ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন

ড. মো. শফিকুল ইসলাম

প্রকাশিত: ২৩:৫৮, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন

.

নির্বাচন একটি রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। নির্বাচন জনগণকে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচনে সাহায্য করে থাকে। নির্বাচন একটি গণতন্ত্রের মৌলিক এবং পূর্বশর্ত। নির্বাচনের মাধ্যমেই জনগণ তাদের নেতা নির্বাচন বা পরিবর্তনের ক্ষমতা প্রয়োগ করে। নির্বাচিত প্রতিনিধিরা জনগণের পক্ষে কাজ করেন। জনগণকে নেতৃত্ব দিয়ে থাকেন এবং জনগণের জন্য আইন প্রণয়ন করেন। এটাই বাস্তবতা।

এ জন্য একটি নির্দিষ্ট সময় পর পর দেশের জাতীয় নির্বাচন হয়। এই নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণ তার ভোটাধিকার প্রদান করে থাকে।  গণতন্ত্রে নাগরিকরা যেহেতু চূড়ান্ত কর্তৃত্ব বহন করে, সেজন্য জনগণই দেশের মালিক। তারাই দেশের ক্ষমতা নির্ধারণ করে থাকে। তাই তারা নির্বাচনের মাধ্যমে তাদের মতামত প্রকাশ করতে পারে। এমনকি যদি তারা কোনো সরকারের কাজ পছন্দ না করে, তাহলে তারা অন্য কোনো দলকে পছন্দও করতে পারে। এটাই নিয়ম। নির্বাচিত নেতা ও সংস্থার কার্যকরী শাসন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, তাদের কার্যক্রমে একটি দেশ উন্নয়নের ভালো অবস্থানে যেতে পারে। দেশের সার্বিক উন্নয়ন নির্ভর করে একজন সঠিক নেতার গুণাবলী এবং কার্যকরী সিদ্ধান্তের ওপর। তাই নেতা নির্বাচন অনেক বেশি তাৎপর্যপূর্ণ।

যা আমরা গত এক যুগ ধরে দেখতে পেয়েছি। কারণ, সঠিক নেতা নির্বাচিত হওয়ায় দেশের ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। দেশের জনগণ তা বুঝতে পেরেছে। সেজন্য বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর মানুষের আস্থা অনেক বেশি। তিনি দেশকে একটি শক্তিশালী অর্থনৈতিক অবস্থায় নিয়ে যেতে পেরেছেন। যা দেশের জন্য খুবই জরুরি। আগামী বছর অনুষ্ঠিত হবে জাতীয় নির্বাচন। সেই নির্বাচন নিয়ে নানা ধরনের আলোচনা চলমান। একটি দল নির্বাচন নিয়ে সংবিধান পরিবর্তনের কথা বলে চলছে। কিন্তু তাদের এই দাবি কতটুকু যৌক্তিক? আজকে যদি তাদের কথা সরকার মেনে নেয়, তাহলে সংবিধান পরিবর্তন করতে হবে। আবার যদি পাঁচ বছর পর আরেকটি সংকট তৈরি হয় তাহলে কি আবার সংবিধান পরিবর্তন করতে হবে। এটা তো হতে পারে না। এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়। নির্বাচন নিয়ে ইতোমধ্যে নানা ধরনের সভা-সমাবেশ করতে দেখেছি। সেখানে রয়েছে নানা ধরনের হুমকি। যা সাধারণ মানুষকে হতাশ করছে। কারণ, অতীতে নির্বাচনের নামে সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে একটি দল তাদের নিজস্ব ফায়দা আদায় করার অপচেষ্টা করেছিল।

