সম্পাদকীয়
কাঁচাবাজারেও পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধ করা হয়েছে শুক্রবার থেকে। সরকারের এই নির্দেশ যারা অমান্য করবেন, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এ কথা বলা হয়েছে। একমাস আগে সুপার শপগুলোতে পলিথিন ব্যবহার নিষিদ্ধ হয়। সেখানে যথেষ্ট পরিমাণে না হলেও বিকল্প হিসেবে পাট, কাগজ ও কাপড়ের ব্যাগ ব্যবহৃত হচ্ছে। পলিথিন ব্যাগের ব্যবহার বন্ধে মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে কঠোরভাবে চালু হয়েছে ‘মনিটরিং’।
পাশাপাশি পলিথিন উৎপাদনকারীদের বিরুদ্ধেও অভিযান চালানোর কথা বলা হয়েছে। ফলে, পলিথিন ব্যবহার কমে যাবে, এমনটা আশা করা যায়। নিষিদ্ধ পলিথিন শপিং ব্যাগের ব্যবহার বন্ধে রাজধানীর মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটসহ আশপাশের বিভিন্ন সুপারশপে মনিটরিং কার্যক্রম চালানো হয়েছে। এটি নিয়মিত হলে সুফল মিলতে পারে। মনিটরিং কমিটির সদস্যরা বাজার করতে আসা লোকজনকে পলিথিন ব্যবহার না করতে অনুরোধ জানান। এর পরিবর্তে পাট বা কাপড়ের ব্যাগ ব্যবহার করতে বলেন। দোকানিদের জানানো হয়, অভিযানে পলিথিন ব্যাগ পাওয়া গেলে নেওয়া হবে কঠোর ব্যবস্থা।
এটা স্পষ্ট যে, পলিথিন ব্যাগ সরবরাহ ও বিতরণ বন্ধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে সরকার। তবে পলিথিনের ব্যাগ ব্যবহার নিষিদ্ধ করায় পণ্যসামগ্রী বহনে সংকট তৈরি হওয়ার আশঙ্কাও প্রকাশ করেছেন অনেকে। গ্রাহকদের দাবি, পলিথিন সহজলভ্য হওয়ায় পণ্যবহন ছিল সুবিধাজনক। কর্মক্ষেত্র থেকে ফেরার সময় প্রয়োজনীয় পণ্য বা ছোটখাটো কেনাকাটা করে পলিথিনে আনা ছিল সহজ। এখন পলিথিনের বিকল্প কী হবে, তা নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে তৈরি হয়েছে ধূম্রজাল। বাংলাদেশ পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম পাট উৎপাদনকারী দেশ।
কাঁচাপাট রপ্তানিতে বাংলাদেশের অবস্থান শীর্ষে। কাজেই পলিথিনের বিকল্প থাকবে না, এটা হতে পারে না। পাটপণ্য বহুমুখী ব্যবহার উপযোগী। বিশেষজ্ঞদের মতে, পলিথিনের অতিরিক্ত ব্যবহার জনস্বাস্থ্যসহ প্রাণী ও পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি করছে। তাদের মতে, পরিত্যক্ত প্লাস্টিক মাইক্রোপ্লাস্টিকে পরিণত হয়ে বাতাস, পানি ও খাবারের মাধ্যমে মানবদেহে ঢোকে। ফলে, ক্যানসারের মতো ভয়াবহ রোগের পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদি ফুসফুস ও কিডনিজনিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। পলিথিনের রাসায়নিক উপাদান বিসফেনল এ (বিপিএ) ও ফ্যালেটস মানবদেহে হরমোনের ভারসাম্যহীনতা, শ্বাসকষ্ট, প্রজনন সমস্যার মতো ঝুঁকিপূর্ণ স্বাস্থ্য জটিলতার সৃষ্টি করে। এর ধোঁয়া বায়ুদূষণের মধ্য দিয়ে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে শ্বাসযন্ত্রকে।
এটা ঠিক যে, পলিথিন বন্ধ হলে ভোক্তারা বিকল্প হিসেবে পাট বা অন্যান্য পরিবেশবান্ধব ব্যাগ বাধ্য হয়ে ব্যবহার করবেন। অন্যদিকে প্রশাসন কঠোর হলে অর্থাৎ জরিমানা ও শাস্তিদানের সংস্কৃতি চালু হলে পলিথিন উৎপাদনকারী ও সরবরাহকারীরা সতর্ক হবে। এর প্রভাব বাজারে পড়বে, যা প্রকারান্তরে পরিবেশের জন্য ইতিবাচক। পলিথিনের পরিবর্তে পাটের ব্যাগ ব্যবহারে জনগণকে উদ্বুদ্ধকরণ সংক্রান্ত একটি মতবিনিময় সভায় উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, ‘সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোক্তারা পলিথিনের বিকল্প তৈরিতে আরও সক্রিয় হলে বাজারে ব্যাগের সংকট হবে না।’ তাই পলিথিনের বিকল্প সুলভ করতে হবে। তার দামও নাগালের মধ্যে রাখা চাই। হাতের নাগালেই যদি স্বল্প দামে পলিথিনের বিকল্প ব্যাগ পাওয়া যায়, তাহলে মানুষ সেদিকেই ঝুঁকবে। এজন্য সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই।