ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১২ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ কার্তিক ১৪৩১

রাজনৈতিক সংলাপ

-

প্রকাশিত: ২০:৩০, ৭ অক্টোবর ২০২৪

রাজনৈতিক সংলাপ

সম্পাদকীয়

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে আনুষ্ঠানিক রাজনৈতিক সংলাপ শুরু হয়েছে শনিবার। গত ৯ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার শপথ গ্রহণের পরেই জাতির উদ্দেশে প্রদত্ত ভাষণে ড. ইউনূস বলেছিলেন, তাঁর সরকার ছাত্র-জনতার সফল গণঅভ্যুত্থানের আশা-আকাক্সক্ষাকে প্রাধান্য দিয়ে প্রথমে রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যাপক সংস্কারের পাশাপাশি অগ্রাধিকার দেবে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানকে। এরই অপরিহার্য অংশ হিসেবে আনুষ্ঠানিক সংলাপ শুরু করেছে সরকার।

রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন   যমুনায় প্রথম দিনে  দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, গণতন্ত্র মঞ্চ, হেফাজতে ইসলাম, বাম গণতান্ত্রিক জোট, ইসলামী আন্দোলন, এবি পার্টি ও গণঅধিকার পরিষদের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে অনুষ্ঠিত হয় সংলাপ। মতবিনিময়ে পাঁচটি রাজনৈতিক দল ও তিনটি জোটের সঙ্গে প্রথম পর্যায়ের আলোচনা হয়। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ ও তার জোট সঙ্গীদের এই সংলাপের বাইরে রাখা হয়েছে। জাতীয় পার্টিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। তবে আগামী শনিবার আরও কয়েকটি দলকে সংলাপে ডাকা হতে পারে। 
সংলাপে স্বভাবতই প্রাধান্য পেয়েছে জাতীয় নির্বাচনের বিষয়টি। এর পাশাপাশি অন্তর্বর্তী সরকার প্রতিশ্রুত সংস্কারের বিষয়টিও বাদ যায়নি। বিএনপি যথাসম্ভব দ্রুত নির্বাচনী রোডম্যাপ চেয়েছে। অন্যদিকে, জামায়াতে ইসলামী দিয়েছে দুটি রোডম্যাপ। এর একটি যৌক্তিক সময়ের মধ্যে সংস্কার সম্পন্ন করে নির্বাচনে যাওয়ার জন্য। আর নির্বাচন প্রশ্নে আরও একটি রোডম্যাপ। দলটি মনে করে যে, সংস্কার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে সব সংস্কার অন্তর্বর্তী সরকার করুক তা তারা চায় না। তাহলে নির্বাচিত সরকার কি করবেÑ এই প্রশ্ন তুলেছে দলটি।

অন্যদিকে, রাজনৈতিক কাউন্সিল গঠনের প্রস্তাব করেছে ৬টি দলের জোট গণতন্ত্র মঞ্চ। বামপন্থি গণতান্ত্রিক জোট বলেছে একটি সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের লক্ষ্যে সংবিধান যতটুকু সংশোধনের দরকার, ততটুকু সংশোধন করার উদ্যোগ যথার্থ হতে পারে। ইসলামী আন্দোলন ও এবি পার্টি ৬টি সংস্কার কমিশনের পাশাপাশি আরও কিছু ক্ষেত্রে সংস্কারের প্রস্তাব করেছে। 
সংলাপ শেষে অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করে জানানো হয়, সংস্কার কাজের পাশাপাশি নির্বাচনের কার্যক্রম এগিয়ে নেওয়া হবে। ৬টি সংস্কার কমিশন বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং সমাজের বিভিন্ন স্তরের ব্যক্তিদের সঙ্গেও কথা বলবে। তিন মাসের মধ্যে সরকারের কাছে তারা সংস্কারের প্রতিবেদন দাখিল করবে। এরপর রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংস্কারের বিষয়ে ঐকমত্যের ওপর নির্ভর করবে নির্বাচনের সময়। দ্বিমতের কোনো অবকাশ নেই যে, সংস্কার একটি দীর্ঘমেয়াদি বিষয় ও প্রক্রিয়া, তাও জাতীয় পর্যায়ে।

এটাও ঠিক যে, জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান একটি অগ্রাধিকারমূলক বিষয়, বিশেষ করে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে। তবে সংস্কার শুধু বিভিন্ন সরকারি সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের জন্যই প্রয়োজ্য নয়, বরং রাজনৈতিক দলগুলোর ক্ষেত্রেও সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। সবার ওপরে স্থান দিতে হবে গণতন্ত্র, সুশাসন ও ন্যায়বিচারকে। একটি কর্তৃত্ববাদী শাসনের জায়গায় আর একটি কর্তৃত্ববাদী শাসন যেন না আসে, তা নিশ্চিত করতে হবে।

এর জন্য চাই একটি স্বাধীন ও স্বনির্ভর নির্বাচন কমিশন। যাতে স্বচ্ছ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব হতে পারে। তা না হলে ছাত্র-জনতার আশা-আকক্সক্ষার মূল প্রত্যাশা পূরণ হবে না। অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে সর্বস্তরের জনগণের প্রত্যাশাÑ দেশে একটি স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক, দুর্নীতিমুক্ত ও বৈষম্যহীন গণতান্ত্রিক নতুন বাংলাদেশ গড়ে তোলা, যা বর্তমান সময়ের অনিবার্য দাবি।

×