
ছবি: জনকণ্ঠ
মাদক এই একটি শব্দ আজ আমাদের সমাজের সবচেয়ে বড় উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। শহর থেকে গ্রাম, শিক্ষার্থী থেকে পেশাজীবী, দরিদ্র থেকে ধনী কাউকেই রেহাই দিচ্ছে না এই ভয়াবহ মরণনেশা।
তরুণ প্রজন্ম যেখানে হওয়ার কথা ছিল দেশের অগ্রগতির চালিকাশক্তি, সেখানে তারা আজ অনেকাংশে হারিয়ে যাচ্ছে মাদকের অন্ধকার জগতে। মাদক শুধু একজন ব্যক্তির জীবন ধ্বংস করে না, বরং একটি পরিবার, একটি সমাজ এবং বৃহত্তর রাষ্ট্রব্যবস্থাকেও দুর্বল করে দেয়।
মাদকের ক্ষতিকর প্রভাব
১. শারীরিক ক্ষতি: ইয়াবা, গাঁজা, ফেনসিডিল, হেরোইন প্রভৃতি মাদক শরীরের অভ্যন্তরীণ অঙ্গপ্রত্যঙ্গে চরম ক্ষতি করে। লিভার, কিডনি, ব্রেইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে স্থায়ীভাবে বিকল হয়ে যেতে পারে।
২. মানসিক অবক্ষয়: মাদক সেবনে মানসিক ভারসাম্য হারায়, বিষণ্নতা, বিভ্রম, আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়ে যায়। একজন স্বাভাবিক মানুষ ধীরে ধীরে পরিণত হয় এক হতাশাগ্রস্ত, অস্থির ও হিংস্র চরিত্রে।
৩. অপরাধপ্রবণতা বৃদ্ধি: অর্থের অভাবে মাদকাসক্ত ব্যক্তি চুরি, ছিনতাই, প্রতারণা এমনকি খুনের মতো জঘন্য অপরাধেও জড়িয়ে পড়ে।
৪. পারিবারিক ও সামাজিক ভাঙন: মাদক একজন ব্যক্তিকে পরিবারের চোখে অবিশ্বাসযোগ্য করে তোলে। সংসারে অশান্তি সৃষ্টি হয়, এবং সমাজে তার গ্রহণযোগ্যতা নষ্ট হয়।
মাদকমুক্ত সমাজ গঠনে করণীয়
১. পারিবারিক বন্ধন জোরদার করা: সন্তানের প্রতি নজরদারি, ভালোবাসা, ও বন্ধুর মতো সম্পর্ক গড়ে তোলা দরকার। পরিবারের অভ্যন্তরীণ সুস্থ পরিবেশই মাদক থেকে দূরে রাখতে পারে।
২. শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সচেতনতা বৃদ্ধি: বিদ্যালয়, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে নিয়মিত মাদকবিরোধী সেমিনার, নাটক, আলোচনা সভা আয়োজন করা প্রয়োজন।
৩. ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষার বিস্তার: ধর্মীয় অনুশাসন ও নৈতিক শিক্ষা একজন মানুষকে আত্মনিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। মসজিদ, মন্দির, গির্জা ও প্যাগোডা—সব ধর্মীয় স্থান হতে মাদকবিরোধী বার্তা ছড়িয়ে দিতে হবে।
৪. যুবসমাজকে খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক চর্চায় যুক্ত করা: তরুণরা যখন গঠনমূলক কাজে ব্যস্ত থাকে, তখন তারা মাদকের মতো নেতিবাচক কিছু থেকে দূরে থাকে।
৫. আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সক্রিয়তা: মাদক চোরাচালান, বিক্রি ও সেবনে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি। রাজনৈতিক ছত্রছায়া থেকে মুক্ত রাখতে হবে অভিযানকে।
৬. পুনর্বাসন কেন্দ্রের সংখ্যা ও কার্যকারিতা বৃদ্ধি: মাদকাসক্তদের সামাজিকভাবে বর্জন না করে চিকিৎসা ও মানসিক সহায়তার মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করতে হবে।
উপসংহার
মাদকমুক্ত সমাজ গঠন শুধু সরকারের কাজ নয়, বরং আমাদের প্রত্যেকের দায়িত্ব। ঘরে, স্কুলে, অফিসে, মঞ্চে সব জায়গা থেকেই ‘না’ বলতে হবে মাদকের প্রতি। প্রতিজ্ঞা করতে হবে, নিজে কখনো মাদক সেবন করবো না এবং অন্যকেও করতেও দেব না।
** সম্মানিত শিক্ষকদের প্রতি উদাত্ত আহ্বান আপনারা ক্লাসে শিক্ষার্থীদের মাদকের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে সচেতন করবেন।
** সম্মানিত ইমাম ও খতীবদের প্রতি উদাত্ত আহ্বান আপনারা জুম্মার বয়ানে মাদকের বিরুদ্ধে কোরআন ও হাদীসের আলোকে সচেতন করুন ।
** রাজনৈতিক দলের প্রতি উদাত্ত আহ্বান আপনারা মাদক ব্যবসায়ী ও সেবনকারীদের দলে জায়গা দিবেন না।
** পুলিশ- প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ আপনারা আন্তরিক হয়ে শুধু মাদক নিয়ন্ত্রণ নয়, মাদক নির্মুলে কাজ করুন। আমাদের সম্ভাবনাময় তরুণ ও যুবসমাজকে রক্ষা করুন।
আজই সময়, আমরা একসাথে বলি—
“মাদক নয়, সুস্থ জীবন চাই। গড়বো আলোকিত সমাজ, হবো সম্ভাবনার বাংলাদেশ।
লেখক, মো. পারভেজ মোশারফ, শিক্ষক ও সমাজকর্মী, নড়িয়া-শরীয়তপুর।
শহীদ