ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

কাস্টমসের আধুনিকায়ন

-

প্রকাশিত: ২০:২৫, ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

কাস্টমসের আধুনিকায়ন

সম্পাদকীয়

সরকার রূপকল্প ২০৪১-এর আওতায় স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে দেশের কাস্টমস বিভাগকে স্মার্ট তথা আধুনিকায়নের উদ্যোগ নিয়েছে। অস্বীকার করার উপায়  নেই যে, দেশের রাজস্ব ও শুল্ক আদায় পদ্ধতি অনেকাংশে ডিজিটাল হলেও সর্বত্র প্রযুক্তির ছোঁয়া লাগেনি এখনো। দক্ষ জনবলের অভাবও প্রকট। পদে পদে ঘুষ-দুর্নীতি-অনিয়ম-অব্যবস্থার চিত্র প্রায় ওপেন সিক্রেট। সম্প্রতি বিশ্বব্যাংক পরিচালিত এক প্রতিবেদনে বিশেষ করে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ায় ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধির প্রতিবন্ধকতা হিসেবে অনেক বিষয় তুলে ধরা হয়েছে।

এগুলোর মধ্যে রয়েছে- আঞ্চলিক যোগাযোগ নেটওয়ার্কের ক্ষেত্রে অবকাঠামোগত সমস্যা, দুর্বল পরিবহন ব্যবস্থা, কাস্টমস হাউসগুলোর সক্ষমতার ঘাটতি ইত্যাদি। আঞ্চলিক যোগাযোগ ও পরিবহনে গত কয়েক বছরে ব্যাপক অগ্রগতি দৃশ্যমান হলেও কাস্টমস ও শুল্ক ব্যবস্থা এখনো রয়ে গেছে সেকেলে। আমদানি ও রপ্তানি পণ্যাদি আধুনিক মানসম্মত ল্যাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং মালামাল চেকিংয়ের জন্য অত্যাধুনিক স্ক্যানার পর্যন্ত নেই অনেক স্থানে। সেক্ষেত্রে কাস্টমসের আধুনিকায়নসহ বর্তমান বিশ্বের উপযোগী করে গড়ে তোলা সময়ের অনিবার্য দাবি। 
এর জন্য উচ্চ প্রযুক্তি ব্যবহারের পাশাপাশি আধুনিক অবকাঠামো এবং সময়োপযোগী দক্ষ জনবল গড়ে তোলার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এ বিষয়ে একটি প্রকল্প প্রস্তাব ইতোমধ্যেই পাঠানো হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। বিশ্বব্যাংকের ঋণ সহায়তায় এতে ব্যয় হবে ১ হাজার ৮৬২ কোটি টাকা।  এর আওতায় ঢাকা, চট্টগ্রাম ও বেনাপোল স্থলবন্দরে আধুনিক কাস্টমস হাউস নির্মাণ করা হবে। দক্ষ জনবল তৈরির জন্য চট্টগ্রামে তৈরি হবে একটি প্রশিক্ষণ একাডেমি। এর পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দেশে-বিদেশে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। প্রকল্পের কাজ শেষ হবে ২০২৭ সালের জুলাই মাসে। 
প্রকল্পটি যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হলে স্থল-নৌ ও বিমানবন্দরগুলোতে ব্যয়সাশ্রয়ী টেকসই ও সহনশীল বাণিজ্যিক অবকাঠামোর উন্নয়ন সাধিত হবে। আন্তর্জাতিক মানদ- অনুযায়ী আধুনিক শুল্ক পদ্ধতি গ্রহণ করে বাণিজ্যিক ব্যয় কমিয়ে আনা সম্ভব হবে। ফলে, সক্ষমতা বাড়বে শুল্ক বিভাগের মানবসম্পদ ও রাজস্ব আয়ের। পাওয়া যাবে পণ্য পরীক্ষা-নিরীক্ষার সর্বাধুনিক স্ক্যানার ও ল্যাব।

সর্বোপরি আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে অবৈধ চালান বন্ধ করে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। ঘুষ-দুর্নীতি-অনিয়ম কমে আসবে বহুলাংশে। বন্ধ হবে অবৈধ পণ্য আমদানি-রপ্তানি ও চোরাচালান। সর্বোপরি দক্ষিণ এশিয়ার ভুটান, ভারত ও নেপালের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় ব্যবসা-বাণিজ্য ২০১৯ সালের কোভিড-১৯ পূর্ববর্তী ১৮ বিলিয়ন ডলার থেকে বৃদ্ধি পাবে কয়েক গুণ। আগামীতে রাজস্ব আয় বৃদ্ধিসহ সার্বিক রাজস্ব ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন সাধিত হলে স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্ন রূপ পেতে যা হবে প্রভূত সহায়ক।

×