ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

চুক্তিভিত্তিক পোল্ট্রি খামার

-

প্রকাশিত: ২০:২৪, ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

চুক্তিভিত্তিক পোল্ট্রি খামার

সম্পাদকীয়

সম্ভাবনাময় পোল্ট্রি শিল্পে বর্তমানে প্রত্যক্ষভাবে প্রায় ৫০ লাখ এবং পরোক্ষভাবে এক থেকে দেড় কোটি মানুষ জড়িত। বাজারে চাহিদা অনুযায়ী মুরগির মাংস ও ডিমের সরবরাহ বাড়াতে নতুন উদ্যোগ ‘কন্ট্রাক্ট ফার্মিং বা চুক্তিভিত্তিক পোলট্রি খামার’ ব্যবসায়ীদের মনে আশার সঞ্চার করছে। বিনা পুঁজিতে নিশ্চিৎ লাভের এ ব্যবসা মুরগির খামারিদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। ক্রমবিকাশমান এ খাতে ভিনদেশীদের আগ্রাসন ছাপিয়ে সেবা আর লাভে খামারিদের আস্থার শিখরে উঠে এসেছে দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলো।

দেশের ৪০ শতাংশ পোল্ট্রি খামার নিয়ন্ত্রণ করছে বিদেশী কোম্পানি, যা অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয়। ফলে, ভবিষ্যতে বিদেশী কোম্পানিগুলোর কাছে ক্ষুদ্র ও মাঝারি দেশী কোম্পানিগুলো জিম্মি হয়ে পড়ার শঙ্কা ছিল। করোনা পরবর্তীতে এ খাতের খামারিদের সমস্যা চিহ্নিত করে বিনা জামানতে সহজ শর্তে ‘চুক্তিভিত্তিক খামার’ পরিচালনা শুরু করে দেশীয় প্রতিষ্ঠান কাজী ফার্মস লিমিটেড। কোম্পানিটি তাদের নীতি সহায়তার মাধ্যমে ইতোমধ্যেই খামারিদের আস্থা অর্জন করেছে।

পুরনো খামারিদের পাশাপাশি সারাদেশে শিক্ষিত ও নিরক্ষর বিভিন্ন শ্রেণির নারী-পুরুষ কন্ট্রাক্ট ফার্মিংয়ে মুরগি উৎপাদনের ব্যবসায় সম্পৃক্ত হয়েছেন। সংকট সবসময় থাকবে, তবে এ শিল্পে সম্ভাবনাও রয়েছে ব্যাপক। এজন্য গড়ে তুলতে হবে পোল্ট্রি শিল্পের জন্য আলাদা ডেভেলপমেন্ট বোর্ড বা করপোরেশন। ভোক্তা পর্যায়ে পোল্ট্রিপণ্যের দাম নির্ধারণও সময়ের দাবি।
বর্তমানে পোল্ট্রি শিল্প লাখ লাখ লোকের কাজের সুযোগ সৃষ্টির পাশাপাশি পুষ্টির জোগানেরও অন্যতম উৎস। এক দশক আগেও দেশের মানুষ বছরে গড়ে ৫০ টির বেশি ডিম খেতে পারত না। এখন বছরে গড়ে ১৩৬ টি করে ডিম খেতে পারে। আর ব্রয়লার মুরগির মাংস খাদ্য তালিকায় অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, একজন মানুষের ন্যূনতম পুষ্টি চাহিদা পূরণে বছরে ১০৪টি ডিম খাওয়া দরকার।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে, ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশে ডিম উৎপাদিত হয়েছে ২৩ কোটি ৩৫ লাখ ৩৫ হাজার বা মাথাপিছু ১৩৬টি। ২০১২-১৩ অর্থবছরে ডিমের উৎপাদন ছিল ৭ কোটি ৬১ লাখ ৭৪ হাজার। সে হিসাবে এক দশকে ডিমের উৎপাদন বেড়েছে তিনগুণ। একই সঙ্গে ভোক্তার ডিম খাওয়ার পরিমাণও বেড়েছে।
বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিলের (বিপিআইসিসি) তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ব্রয়লার মুরগির একটি ডিমের উৎপাদন খরচ ৯ টাকা ৫০ পয়সা এবং প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগির উৎপাদন খরচ ১৪৫ টাকার বেশি। কয়েকদিন আগেও খুচরা বাজারে আমরা একটা ডিম কিনেছি ১০ টাকায়। বতর্মানে একটা ডিম কিনতে হচ্ছে ১২ টাকায়। উৎপাদন খরচ বাড়ার কারণে খামারিরা এই ব্যবসায় আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। ব্রয়লার মুরগি ও ডিমের দাম বাড়লেও খামারিরা বাড়তি দাম পাচ্ছে না বলে জানা যায়।

ফলে, তারা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে জানা যায়, ২০০৯ সালে দেশে মুরগি ও ডিম উৎপাদন করা খামার বা ফার্মের সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৬০ হাজার। ২০২১-২২ অর্থবছরে তা কমে অর্ধেকে নেমে এসেছে করোনার কারণে।
বিভিন্ন সময়ে এই শিল্প নানামুখী চ্যালেঞ্জের মুখেও পড়েছে। উপযুক্ত ভ্যাকসিনের অভাবে খামারে মড়ক লাগা, উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি, ওষুধের চড়া দামসহ নানা কারণে বহু খামারি পুঁজি হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন। এই মুহূর্তে বাজারে প্রায় প্রতিটি নিত্যপণ্যের দাম বাড়তি। জীবনযাত্রার ব্যয় মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে মানুষ। এরই মধ্যে ডিমের মূল্য বৃদ্ধি নিয়ে বেশ সরগরম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ সর্বত্র। অথচ প্রান্তিক পর্যায়ে একজন খামারির একটি ডিম উৎপাদনে যে খরচ, সে তুলনায় ন্যায্য মূল্য পাচ্ছে কিনা, সেসব নিয়ে সংশ্লিষ্টদের নজর নেই বললেই চলে। ফলে, জনগণের পকেট খালি করে অসাধু ব্যবসায়ীদের পকেট ভারি হচ্ছে প্রতিনিয়ত। যার অবসান বাঞ্ছনীয়।

×