখন হাসির মতো শোনালেও, এখন বোঝা যায়
এটা আসলে একটা দর্শন, ধ্রুব জীবনদর্শন।

আপনি যখন নীতিকে বিকিয়ে দিয়ে চলেন, একদিন সেই নীতিহীনতাই আপনাকে উড়িয়ে নিয়ে যাবে।

যা-ই হোক! অর্থনীতি পড়তে বসছিলাম, তাই আপনাদের সাথে ও শেয়ার করলাম। এখন জুতা কারো পায়ে লাইগা গেলে আপনিই সিন্ডারেলা। কিংবা সিন্ডারেল! 

 

লেখক: মোসাঃতানজিলা, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, ইডেন মহিলা কলেজ, ঢাকা

নুসরাত

×