কিন্তু তারা ব্যর্থ হয়েছে। অতীতে আন্দোলনের নামে আগুন সন্ত্রাস দেখতে হয়েছে মানুষের। এখন মানুষ তার পুনরাবৃত্তি দেখতে চায় না। রাজনৈতিক কর্মসূচিতে রাস্তায় মানুষের মারা যাওয়ার ঘটনা অনেক পরিবারকে নিঃস্ব করে ফেলছে। আন্দোলনের নামে রাজনৈতিক দলের কর্মসূচির নামে ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালে মানুষ পুড়িয়ে হত্যার রাজনীতি চিরতরে বন্ধ হোক, এটাই সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা। এরকম কর্মসূচি দিয়ে সাধারণ মানুষকে নির্যাতন, হয়রানি বা ভোগান্তিতে না ফেলার জন্য অনুরোধ জানাই। আগুন সন্ত্রাস দিয়ে তরুণ প্রজন্মের ভবিষ্যৎকে নষ্ট করা যাবে না। সে বিষয়ে জনগণকেও সজাগ থাকতে হবে। আগুন সন্ত্রাস করা হলে গরিব ও মেহনতি মানুষের দুমুঠো ভাত খাওয়ার রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। তাই রাজনৈতিক কর্মসূচি দিয়ে সাধারণ মানুষের জীবন-জীবিকা বন্ধ করা যাবে না। এসব কর্মসূচি মানুষ আর পছন্দ করে না। মানুষ চায় শুধু শান্তি এবং সঠিক সময়ে সঠিকভাবে নির্বাচন। আগুন সন্ত্রাসের ক্রমসূচির প্রায়শ্চিত্ত করছে অনেক দল। তাই কর্মসূচি দিলে ভেবে-চিন্তে দেবেন, যাতে মানুষের কোনো অমঙ্গল না হয়। সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ উচ্ছেদে মসজিদের ইমাম, শিক্ষক, অভিভাবক, মন্দিরের পুরোহিত, জনপ্রতিনিধিসহ সব শ্রেণি- পেশার মানুষকে সম্পৃক্ত করে গণসচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। যাতে ভবিষ্যতে কেউ আর আগুন সন্ত্রাস না করতে পারে।  আজ দেশের মানুষ শান্তিতে বসবাস করছে। বিশ্বের অনেক দেশ এখন অবাক হয়ে যায়! কারণ, এতো ঘনবসতিপূর্ণ দেশ সরকার কিভাবে সফলভাবে পরিচালনা করছে। ভারতের চেয়ে অনেক অর্থনৈতিক সূচকে আমরা এগিয়ে রয়েছি।

এটা গৌরবের বিষয়। তাই আন্দোলনের নামে কোনো কর্মসূচি দিয়ে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত না করাই শ্রেয়। এতে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বাড়ে।
নির্বাচন হবে সংবিধান অনুযায়ী। সেটাই তো স্বাভাবিক। ভারত, যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক উন্নত দেশে সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সেই নির্বাচন নিয়ে কোনো ধরনের বিতর্ক থাকে না। সকল রাজনৈতিক দল সহজভাবে মেনে নেয়। কিন্তু আমাদের দেশে দেখি তার বিপরীত। যে দল নির্বাচনে জয়ী হয়, তারা বলে নির্বাচন সঠিকভাবে হয়েছে। আর অন্য দল নির্বাচনে কারচুপি হয়েছে বলে অভিযোগ করে। এসব সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে আসতে হবে। কিভাবে নির্বাচন সঠিক এবং গ্রহণযোগ্য করা যায় সে সুযোগ সংবিধানে রয়েছে। তাই সংবিধান সংশোধনের প্রয়োজন নেই। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী করা হোক, এটাই হলো সবচেয়ে ভালো পন্থা।
সাংবিধানিকভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আর নির্বাচন করার সুযোগ নেই। আর তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা আছে একমাত্র পাকিস্তানে। তাই সেই দেশের কোনো মডেল বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশে কার্যকর হতে পারে না। কিভাবে সংবিধান অনুযায়ী সঠিকভাবে নির্বাচন করা যায়, সেই বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্যে আসা দরকার। বিশ্বের বেশিরভাগ দেশের সংবিধানেই কিছু নীতিমালার উল্লেখ রয়েছে। এর ভিত্তিতেই গঠিত হয় নির্বাচন কমিশন। সেই নির্বাচন কমিশন একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ব্যবস্থা করে। আমাদের বিশ্বাস বর্তমান নির্বাচন কমিশন একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য যা যা করা দরকার, সেই বিষয়ে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করবে। একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশনকে সরকার থেকে অনেক বিষয়ে সহযোগিতা করতে হবে। সরকারকে সেসব বিষয়ে আগ্রহী বা উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
একটি সঠিক ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সরকার এবং নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা হওয়া উচিত ‘সম্পূরক এবং পরিপূরক’। নির্বাচন কমিশন কিন্তু আম্পায়ারের ভূমিকা রাখে। তাই সঠিক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনে সরকারের ভূমিকা অনেক বেশি। দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়- এরকম অভিযোগ অনেকেই দিয়ে যাচ্ছে। তাহলে ভারতে কিভাবে দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হয়? তাই সংবিধান অপরিবর্তিত রেখে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। সরকারও সেই লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে।
লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ

×