
রোগীদের জীবন বাঁচাতে এবং বিদেশনির্ভরতা কমাতে অন্তর্বর্তী সরকার ‘মানবদেহে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সংযোজন-সংক্রান্ত অধ্যাদেশ ২০২৫’-এর খসড়ায় নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে। নতুন আইনে আত্মীয়দের মধ্যে কিডনি প্রতিস্থাপনের (সোয়াপ ট্রান্সপ্লান্ট) সুযোগ থাকছে এবং অঙ্গ দানের পরিধি আরও বিস্তৃত করা হয়েছে। আগের আইনে শুধু বাবা-মা, ভাই-বোন বা সন্তান অঙ্গ দান করতে পারতেন। নতুন আইনে ‘নিকটাত্মীয়’-এর সংজ্ঞায় ভাতিজা-ভাতিজি ও ভাগনে-ভাগনিকেও অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব এসেছে। ফলে আরও বেশি মানুষ বৈধভাবে অঙ্গ দানে সক্ষম হবেন। পাশাপাশি দেশের ভেতরেই কিডনি প্রতিস্থাপনের সুযোগ সৃষ্টি হবে। এছাড়াও ব্রেন ডেড রোগীদের কিডনি প্রতিস্থাপন বা ক্যাডাভেরিক ট্রান্সপ্লান্টের সুযোগ বাড়ানো হয়েছে। অঙ্গ দানকারীদের সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে সম্মানিত করার ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। জীবিত থাকাকালীন তাদের নাম সরকারি তালিকায় রাখা হবে এবং দেহদানকারীদের মর্যাদা দেওয়া হবে। চিকিৎসাকেন্দ্রগুলোতে সচরাচর দেখা যায়, অনেক রোগীর আত্মীয় কিডনি দিতে চাইলেও রক্তের গ্রুপ বা টিস্যু ম্যাচ না করায় তা সম্ভব হয় না। বর্তমানে অন্য কোনো রোগীর আত্মীয়ের সঙ্গে রক্তের গ্রুপ বা টিস্যু ম্যাচ হলে উভয়ের মধ্যে কিডনি প্রতিস্থাপন করা যাবে। এক্ষেত্রে একই দিনে উভয়ের অস্ত্রোপচার হবে। সেই লক্ষ্যে একটি জাতীয় ডোনার পুল তৈরি করা হবে।
সমীক্ষায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে প্রতি বছর ১০ হাজার কিডনি প্রতিস্থাপনের দরকার পড়ে। কিন্তু দেশে বছরে মাত্র ২০০ থেকে ২৫০ জনের বিকল কিডনি প্রতিস্থাপন করা সম্ভব। অবশিষ্ট রোগী ভারত, শ্রীলঙ্কা, সিঙ্গাপুর ও আমেরিকায় গিয়ে প্রচুর ব্যয়ে কিডনি প্রতিস্থাপন করাচ্ছেন। সাধারণত ডোনার সংকটের কারণেই দেশে কিডনি প্রতিস্থাপনের হার কম। দাতা পাওয়া গেলেও সবসময় রক্তের গ্রুপ বা টিস্যু ম্যাচ হয় না। তাই ডোনার সোয়াপের সুযোগ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমান আইনের সীমাবদ্ধতার কারণে বহু রোগীকে চিকিৎসার জন্য ভারত, সিঙ্গাপুর বা থাইল্যান্ডে যেতে হয়। সংশোধিত আইনটি বাস্তবায়িত হলে দেশে অঙ্গ প্রতিস্থাপন সহজ হবে, চিকিৎসার মানোন্নয়ন ঘটবে এবং বিদেশে যাওয়ার প্রবণতা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে আসবে বলে প্রত্যাশা। এতে প্রতি বছর দেশের বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে। চিকিৎসকদের মতে, দেশে অঙ্গ প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে এটি একটি যুগান্তকারী পরিবর্তন। তবে দেশে অঙ্গ প্রতিস্থাপন চালু করলেই হবে না। এই বিষয়ে দেশে বিদ্যমান আইনের সংস্কারের পাশাপাশি সামাজিক আন্দোলন তৈরি করতে না পারলে অকার্যকর থেকে যাবে। এজন্য সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। সফলভাবে এই কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারলে দেশের রোগীদের জন্য স্বস্থি বয়ে আনবে। সেই সঙ্গে এর মাধ্যমে চিকিৎসা ব্যবস্থায় একটা বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে বলেও ধারণা করা হচ্ছে।
প্যানেল/মো.